ইউক্রেন ছেড়ে পালাচ্ছেন রুশ সেনা, দাবি গোয়েন্দাদের


আন্তর্জাতিক ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 14-09-2022

ইউক্রেন ছেড়ে পালাচ্ছেন রুশ সেনা, দাবি গোয়েন্দাদের

রাশিয়ার বিরুদ্ধে মাস সাতেকের যুদ্ধের পর কি ইউক্রেনের পাল্লা ভারী হতে শুরু হয়েছে? ডেভিড এবং গোলিয়াথের অসম যুদ্ধে কি দুর্বল প্রতিপক্ষই জমি কেড়ে নিচ্ছে? উত্তর-পূর্ব এবং উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ শহর ইউক্রেন দখল করার পর এই প্রশ্নই উঠছে।

ইউক্রেনের গোয়েন্দাদের দাবি, তাঁদের দেশের মাটি থেকে হয় পালাচ্ছেন না হয় দলে দলে আত্মসমর্পণ করছেন রুশ সেনারা। এমনকি, ইউক্রেনীয়দের পাল্লা ভারী দেখে যুদ্ধ করতে অস্বীকার করছেন রুশ সেনারা।

ইউক্রেন সেনার প্রত্যাঘাতের জেরে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের দখল ইতিমধ্যেই চলে এসেছে জেলেনস্কির বাহিনীর হাতে। খারকিভ প্রদেশে ইজিয়ুম ছাড়া রুশ সীমান্ত ঘেঁষা ভেলেইকি বারলুকের দখল নিয়েছেন ইউক্রেনীয় সেনারা। কুপিয়ানস্ক শহরেও রুশদের হঠিয়ে কব্জা করেছেন তাঁরা।

রুশ সেনাদের হাত থেকে জমি পুনর্দখলের পর নেটমাধ্যমে বহু ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। তাতে রুশদের জমি হারানোর কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে। যদিও ভিডিয়োগুলির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।

ভাইরাল ভিডিয়োগুলিতে দেখা গিয়েছে, খারকিভের রাস্তায় উপুড় হয়ে শুয়ে অস্ত্রহীন রুশ সেনা। অনেকের হাত পিছমোড়া করে বাঁধা। তাঁদের সামনে অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে ইউক্রেনীয় সেনা। দলে দলে রুশ সেনাদের আত্মসমর্পণের ভিডিয়োয় ভরে গিয়েছে নেটমাধ্যম।

মঙ্গলবার রাতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, পরিস্থিতি বুঝতে পেরে ইউক্রেনের মাটিতে যুদ্ধ করতে অস্বীকার করছেন রুশ সেনারা। উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন অঞ্চল পুনর্দখলের পর তাঁরা হতোদ্যম হয়ে পড়েছে, এই দাবিও করা হয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলেছেন ডনবাস অঞ্চলের লুহানস্কের গভর্নর সারহিয়ায় হাইদাই। তাঁর দাবি, ‘‘নিহতদের সংখ্যা (আনুমানিক ভাবে অন্তত ৪৩,০০০) জানতে পেরে ইউক্রেনের মাটিতে যুদ্ধ করতে অস্বীকার করছেন রাশিয়ার সেনারা।’’ প্রসঙ্গত, রুশদের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত এই ডনবাস (উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনের ডনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চল একত্রে ডনবাস বলে ডাকা হয়)।

লুহানস্কের গভর্নরের আরও দাবি, ‘‘আহত দখলদারদের (রুশ সেনাদের) প্রাপ্ত অর্থও আটকে রেখেছে রাশিয়া। সেই সঙ্গে ইউক্রেনের মাটিতে নতুন ইউনিট পাঠানো স্থগিত রেখেছেন রাশিয়ার সেনাকর্তারা।’’

