তার কথা ভেবে দিন কাটে আতহার ইসলাম


মোঃ আতহার ইসলাম , আপডেট করা হয়েছে : 11-09-2022

তার কথা ভেবে দিন কাটে  আতহার ইসলাম

আজ আমার বয়স ৫৫ মাত্র, যা জীবনের এক শেষ প্রান্তহ বলা চলে। আজ ৬ষ্ট শ্রেণিতে আমার প্রথম দিন। নতুন স্কুলে প্রথম দিন হওয়ার মনের মধ্যে অন্যরকম একটা আনন্দ হচ্ছিল। প্রথম দিন স্কুলে গিয়ে অনেক নতুন বন্ধুদের সাথে পরিচয় হলো তাদের মধ্যে ছিল জাজিম, পৃথুল, ইমন ইত্যাদি। এছাড়াও অনেক শিক্ষক শিক্ষার্থীর সাথেও পরিচয় হয়। এই করতে করতে আমি আজ ৮ম শ্রেণিতে উঠেছি পড়াশোনা ভালোই হচ্ছে। হঠাৎ একদিন দেখলাম একটা মেয়ে আমাকে দেখছে এটা আমি লক্ষ্য করলাম কিন্তু আমি তার দিকে তাকাতে পারলাম না কারণ আমি ছোটবেলা থেকে লাজুক ছিলাম। এই রকম ভাবে স্কুলে যাবার সময় প্রায় দেখতাম সেই মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে আছে । একদিন লজ্জা এড়িয়ে তার দিকে তাকালাম এবং তার চোখ দেখে অন্যরকম ভালো লাগলো। হঠাৎ একদিক সেই মেয়েকে স্কুলে দেখে অবাক হয়ে যাই। স্কুলে তার সাথে প্রাইয় দেখা হতো তখন বন্ধুরা বলত দেখ হাসিব তমা তোকে দেখছে। তখন তার নাম আমি প্রথম জানতে পারি। প্রাই ১ বছর পর তার সাথে আমি প্রথম কথা বলি। তার পর থেকে চিঠি আদান প্রদান করে কথা বলতাম কারণ তখন মোবাইল বেশি মানুষ এর কাছে ছিল না । আমরা পহেলা বৈশাখের দিন প্রথম ঘুরতে যাই। তমার সবচেয়ে ভালো গুন হলো সে সবার সাথে ভালো ব্যবহার করত। এই করতে করতে কয়েক বছর পার হয়ে গেলো আমার এস.এস.সি পরিক্ষা শুরু হলো। পরিক্ষার মধ্যে আমরা খুব কম কথা বলতাম কারণ তমা কথা বলতে চাইত না আমার পরিক্ষা খারাপ হবে বলে । পরিক্ষা শেষ হওয়ার পর পরিক্ষা ফলাফল আলহামদুলিল্লাহ আমার ভালো হলো। বাড়িতে আব্বু, আম্মু ও বড় বোন এর পরামর্শে তারা আমাকে রাজশাহী ভর্তি করার সিদ্ধন্ত নিল। আমার তিন ভাই বোন বড় বোন রাফিয়া ইসলাম, ছোট বোন রিতু ইসলাম। ১৮ ইং ফেব্রুয়ারি আমি রাজশাহীতে ভর্তি হতে যাই। রাজশাহীতে ভর্তি হয়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরে এসে আমি তমার সাথে কথা বলি আমি রাজশাহীতে চলে যাবে গ্রামে খুব কম আসা হবে কিন্তু আমি তোমার সাথে যোগাযোগ রাখব এই কথা সুনে তমা খুব কষ্ট পাই। আমি রাজশাহীতে যাবার আগের দিন তমার সাথে দেখা করি এবং সেই দিন সে খুব কান্না করে। অবশেষে আব্বু, আম্মু, বোনদের ও তমা কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীতে চলে আসি। একটা বাসা নিয়ে আমার তিন বন্ধু ও আমি থাকতাম। তারা শুধু জানত আমার ও তমার প্রেমের কথা । আমি যখন রাজশাহীতে যাই তখন মানুষ এর কাছে মোবাইল এর ব্যাপকতা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। আমি বাহিরে