সম্প্রতি উত্তর কোরিয়ায় একটি আইন পাস হয়েছে। নয়া আইনে নিজেদের প্রতিরক্ষা করতে প্রথম পরমাণু হামলা চালানোয় সম্মতি দেওয়া হয়েছে। জানানো হয়েছে, এই আইনের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়া দেশকে রক্ষা করতে প্রথমে পরমাণু হামলা করতে পারবে। উত্তর কোরিয়ার নতুন আইন নতুন করে সিওলের ওপর চাপ বাড়াবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
নতুন করে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে। পিয়ংইয়ং করোনা মহামারীর জন্য দক্ষিণ কোরিয়াকে দায়ী করতে থাকে। এই দোষারোপের উত্তেজনার মধ্যে উত্তর কোরিয়ার এই ধরনের আইন পাশ যথেষ্ঠ উদ্বেগের বিষয় বলেই আন্তর্জাতিক মহল মনে করছে।
উত্তর কোরিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যমের তরফে জানানো হয়েছে, শত্রুদের বিনাশে ও দেশকে সুরক্ষিত রাখতে এই আইনের সাহায্য দেশটির প্রশাসন নেবে। যার ফলে উত্তর কোরিয়া পরমাণবিক হামলা যে কোনও মুহূর্তে করতে পারে বলে প্রমাদ গুনতে শুরু করেছে আন্তর্জাতিক মহল। সরকারি সংবাদমাধ্যের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এই প্রসঙ্গে কিম জং উন দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। তিনি মন্তব্য করেছেন, বিশ্বের কাছে উত্তর কোরিয়া পরমাণবিক দেশ হিসেবে এবার থেকে চিহ্নিত হবে।
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান কিম জং উন বলেন, কোনওভাবেই দেশে অস্ত্র গবেষণা ও পরীক্ষা বন্ধ করা হবে না। তিনি আশঙ্কা করেন, যে কোনও মুহূর্তে আমেরিকা উত্তর কোরিয়ার পতন ঘটাতে পারে। সেই কারণেই দেশে এই আইন আনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বক্তব্য রাখতে গিয়ে কিম জং উন বলেন, পরমাণু অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণের কোনও প্রশ্ন নেই। কোনও সমঝোতা নেই। দেশের সুরক্ষার স্বার্থে কোনওভাবে পরমাণু অস্ত্র ত্যাগ করা যাবে না। জং ইনস্টিটিউটের সেন্টার ফর নর্থ কোরিয়া স্টাডিজের চেওং সিওং-চ্যাং বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আমেরিকায় আঘাত হানতে সক্ষম হবে। এছাড়াও দেশ পারমাণবিক শক্তির দিক থেকে অনেকটা এগিয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়া অনেকটা সুরক্ষিত হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। তিনি অপারমাণবিক হামলার বা সংঘর্ষের পাল্টা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারকে সমর্থন করেন।
২০১৭ সালে প্রথমবারের জন্য আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র উত্ক্ষেপণ করে পরীক্ষা করেছিল। কিন্তু তারপর থেকে উত্তর কোরিয়া সেভাবে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বা পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা করেনি। চলতি বছর জানুয়ারি মাস থেকে উত্তর কোরিয়া নতুন করে অস্ত্র পরীক্ষা শুরু করে। রাষ্ট্রসংঘ, আমেরিকা ও পশ্চিমি দেশগুলোর একাধিক সতর্কতাকে উড়িয়ে উত্তর কোরিয়া অস্ত্র পরীক্ষা জোর কদমে শুরু করে। উত্তর কোরিয়ার নয়া আইন আমেরিকা, জাপানের সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়াকে চাপে রাখবে তা বলা অপেক্ষা রাখে না।
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান কিম জং উন ও তত্কালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুবার বৈঠকে বসেন। উদ্দেশ্য ছিল উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ করা। সিঙ্গাপুরে প্রথমবারের জন্য বৈঠক হয়। সেই বৈঠক আংশিক সফল হলেও ভিয়েতনামে হওয়া দ্বিতীয় বৈঠক ভেস্তে যায়। কিম বৈঠক ছেড়ে দেশে ফিরে আসেন। তারপর থেকে উত্তর কোরিয়া নতুন করে পরমাণু অস্ত্র গবেষণার কাজ শুরু করেন বলে জানা গিয়েছে।