আপনি কী একজন ভালো মানুষ হতে চান!


ফারহানা জেরিন , আপডেট করা হয়েছে : 04-09-2022

আপনি কী একজন ভালো মানুষ হতে চান!

আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয়- কীভাবে একজন সত্যিকারের ভালো মানুষ হওয়া যায়? এমন প্রশ্নে হয়তো প্রথমেই আপনার নিজের মনে প্রশ্ন চেঁপে বসতে পারে- আসলে সত্যিকারের ভালো মানুষ হওয়া কি সম্ভব? হয়তো মনে হতে পারে, না, সম্ভব নয়। কিন্তু না, ভালো মানুষ হওয়া খুব বেশি কঠিন কাজ নয়। আপনার ইচ্ছা থাকলেই একজন ভালো মানুষ হতে পারেন। তবে কি কি বৈশিষ্ট্য নিজের মধ্যে থাকলে একজন ভালো মানুষ হতে পারেন সেগুলো আগে চিহ্ণিত করতে হবে।

ভালোবাসতে জানতে হবে: ভালো মানুষের প্রথম সম্পদ তার বিবেক ও মন। নিজের মনের প্রয়োজনে হলেও সবকিছুতে ভোলোবাসা খুঁজতে হবে। ভালোবাসতে জানতে হবে। নিজেকে ভালোবাসতে জানতে হবে। অপরকে ভালোবাসতে জানতে হবে। প্রাণ-প্রকৃতি- প্রাণীদের ভালোবাসতে জানতে হবে। পরিবেশকে ভালোবাসতে হবে। তবে নিজেকে ভালোবাসতে পারাই হলো ভালো মানুষ হয়ে ওঠার প্রথম সোপান। যদি নিজের কাছে নিজে ভালো থাকা যায়, যেকোনো ভালো কাজের পর নিজেরাই নিজেদের পিঠ চাপড়ে দেওয়া যায় তবে হয়তো ভালো কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা মিলবে।

স্বীকার করতে হবে নিজের দুর্বলতা: যেকোনো সমস্যা সমাধানে প্রথম প্রয়োজন সমস্যাটি শনাক্ত এবং তা স্বীকার করে নেওয়া। কোনো ব্যক্তিই মানুষ হিসেবে শতভাগ পারফেক্ট না। আমাদের মাঝে রয়েছে নানা দুর্বলতা। সেগুলোকে অস্বীকার করে বা গোপন করে কোনো লাভ নেই। আমাদের ব্যক্তিজীবনের দুর্বলতাগুলোকেও আমাদের চিহ্নিত করতে হবে। সেগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা শুরু করতে হবে।

হয়তো আমরা কেউ কথায় কথায় মিথ্যা বলে ফেলি। কোনো কাজে সফল হওয়ার জন্য অসৎ পন্থা অবলম্বন করি। অনৈতিক কাজে লিপ্ত হই। অন্যের ক্ষতি করে বসতেও দ্বিধা করি না। যখন আমরা এগুলো করেও দাবি করি যে, আমরা এগুলো করি না। এতে করে আমাদের নিজেদেরকে শুধরানো আর হয় না। তাই নিজেদের চারিত্রিক দুর্বলতাগুলোকে অস্বীকার না করে, নিজে নিজে কিংবা আশেপাশের কারো সহায়তায় এগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা শুরু করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

বিকল্প নেই ইতিবাচকতার চর্চার: ইতিবাচক হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। আমরা যদি মনে মনে নেতিবাচকতাকে ধারণ করি, যেকোনো ক্ষেত্রে কেবল নেতিবাচকতাই খুঁজে বেড়াই তাতে মনে মনে কষ্ট পাব নিজেরাই। তাই আমাদেরকে ইতিবাচক হতে হবে। কেউ যদি এমন কাজ করে থাকে যার জন্য সে প্রশংসার দাবিদার, একটু প্রশংসা তার প্রাপ্য, তাহলে অবশ্যই মন খুলে তার প্রশংসা করতে হবে। তাকে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা দিতে হবে। পাশাপাশি গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে যেসব ক্ষেত্রে তার আরো উন্নতির জায়গা আছে, সেগুলোও তাকে ধরিয়ে দিতে হবে।

নিজের রাগ দমন: রাগ আমাদেরকে ধ্বংস করে দেয়। যখন আমাদের সঙ্গে খারাপ কিছু ঘটে, তখন খুব স্বাভাবিকভাবেই আমরা রেগে যাই। রাগের মাথায় এমন কিছু একটা করে বসি, যাতে মানুষ হিসেবে নিজেরাই অনেক ছোট হয়ে যাই। অনেক অনর্থক বিপদ ডেকে আনি। তাই রাগকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।

পরমতসহিষ্ণু হতে হবে: আমরা বিপক্ষ মতকে একেবারেই সহ্য করতে পারি না। আমাদের প্রত্যেকের নিজস্ব আদর্শ, মূল্যবোধ, নৈতিকতার জায়গা থাকে, এবং আমরা সবসময় সেগুলোকেই আঁকড়ে ধরে রাখতে চাই। তবে ভালো মানুষ হিসেবে এমনটা কখনোই প্রত্যাশা করা যাবে না। ভালো মানুষ হতে হলে অবশ্যই অন্যকে সহ্য করতে হবে।

