রাত্রীকালীন বর্জব্যবস্থাপনায় গ্রীণ সিটি ক্লিন সিটির তকমা, রাজশাহীর


অনলাইন ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 19-09-2022

রাত্রীকালীন বর্জব্যবস্থাপনায় গ্রীণ সিটি ক্লিন সিটির তকমা, রাজশাহীর

পরিচ্ছন্ন নগরীর হিসেবে সারা দেশে বেশ পরিচিত রাজশাহী। রাজশাহীকে বলা হয়, গ্রীণ সিটি ক্লিন সিটি। এই তকমাটি মূলত এসেছে রাত্রীকালীন বর্জ ব্যবস্থাপনার জন্য। নগরীর বাড়ি বাড়ি থেকে বিকেল থেকে বর্জ সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করা হয়। এর পর রাতভর চলে সেই কার্যক্রম। রাত ৯টা থেকে শুরু হয় প্রধান প্রধান সড়ক পরিস্কার কাজ। সেই ময়লাও অপসারিত হয় রাতে। আর সকালে নগরবাসী দেখেন পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ঝকঝকে নগরী।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেল চারটা। নগরীর উপশহর এলাকায় মুখে বাঁেিশ হুইশে দিয়ে দিয়ে ওই এলাকার বিভিন্ন বাড়ির গেটের সামনে ভ্যান নিয়ে গিয়ে দাঁড়াচ্ছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নূর ইসলাম কালু। আর বাড়ির সামনে রাখা ময়লার বালতি বা ছোট ছোট ডাস্টবিন থেকে ময়লা সংগ্রহ করে ভ্যানে রাখছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী কালু। কোনো কোনো বাড়ির লোকজন ময়লার বালতি হাতে করে নিয়ে এসে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন। এর পর সেই বালতির ময়লা ভ্যান রেখে দিচ্ছেন কালু। এভাবে বাড়ি বাড়ি থেকে সংগ্রহ করা ময়লাগুলো কালু নিয়ে চলে যাচ্ছেন ময়লা জমা করার নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানে ময়লা রেখে আবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে একই কাজে জড়িয়ে পড়ছেন কালু।

কালু জানান, বিকাল তিনটা থেকে ময়লা সংগ্রহ শুরু করি। কোনো কোনো দিন সন্ধ্যার মধ্যেই কাজ শ্যাষ হয়। সারাদিনে বাড়িতে জমা হওয়া ময়লাগুলো এভাবেই আমরা সংগ্রহ করি। আবার কোনো কোনো দিন রাত আটটার মধ্যে শেষ হয়। এ কারণে রাস্তা-ঘাটের পাশে বাড়ির ময়লা ফেলেন না কেউ।

এদিকে একই দিন রাতে নগরীর ঘোড়া চত্তরে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ি বাড়ি থেকে সংগ্রহ করে জমিয়ে রাখাা বর্জগুলো সিটি করপোরেশনের ময়লার ট্রলিতে ভরতে ব্যস্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। সেই ময়লাগুলো ট্রতিতে করে নিয়ে চলে যাওয়া হচ্ছে নগরীর সিটি বাইপাশ এলাকার ভাগাড়ে। আবার ট্রলি ফিরে যাচ্ছে ঘোড়া চত্তরে ময়লা নিতে। এভাবে রাতভর চলছে সেই কাজ।
ট্রলি চালক নজরুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন ১০-১২ ট্রাক ময়লা জমা হয় ঘোড়া চত্তরের ডাস্টবিনে। ভ্যানে করে বাড়ি বাড়ি থেকে সংগ্রহ করে ময়লাগুলো এখানে ফেলে যান পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। আমরা রাতে সেই ময়লাগুলো ভাগাড়ে ফেলে দিয়ে আসি। ফলে সকাল হতে হতেই রাস্তার পাশের এই ডাস্টবিনটা ফাঁকা হয়ে যায়।’