ইউক্রেনের এই দাবির যে সত্যতা রয়েছে তা জানিয়েছে আমেরিকার ইনস্টিটিউট অব ওয়ারও। প্রতিরক্ষা এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ে গবেষণা ও বিশ্লেষণমূলক কাজ করে এই প্রতিষ্ঠান। আমেরিকার ‘থিঙ্কট্যাঙ্ক’ বলে পরিচিত এই প্রতিষ্ঠানের দাবি, উত্তর-পূর্বের খারকিভ অঞ্চলে কিভের শক্তি বৃদ্ধি পাওয়ায় হয়তো তা রুশ সেনাদের মনোবলে আঘাত হেনেছে। হয়তো রুশ সেনাদের যুদ্ধ করার ইচ্ছা এবং ক্ষমতায় তা প্রভাব ফেলেছে। ইউক্রেনের মাটিতে নতুন করে রুশ সেনাদের ইউনিট পাঠানোর ক্ষেত্রেও সিদ্ধান্তও এতে প্রভাবিত হয়েছে।

আমেরিকার সংবাদমাধ্যমে সে দেশের গোয়েন্দাদের দাবি, রাশিয়ার সেনাদের আরও লজ্জাজনক হারের সম্মুখীন হওয়া বাকি। ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে কি রুশ সেনাদের দুর্বলতা প্রকাশ্যে এনে দিয়েছে? পশ্চিমী দেশগুলির এক যুদ্ধ বিশারদের কথায়, ‘‘রাশিয়া বেকায়দায় পড়েছে। ওদের দুর্বলতা সামনে চলে এসেছে। রাশিয়ার কাছে পর্যাপ্ত সেনাশক্তি বা অস্ত্রশস্ত্রের ভান্ডার নেই, তাও বোঝা যাচ্ছে।’’

তবে এখনই রাশিয়াকে ‘শক্তিহীন’ বলতে রাজি নন পশ্চিমী দেশের আর এক যুদ্ধ বিশারদ। তাঁর দাবি, ‘‘রাশিয়াকে এখনই দুর্বল বলার সময় আসেনি।’’ এমনকি, খারকিভে ইউক্রেনীয়দের পুনর্দখল সত্ত্বেও তাকে ‘মোড় ঘোড়ানো’ বলতে নারাজ তিনি।

যদিও উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের বহু শহর পুনর্দখলের পর ইউক্রেনীয়রা যে এই মুহূর্তে মানসিক এবং কৌশলগত ভাবে শক্তিশালী হয়েছে, তা মেনে নিয়েছেন ওই যুদ্ধ বিশারদ। তিনি বলেন, ‘‘এই যুদ্ধে ইউক্রেনীয়দের এই সাফল্যেরই প্রয়োজন ছিল। আমি বলব, এটা যেন হাফটাইমের আগে বিপক্ষের জালে বল ঠেলে দিয়ে গোল করা।’’

সোমবার ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির দাবি ছিল, সাম্প্রতিক প্রত্যাঘাতে দেশের উত্তর-পূর্বের দু’হাজার বর্গমাইল তাঁদের দখলে এসেছে। পরের দিন তিনি আরও দাবি করেন, আরও দেড় হাজার বর্গমাইল এলাকা পুনর্দখল করেছেন তাঁদের সেনারা। বস্তুত, মঙ্গলবার ভবচ্যানস্ক সীমান্তের আর একটি শহরের রাশ নিজেদের হাতে পেয়েছে ইউক্রেন।

শুধুমাত্র ইউক্রেনের মাটিতেই নয়, ঘরের অন্দরেও অস্বস্তি বাড়ছে পুতিনের। তাঁর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন রাশিয়ার এমপি মিখায়েল শেরেমেত। অন্য দিকে, ইউক্রেনের মাটিতে এই ‘জোড়াতালি’ দেওয়া যুদ্ধের বিরুদ্ধে পুতিনের ইস্তফার দাবি তুলেছেন অন্তত ৫০ জন স্থানীয় রাজনীতিক।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]