১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ০৫:৪৭:১৩ অপরাহ্ন


স্মৃতির পাতায় বাগাতিপাড়ার কেরামত মাস্টার
মো. আবদুল্লাহ-আল-অনিক, বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধি :
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-১০-২০২২
স্মৃতির পাতায় বাগাতিপাড়ার কেরামত মাস্টার স্মৃতির পাতায় বাগাতিপাড়ার কেরামত মাস্টার


মানুষ গড়ার কারিগর, আলোকিত মানুষ গড়ার লক্ষ্যে ও সুষ্ঠ সমাজ ব্যবস্থার জন্য তিনি আজীবন কাজ করেছেন। মানুষের জীবন পরিচালনায় শিক্ষার গুরুত্বকে উপলব্ধি করে তিনি বেছে নিয়েছিলেন মহান শিক্ষকতা পেশা এবং শেষ জীবন পর্যন্ত তিনি জ্ঞান বিতরনের মত মহৎ দ্বায়িত্ব পালনে ছিলেন ব্রত।

নাম তার কেরামত আলী হলেও উপজেলার সবার নিকট কেরামত মাস্টার নামেই পরিচিত। নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া উপজেলার ফাগুয়াড়দিয়াড় ইউনিয়নের সাইলকোনা এলাকায় ১৭জানুয়ারি, ১৯৫৯ সালে এক বুনিয়াদি পরিবারে জন্ম গহণ করেন তিনি। তাঁর পিতা ছিলেন লেদু সরদার এবং মাতা মজিরন বিবি। তিনি এক বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যেছিলেন ছোট।

১৯৬৫ সালে সাইলকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার মধ্যদিয়ে তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু হয়।এরপর জিগরী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৭৫ সালে এসএসসি পাশ করেন প্রথম বিভাগে। আব্দুলপুর সরকারি কলেজ থেকে ১৯৭৭ সালে এইচএসসি পাশ করেন এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত নাটোর নবাব সিরাজউদ্দৌলা কলেজ হইতে ১৯৮১ সালে বিএ এবং ১৯৯১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাসে এমএ ডিগ্রী অর্জন করেন।

কর্মজীবনে তিনি প্রথম ইসলামপুর দাখিল মাদ্রাসায় কিছুদিন চাকুরী করেন। এরইমধ্যে ২২শে ডিসেম্বর ১৯৮২ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ম্যাজিস্টেট) এর লিখিত পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মৌখিক পরিক্ষায় অংশগ্রহন করেন। ১৯৮৪-৮৫ অর্থ বছরে তিনি অগ্রণী ব্যাংকে চাকুরীতে যোগদান করেন। কিন্ত ব্যাংকের চাকুরী তাঁর ভাল লাগেনি। পরে নিজ এলাকার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। পরবর্তীতে উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকুরি করেছেন। একাধিক বার উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন। শেষে স্বরূপপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি তাঁর চাকুরী জীবন শেষ হয়।

সামাজিক কর্মকান্ডে ছিল তার বিরাট ভূমিকা। নিজ এলাকায় উচ্চ বিদ্যালয় না থাকায় স্থানীয়দের সাথে নিয়ে একটি নতুন উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেনএবং ওই বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন । সকলের সহযোগিতায় বিদ্যালয়টি দ্রুত সফলতা লাভ করে ও প্রতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করে থাকে। পরবর্তীতে নিজ এলাকার ছেলে-মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা সহজ করতে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন । পরবর্তীতে স্থানীয়দের সহায়তায় ১৯৯৫ সালে সাইলকোনা মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। যেটি বর্তমানে সাইলকোনা ডিগ্রী কলেজ নামে প্রতিষ্ঠিত। যেখানে তিনি কিছুদিন প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষের দায়িত্বও পালন করেন। এছাড়া তিনি নিজ এলাকায় ধর্মীয় ও শিক্ষামূলক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় শিক্ষাকে প্রতিষ্ঠিত করতে সুপরামর্শ প্রদান করেছেন। তিনি এসকল কিছুর পাশাপাশি মানুষের সেবার জন্য হোমিও প্যাথিক চিকিৎসাও করতেন। তিনি কৃষি কাজের ক্ষেত্রে কৃষকদের সবসময় পরামর্শ প্রদান করেছেন।

সকল কিছুর পরেও তিনি স্ত্রীর নিকট ছিলেন একজন আদর্শ স্বামী। আর সন্তানদের কাছে ছিলেন একজন সফল ও আদর্শ পিতা। তিন এক ছেলে ও কন্যা সন্তানের পিতা ছিলেন ।

অমায়িক-সদালাপী, কর্তব্য পারায়ণ, নিরহঙ্কার, সুজন ও সজ্জন কেরামত মাস্টার ২০২১ সালের ৮ অক্টোবর মুত্যুবরণ করেন।

মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতিকে ধরে রাখতে বর্তমানে Keramat Master-IT Support  নামে একটি অনলাইন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়েছে।

ফাগুয়াড়দিয়াড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম লেলিন জানায়, তিনি তাঁর শিক্ষক ছিলেন। সাইলকোনাসহ আশপাশের এলাকায় স্কুল, কলেজ প্রতিষ্ঠাতে তাঁর অগ্রনী ভূমিকা রয়েছে। এছাড়া শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য তিনি আজীবন কাজ করে গিয়েছেন।

উপজেলার পেড়াবাড়িয়া মডেল সরাকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শামিম শাহরিয়ার কেরামত মাস্টারের নাম শুনতেই চোখ দিয়ে পানি ফেলতে থাকেন আর বলেন,স্যারঅনেক ভালো মনের একজন মানুষ ছিলেন। তার দেখা হাসি মুখে ছাড়া কখনো তিনি কথা বলেননি কারো সাথে,এমনকি তিনি কারো সাথে কখনো খারাপ আচরণ করেছেন বলে তার জানা নেই।আল্লাহ তাঁকে জান্নাতের সুউচ্চ মাকাম দান করেন সে দোয়া করেন এই শিক্ষক।

সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব সিদ্দিকুর রহমান বলেন, কেরামত মাস্টার তাঁর প্রিয় বন্ধুদের মধ্যে একজন ছিলেন। তিনি একজন ভালো শিক্ষক ও শিক্ষানুরাগী মানুষ ছিলেন। এলাকার মানুষদের শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে তিনি সবসময় কাজ করে গিয়েছেন।