২৬ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০১:৩৩:১৭ পূর্বাহ্ন


আট মাসে ২৩০১ আট মাসে ২৩০১ শিশু বিয়ের পিঁড়িতে
অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-১০-২০২২
আট মাসে ২৩০১ আট মাসে ২৩০১ শিশু বিয়ের পিঁড়িতে ফাইল ফটো


করোনার দুই বছরে দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের অন্তত ১৫ শতাংশ শিশু শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝরে পড়ে। এই শিশুদের অধিকাংশই দরিদ্র ও প্রান্তিক পর্যায়ের। পরিবারের আয় কমে যাওয়া ও মূল্যস্ফীতির কারণে বাল্যবিয়ে দেওয়া হয়েছে কয়েক হাজার শিশুকে।

সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার জরিপের তথ্য বিশ্নেষণ করে দেখা গেছে, বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া ও বাল্যবিয়ের উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে দেশের কন্যাশিশুরা। করোনার অভিঘাত তাদের শৈশব ও শিক্ষাজীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আজ সোমবার দেশজুড়ে 'বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ-২০২২' পালিত হতে যাচ্ছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য 'গড়বে শিশু সোনার দেশ, ছড়িয়ে দিয়ে আলোর রেশ'।

প্রতিবছর অক্টোবরের প্রথম সোমবার বিশ্ব শিশু দিবস পালন করা হয়। শিশুর অধিকার, সুরক্ষা ও উন্নয়ন বিকাশে সংশ্নিষ্ট সবাইকে আরও উদ্যোগী ও সচেতন করার লক্ষ্যে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত পালন করা হবে শিশু অধিকার সপ্তাহ।

জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের 'কন্যাশিশু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন-২০২২'-এর তথ্য বলছে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত দেশের ২৮ জেলায় ২ হাজার ৩০১ কন্যাশিশুর বাল্যবিয়ে হয়েছে। সে হিসাবে প্রতি মাসে বাল্যবিয়ের পিঁড়িতে বসেছে ২৮৮ কন্যাশিশু। একই সময়ে প্রতিরোধ করা হয়েছে ৫৮৯টি বাল্যবিয়ে। প্রতিবেদনটি গত শুক্রবার আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করা হয়। এই ফোরাম এ বছরের প্রথম আট মাসে দেশের ২৪ জাতীয়, স্থানীয় ও অনলাইন সংবাদমাধ্যম থেকে কন্যাশিশুদের প্রতি নির্যাতনের তথ্য সংগ্রহ করে। এ ছাড়া বাল্যবিয়ে সংক্রান্ত তথ্য তারা মাঠপর্যায় থেকে নেয়।

জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সাধারণ সম্পাদক নাছিমা আক্তার বলেন, দেশের শিশুরা ভালো নেই। বছরের প্রথম আট মাসে ৭৬ কন্যাশিশু যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়। এর অধিকাংশই হয়েছে রাস্তা, নিজ বাসা ও স্বজনের মাধ্যমে। এ সময় তিনজনের ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপ, ১৩৬ জনকে অপহরণ ও পাচার, ১৮৬ জনকে হত্যা, ১৮১ জন আত্মহত্যা এবং ১৫ জন পর্নোগ্রাফির শিকার হয়। এ ছাড়া যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয় ১৩ জন এবং হত্যা করা হয়েছে পাঁচজনকে। জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৫৭৪ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, করোনাকালে বাংলাদেশে গড়ে প্রতিদিন ৬৫টি করে বাল্যবিয়ে হয়েছে। সাত মাসে ২১ জেলার ৮৪ উপজেলায় মোট ১৩ হাজার ৮৮৬টি বাল্যবিয়ের তথ্য পেয়েছে তারা। ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশের মোট ২১ জেলায় জরিপ চালিয়েছে সংস্থাটি। প্রতিষ্ঠানটির কো-অর্ডিনেটর অর্পিতা দাস জানান, এই বাল্যবিয়ের কারণ হিসেবে তাঁরা যা জেনেছেন, এর মধ্যে রয়েছে স্কুল বন্ধ থাকায় মেয়েদের নিরাপত্তা সংকট, অভিভাবকদের কাজ হারানো এবং ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়া। এ ছাড়া বাল্যবিয়ের যেহেতু একটি ট্র্যাডিশন আছে, তাই করোনাকালকে বিয়ে দেওয়ার সুযোগ হিসেবে নিয়েছেন অনেকে। তিনি জানান, যারা এই বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে, তারা সবাই স্কুলের ছাত্রী। তাঁর মতে, বিয়ে হয়ে যাওয়া এসব ছাত্রী সবাই শিক্ষা থেকে ছিটকে পড়েছে। আমরা এখন যে খবর পাচ্ছি, তাতে ড্রপআউটের তথ্য পাচ্ছি।

করোনাকালে ড্রপআউট শিশু শিক্ষার্থীদের তালিকা তৈরির কাজ করছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি। অনলাইন ক্লাসে অনুপস্থিতি ধরে একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে ওই তালিকা করা হয়।

অন্যদিকে, সরকারি প্রতিষ্ঠান মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) বলছে, গত এক বছরে মাধ্যমিকের ৪৭ হাজার ছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়েছে। গেল ডিসেম্বরে ২০২১ সালের বার্ষিক পরীক্ষায় পৌনে পাঁচ লাখের বেশি শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। এদের মধ্যে শিশুশ্রমে যুক্ত ৭৮ হাজার। দেশের ২০ হাজার ২৯৪ বিদ্যালয়ের মধ্যে ১১ হাজার ৬৭৯টির তথ্য পেয়েছে মাউশি। প্রাপ্ত তথ্যমতে, বাল্যবিয়ে ও শিশুশ্রম সবচেয়ে বেশি রাজশাহী অঞ্চলে।

মাউশি বলছে, গত বছর বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল প্রায় ৬১ লাখ ৬৮ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। অনুপস্থিত ছিল ৪ লাখ ৮১ হাজার ৫৫ জন। এর মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ে ও ১৬ দশমিক ১৫ শতাংশ শিশুশ্রমে যুক্ত হওয়ায় বার্ষিক পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল। অনুপস্থিত শিশু শিক্ষার্থীদের বড় অংশেরই ঝরে যাওয়ার শঙ্কা আছে।

মাউশির পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন শাখার পরিচালক অধ্যাপক মো. আমির হোসেন বলেন, মৌসুমি কাজে অনেক শিক্ষার্থী মা-বাবাকে সহায়তা করে বা এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় গিয়ে টাকার বিনিময়ে শ্রম দেয়।

বেসরকারি সংস্থা গণসাক্ষরতা অভিযানের প্রকাশ করা 'এডুকেশন ওয়াচ-২০২১' প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা শেষে বিদ্যালয়ের খোলার পর শহরের বস্তি ছাড়া গ্রামীণ, শহর এবং শহরতলি এলাকার ৯৭ থেকে ৯৯ শতাংশ শিক্ষার্থী স্কুলে ফিরে এসেছে। বাকিরা আর ফেরেনি। শহরের বস্তি এলাকায় বিদ্যালয়ে ফেরত আসার হার ৯০ শতাংশ। অভিভাবকরা জরিপের সময় বলেছিলেন, তাঁদের আশপাশে স্কুলে ফিরে যায়নি এমন শিশুর হার ৩ থেকে ৫ শতাংশ; শহরের বস্তিতে যা প্রায় ১৪ শতাংশ।