আমার ভুল হয়ে গেছে। আমাকে মাফ করে দিয়েন। আপনারা আমাকে সাহায্য করেন। এভাবেই বলছিল ট্রাক হেলপার অপহরণকারী কথিত সাংবাদিক আতিকুল ইসলাম। ট্রাক হেলপার অপহরণের মূল হোতা আতিককে আটকের জন্য খুঁজছে পুলিশ। রাজশাহীর পুঠিয়ায় ট্রাকের হেলপারকে অপহরণ করে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণের ঘটনার মূল হোতা আতিকুল ইসলাম আতিকসহ পলাতক আসামীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবী জানিয়েছে এলাকাবাসী।
বিভিন্ন পরিচয়ে আতিক:
অপহরণ ও মুক্তিপণের হোতা আতিক নিজেকে কখনো পুঠিয়া ইসলামীয়া মহিলা ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক, কখনো সাংবাদিক পরিচয় দিলেও সে একজন কলেজ পিয়ন।
তার বিরুদ্ধে পুলিশের এসআই, র্যাবের সোর্স এবং ডিবি পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশের ইন্সপেক্টর পরিচয়ে প্রতারনার করে অর্থ হাতিয়ে নেবার অভিযোগ রয়েছে। সুঠাম দেহের অধিকারী আর চুলের কাটিং দেখে যে কেউ ভাববে সে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। এই সুযোগ হাতছাড়া করেনি আতিক। ব্যক্তিগত জীবনে অবিবাহিত আতিক পিয়ন হলেও ঘোরাঘুরি করে এ্যাপাচি মোটরসাইকেল নিয়ে।
যত অভিযোগ:
ট্রাক হেলপার অপহরণ ও দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা মামলায় আসামি হওয়ার পর বিভিন্ন অভিযোগ পাচ্ছে থানা পুলিশ। জিউপাড়া ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের কামাল উদ্দিনের ছেলে আতিকুল ইসলাম তার এলাকায় বেটারী আতিক নামে পরিচিত। পুলিশের সোর্স পরিচয়ে কাজ করার সুবাদে এলাকায় নানা ধরণের ছোট-বড় অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়েন এই বেটারী আতিক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জিউপাড়ার একাধিক ব্যক্তি বলেন, তার কাছে অনেক মানুষ জিম্মি ছিলো। পুঠিয়া উপজেলার বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে কখনো সাংবাদিক আবার কখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সময় অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। পুকুর খনেনও চাঁদা দিতে হয় তাকে। বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারেও নিয়মিত চাঁদাবাজি করত সে।
তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আতিক সাংবাদিক পরিচয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে যোগাযোগ থাকায় এক পর্যায়ে তাদের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে তার। এভাবেই বেপরোয়া হয়ে উঠে আতিক।
পিয়ন থেকে যেভাবে অপহরণকারী:
গত ২৩ জানুয়ারী সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ভুক্তভোগি ইসমাইল হোসেনকে তার নিজ বাড়ির সামনে থেকে ৩টি মোটর সাইকেল যোগে ৫ ব্যক্তি অপহরণ করে। এরপর অপহরণে অভিযুক্তরা পরের দিন ২৪ জানুয়ারী বিকেলে মুঠোফোনের মাধ্যমে ইসমাইলের বাবার নিকট দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। অপহরণের শিকার ইসমাইল হোসেন (২১) নাটোর বাগাতিপাড়া উপজেলার চন্দ্রখৈইর গ্রামের মন্জুর রহমানের ছেলে এবং পেশায় ট্রাক হেলপার। এ ঘটনায় ইসমাইলের পিতা মজনুর রহমান বাদী হয়ে আতিকসহ ৪ জনের নামে পুঠিয়া থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (এসআই) শরিফুল ইসলাম বলেন, মামলাটি তদন্তাধীন অবস্থায় রয়েছে, আসামিদের আটক করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এ বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ তার অপকর্মের কথা অকপটে স্বীকার করলেও আজ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। পুঠিয়া ইসলামীয়া মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন বলেন, কলেজের ল্যাব কর্মচারীর এমন কর্মকান্ডের কথা শুনেছি। তার এমন কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অপরাধে আমরা দ্রুত আতিকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আর এ বিষয়ে কলেজে এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসেছিলেন আমাদের কাছে তথ্য নিয়েছেন।
অভিযুক্ত আতিকের বক্তব্য:
আতিক জানায়, পুঠিয়া থানার একজন এসআইয়ের সাথে তার ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব রয়েছে। সেই সূত্রে আমার বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেছে। আপনারা আমাকে মাফ করেন। আমাকে সাহায্য করেন। আমি কোনো অনিয়মের সাথে জড়িত নই।
এ ব্যাপারে পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দেওয়া কথিত সাংবাদিক আতিকুলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। থানার কোনো এসআইয়ের সাথে আতিকের কোনো দ্বন্দ্ব নেই। তাকে ফাঁসানোর প্রশ্ন অবান্তর। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। আরো অভিযোগ পাচ্ছি। অচিরেই তাকে আটক করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রাজশাহীর সময় /এএইচ