বিনয়ী ও মার্জিত হতে হবে: আমরা অন্যকে যা বলি বা অন্যের সঙ্গে যা করি, সেগুলো আসলে আমাদের নিজেদের ব্যক্তিত্বেরই প্রতিনিধিত্ব করে। ধরুন কেউ যদি আপনার সঙ্গে খুব বাজে ব্যবহার করে, তবুও আপনি বিনয়ের সঙ্গে তার কথার প্রত্যুত্তর দিন। এতে কিন্তু এটা প্রমাণ হয় না যে ওই মানুষটির অবস্থান আমার চেয়ে অনেক উপরে, আপনি ভয় পেয়ে তাকে সম্মান দিচ্ছেন। অন্যের সঙ্গে বিনয়ী আচরণ করতে পারাটা মানুষের অনেক বড় অভ্যাস। বিনয় কিংবা মার্জিত আচরণ মানুষের দুর্বলতা নয়। সবসময় অন্যের প্রতি বিনয়ী থাকা, মার্জিত আচরণ করা মানুষের সবচেয়ে বড় শক্তিমত্তার জায়গা।

অন্যকে সাহায্য করতে হবে: আমি যদি সফলতার সিঁড়ি বেয়ে এগিয়ে যাই, আশেপাশের সবাইকে অনেক পেছনে ফেলে দিই, তাতে কি খুব বেশি লাভ আছে? নেই। এতে আশেপাশের মানুষের সঙ্গে অনেক বড় দূরত্ব তৈরি হয়। দিনশেষে দেখা যাবে, সাফল্যের শিখরে পৌঁছেও বড্ড একা, নিঃসঙ্গ, নির্বান্ধব লাগছে নিজেকে। এ কারণেই, শুধু নিজেকে নিয়ে পড়ে থাকা কোনো কাজের কথা নয়। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে আশেপাশের সবার দিকে।

কাটিয়ে উঠতে হবে পরশ্রীকাতরতা: অন্যের উন্নতি বা ভালো দেখলে স্বভাবতই আমাদের অনেকের মনে একধরনের হাহাকার জেগে ওঠে। কেউ কেউ আবার সূক্ষ্ম ঈর্ষাবোধও করি। তখন আমরা মানসিক যাতনায় ভুগি, অস্থির হয়ে পড়ি। অথচ এই ধরনের হিংসা কখনোই আমাদের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে না। অন্যের ভালো দেখে কষ্ট পাওয়ার পাশাপাশি নিজেরাও হীনম্মন্যতায় ভুগতে থাকি। নিজেদের কাছেই নিজেরা অনেক বেশি ছোট ও তুচ্ছ হয়ে যাই। নিজেদের জীবনকে অনেক অর্থহীন মনে হয়। সুতরাং আমাদের উচিত হবে অন্যের ভালো দেখে কষ্ট পাওয়ার বদলে, নিজেদের মূল্যবান সময়কে কাজে লাগানো। সর্বোপরি, অন্যের উন্নতি দেখে যদি আমরা ঈর্ষান্বিত বা হতাশ না হয়ে বরং নিজেরাও সেগুলো থেকে অনুপ্রেরণা খোঁজার চেষ্টা করি।

হতে হবে সহানুভূতিশীল: আমরা অনেকেই হয়তো কেবল নিজেদের দুঃখ-কষ্টগুলোকেই বড় করে দেখি। আপনি-আমি বেশি খারাপ আছি বলে অন্য কারো খারাপ থাকাকে উড়িয়ে দেয়া, অস্বীকার করা খুবই বাজে কাজ। এর মাধ্যমে আমরা নিজেদের অজান্তেই অনেককে কষ্ট দিয়ে ফেলি। আমাদেরকে এই ধরনের মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সব জায়গায় শুধু নিজেদের উদাহরণ বা তুলনা টানলে চলবে না।

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে: প্রাত্যহিক জীবনে আমরা অনেকের দ্বারাই উপকৃত হই। কিন্তু খুব কম ক্ষেত্রেই আমরা এই কৃতজ্ঞতাটা প্রকাশ করি। আমাদের উচিত জীবনে চলার পথে সকল ক্ষেত্রে কৃতজ্ঞ হওয়া, এবং সেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। কেউ যদি এমন সামান্যতম কোনো কাজও করে থাকে, যার ফলে আমরা কিছুটা হলেও উপকৃত হয়েছি, তাহলে অবশ্যই আমাদের উচিত তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, তাকে তার প্রাপ্য সম্মানটুকু দেওয়া। আমাদের মনোভাব এমন হওয়া যাবে না যে কারো প্রতি কৃতজ্ঞ হলে বা কাউকে একটু সম্মান দিলে আমাদের নিজেদের কৃতিত্ব হ্রাস পাবে।

সর্বদাই অজুহাত নয়: কোনো কাজ যদি ভুল হয়ে যায়, আমরা সবার আগে যা করি তা হলো অজুহাত দেওয়া। অর্থাৎ কীভাবে অন্য কোনো ব্যক্তি, বস্তু বা ঘটনার উপর আমাদের ভুলের দায়টা চাপিয়ে দেওয়া যায়। এই প্রবণতা বর্জন করতে হবে। অজুহাত দেওয়ার পরিবর্তে আমাদেরকে নিজেদের ভুলগুলো স্বীকার করে নিতে হবে, সেগুলো থেকে শিক্ষা নিতে হবে।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]