নগরীর রেলগেট এলাকায় ব্যস্ততম রাস্তা ঝাড়ু দিয়ে পরিস্কার করছিলেন হরিদাস চন্দ্র। রাত তখন ১১টা। পরিচ্ছন্নতাকর্মী হরিদাস বলেন, ‘প্রত্যেকদিন রাত ৯টার পর কাজ শুরু করি। শেষ করতে করতে বারোটা সাড়ে বারোটা বাজে যায়। রাস্তায় পড়ে থাকা ধুলা আ ছোট ছোট আবর্জনাগুলো ঝাড়ু দিয়ে জড়ো করে রাখি। সেগুলো আবার ভ্যানে করে তুলে নিয়ে যায় অন্য পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। এর পর সকাল হওয়ার আগেই রাস্তা পরিস্কার দেখা যায়।’

রাসিক সূত্র, একটি পরিচ্ছন্ন মহানগরী গড়ে তোলার জন্য প্রথমবার নির্বাচিত হওয়ার পরই মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ২০০৯ সালের ১ জুলাই থেকে রাত্রীকালীন বর্জ্য আবর্জনা অপসারণ কার্যক্রম চালু করেছিলেন। এর পর ২০১৮ সালের ৫ অক্টোবর ২য় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর পরিস্কার পরিচ্ছন্নতায় বিশেষ গুরুত্ব দেন দেয়া হয়। এর ফলে নগরবাসী যেমন সুফল পাচ্ছেন, তেমনি বাইরে থেকে আসা মানুষদের কাছে রাজশাহী একটি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন নগরীতে পরিণত হয়েছে।

অপরদিকে রাসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মো: ডলার জানান, ‘পরিচ্ছন্ন মহানগরী গড়তে মসজিদের ইমাম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, চেম্বার অব কর্মাস, বেসরকারি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক মালিকসহ মহানগরীর বিভিন্ন পেশাজীবী ও সামাজিক সংগঠনের সাথে মতবিনিময় করা হয়। মসজিদ, মন্দির ও গির্জাসহ সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এবং সরকারি দপ্তর ও সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উদ্বুদ্ধকরণ ব্যানার প্রদান করা হয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে জনসচেতনার লক্ষ্যে পত্রিকা, ক্যাবল লাইনে বিজ্ঞাপন, মসজিদে প্রাক খুতবা, মাইকিং এবং লিফলেট বিতরণ করা হয়।

তিনি আরও জানান, নাগরিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমিয়ে আনতে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং সকল ক্লিনিকের আউট হাউজ মেডিকেল বর্জ্য পরিবেশসম্মত ও সুষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনায় রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন ও প্রিজম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়। সে মোতাবেক প্ল্যান্টের ভৌত অবকাঠামো ইতিমধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী প্রিজম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের নিজস্ব কর্মচারীরা মেডিক্যাল ও ক্লিনিক থেকে কার্ভাড ভ্যান দ্বারা বর্জ্য সংগ্রহ করে প্ল্যান্টে নিয়ে গিয়ে সেখানে পরিশোধন ও অপসারণ করছে।

প্রধান পরিচ্ছন্নতাকর্মী বলেন, ‘সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার স্বার্থে মহানগরীতে ১০টি আধুনিক সেকেন্ডারী ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) নির্মাণ করে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। আগামীতে প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে এসটিএস নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। বাড়ি বাড়ি আবর্জনা সংগ্রহের কাজ অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ। এ কাজে নিয়োজিত কর্মীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিহ্রাসের জন্য গামবুট, হান্ডগ্লোভস, নোজমাক্স, রেইনকোর্ট ইত্যাদি প্রদান করা হয়েছে। সেইসাথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও সাবান দেয়া হয়েছে।’
রাসিক সূত্র মতে, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগের ১২৬৫জন কর্মী পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে নিযুক্ত আছেন। এরমধ্যে ওয়ার্ড সুপারভাইজার ৩৪জন এবং কেন্দ্রীয় সুপারভাইজার ৭০জন। তারা বিকেল থেকে রাতভর পরিচ্ছন্নতাকাজে নিয়োজিত। এর ফলে ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নগরবাসী পাচ্ছেন এ পরিচ্ছন্নতা নগরী।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]