পড়তে আসায় আব্বু আমাকে একটা মোবাইল কিনে দেয়। তমার বাসায় দুটা ফোন ছিল তার মধ্যে একটা তার বাবার আরেকটি তার মা এর তার মায়ের ফোন দিয়ে তমার সাথে আমার যোগাযোগ হতো। রাজশাহী থেকে বাড়ি ফিরে আসলে আমি তমার সাথে দেখা করতাম। এই ভাবে আমাদের যোগাযোগ চলে এক বছর। এই পর্যন্ত তমাকে ৪১ টা সাদা গোলাপ ফুল দিয়েছি। কারণ তার সাদা গোলাগ পচ্ছন্দ ছিল। ২হফ ুবধৎ উঠেছি দুই মাস হলো হঠাৎ তমার সাথে কোনো যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। রাজশাহী থেকে বাড়িতে এসে তাকে অনেক খুজি তবুও কোনো সন্ধন পাই না। এই ভাবে এক মাস কেঁটে যাই তমার কোনো সন্ধন পাই না এক দিন তমার চাচার সাথে দেখা হলো এবং আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম তমা কোথায়। তখন সে অনেক দুঃখের সহিত বলল তমা মারা গেছে আজ ৮ দিন হলো। আমি বললাম মশকরা না করে সত্য কথা কলুন। তার চাচা বলে তমা যখন ৮ম শ্রেণিতে ওঠে তখন তার কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছিল সেই সমস্যা গুলো ছিল হাড় ও জয়েন্ট ক্রমাগত ব্যাথা, নাক ও মুখ দিয়ে মাঝে মাঝে রক্ত পড়া, রাতে ঘামা, ঘনঘন মাথা ঘোরা ইত্যাদি। তার এই সমস্যা দেখা দিলে তমার বাবা গ্রামের ডাক্তার এর কাছ থেকে ঔষধ এনে খাওয়াতো এবং ঔষুধ খেয়ে তমা কিছু দিন সুস্থ থাকত। তমার মা ও বাবা এই রোগকে তেমন গুরুত্ব দিতো না। হঠাৎ এই রোগ তমার অত্যাধিক বেড়ে গেলো তার বাবা গ্রামের ডাক্তারের কাছে থেকে ঔষুধ এনে খাওয়ানোর পরেও না কমার জন্য ডাক্তারে পর্রামর্শে তাকে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান তমার বাবা তমাকে । ঢাকায় ডাক্তার অনেক পরিক্ষা করতে দেন। তমার বাবা সেই পরিক্ষা করান এবং ডাক্তারকে রিপোর্ট দেখান ডাক্তার রিপোর্ট দেখে অবাক হয়ে যায় কারণ রিপোর্ট এ ধরা পড়ে তমার ব্লাড ক্যান্সার। সাধারণত ব্লাড ক্যান্সার হয় ৩০ বছর এর বেশি বয়স্ক মানুষের এর এবং ডাক্তার বলে তমা আর সর্বোচ্চ ২০ দিন বাঁচতে পারে। তমা মারা  যাওয়ার ২ দিন আগে হাসিব নাম টা বলত বার বার আমার কেউ জানতাম না হাসিব কে। এই কথা শুনে আমি অত্যাধিক কষ্ট পাই এবং বাড়িতে ফিরে এসে অনেক কান্না করি তার জন্য এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করি যে আল্লাহ তাকে জান্নাত বাসী করেন। এরপর আমি কোনো মেয়ের দিকে তাকালেই তমার কথা মনে পড়ত এবং তমাই ছিল আমার প্রথম ও শেষ ভালোবাসা । তমার কথা ভাবতে ভাবতে ৩৭ টা বছর পার হয়ে গেছে তবুও তার কথা এখনো ভাবি। মাঝে মাঝে সময় পেলে তমার কবর জিয়ারত করি। মানুষের সবকিছু হারিয়ে গেলেও সত্যিকারের ভালোবাসা সারা জীবন রয়ে যাই।  


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]