পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যার তাণ্ডব চলছেই। এরমধ্যে শঙ্কার বার্তা দিলো জাতিসংঘ। মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, বন্যা-বিধ্বস্ত পাকিস্তানে মানবিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্যার কারণে পাকিস্তানে তিন কোটি ৩০ কোটির বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এতে দেশটিতে অন্তত এক হাজার ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। শত শত বাড়িঘর, রাস্তা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, রাস্তা এবং ব্রিজ প্লাবিত হয়েছে।
জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, বন্যায় এক হাজার ৪৬০টির বেশি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এরমধ্যে ৪৩২টি পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে। এদের বেশিরভাগই সিন্ধু প্রদেশের।
বন্যাকবলিত পাকিস্তানকে সাহয্য করতে ডব্লিউএইচও ও তার সহযোগীসহ দেশটিতে চার হাজার ৫০০ এর বেশি মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করেছে। এছাড়া ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, হেপাটাইটিস এবং চিকুনগুনিয়ার জন্য দুই লাখ ৩০ হাজারের বেশি র্যাপিড টেস্ট বিতরণ করেছে।
জেনেভায় ডব্লিউএইচও'র মুখপাত্র তারিক জাসারেভিচ রিপোর্টারদের বলেন, করোনা, এইচআইভি, পোলিও ছাড়া এসব রোগ ইতোমধ্যে পাকিস্তানে ছড়িয়ে পড়েছে। এখন দেশটিতে এসব রোগের বেশি করে ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা আছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা ইতোমধ্যে খবর পেয়েছি সবচেয়ে বেশি বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া এবং হাম রোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
জাসারেভিচ সতর্ক করেছেন, দেশটিতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। এর আগে পাকিস্তানের এক মন্ত্রী জানান, বন্যায় দেশটির এক তৃতীয়াংশ পানির নিচে ডুবে গেছে।
জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফ বলেছে, পানযোগ্য পানির ঘাটতি থাকায় পাকিস্তানে বহু শিশু বিভিন্ন রোগে ভুগে মারা যেতে পারে। মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পাকিস্তান জুড়ে এ বন্যা দেখা দিয়েছে বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
এ বন্যা জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখা দেশগুলোর সঙ্গে সবচেয়ে কম প্রভাব রাখা দেশগুলোর মধ্যে তীব্র বৈষম্যের বিষয়টি সামনে এসেছে। বৈশ্বিক গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমণে পাকিস্তানের অবদান ১ শতাংশের কম হলেও দেশটির ভৌগোলিক আকার ও অবস্থান একে জলবায়ু পরিবর্তনের মুখে অত্যন্ত ভঙ্গুর করে তুলেছে।
বিবিসি ও রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের চলমান বন্যায় দেশটির বৃহত্তম হ্রদের পানি পাড় ছাপিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, এ পরিণতি ঠেকাতে কর্তৃপক্ষ প্র্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে।
কয়েক দিনের রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিতে দক্ষিণাঞ্চলীয় সিন্ধু প্রদেশের মানছার হ্রদের পানি বিপজ্জনক উচ্চতায় উঠে যায়। এতে সেহওয়ান ও ভান সায়দাবাদসহ আশপাশের ঘনবসতিপূর্ণ অনেক শহর তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।