দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার রামভদ্রপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে পরিচ্ছন্নকর্মী ও আয়া পদে নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ সরেজমিন তদন্ত করেছেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম।
বিদ্যালয়টির ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট পরিচ্ছন্নকর্মী পদের প্রার্থী ফুলবাড়ী পৌরশহরের সুইপার কলোনীর বাসিন্দা পিংকি রানী এবং আয়া পদের প্রার্থী রামভদ্রপুর গ্রামের মোজাক্কেরা বেগমের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত সোমবার (২৯ আগস্ট) ঘটনার তদন্তে আসেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। এসময় অভিযোগকারীরাসহ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, পরিচালনা কমিটির সভাপতি, সদস্যসহ শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন।
অভিযোগকারীদের অভিযোগ, নিয়োগ পরীক্ষার আগেই নিয়োগ বোর্ডের অন্যদের মেনেজ করে গোপনে মনোনিত প্রার্থীদের কাছে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে লোক দেখানো নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ না করেই গোপনে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, চলতি বছরের ৮ জুন একটি জাতীয় ও একটি স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় রামভদ্রপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষক, একজন অফিস সহায়ক, একজন পরিচ্ছন্নতাকর্র্মী ও একজন আয়া পদে লোক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ১৫ দিনের মধ্যে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি বরাবর প্রার্থীদের আবেদন করতে হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে। ওই বিজ্ঞপ্তির আলোকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই অন্যান্য প্রার্থীদের সাথে পরিচ্ছন্নকর্মী পদে পিংকি রানী ও আয়া পদে মোজাক্কেরা বেগম বিধিমোতাবেক আবেদন করেন। পরিচ্ছন্ন কর্মী পদে তিনিসহ তিনজন প্রার্থী ছিল।
অভিযোগকারী পরিচ্ছন্নকর্মী পদে আবেদনকারী পিংকি রানী বলেন, ‘নিজ পদে পরীক্ষা দিতে পরীক্ষা কেন্দ্রে যান। সেখানে পূর্বেই উপস্থিত দুইজন প্রার্থী তাকে দেখে হাসাহাসিসহ কটাক্ষ করে বলেন, পরীক্ষা দিয়ে লাভ নেই, আমাদের আগেই চাকরি হয়ে গেছে। এ কথা শোনার পর পিংকি রানী পরীক্ষা না দিয়ে বাড়ী ফিরে যান। তিনজন প্রার্থীর মধ্যে পিংকি রানী অনুপস্থিত থাকায় দুইজন প্রার্থীর উপস্থিতিতে কিভাবে পরিচ্ছন্নকর্মী নিয়োগ হয়? খবর নিয়ে জেনেছেন প্রত্যেকটি নিয়োগে কমপক্ষে তিনজন প্রার্থীর উপস্থিতি এবং অংশগ্রহনে নিয়োগ হয়ে থাকে। কিন্তু রামভদ্রপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সেই নিয়মনীতিকে উপেক্ষা করে অর্থের বিনিময়ে জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার কারণে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। পিংকি রানী দাবি করেন, বিতর্কিত এই নিয়োগ পরীক্ষা ও নিয়োগ বাতিল করে সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে দুর্নীতিমুক্ত পরীক্ষা ও নিয়োগ হোক। তা’নাহলে প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ দেওয়া হবে।’
অপর অভিযোগকারী আয়া পদের প্রার্থী মোজাক্কেরা বেগম বলেন, ‘আমি একজন ডিগ্রি পাশ নারী, চাকরি পাইনা, আমার আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে আয়া পদে আবেদন করি। কিন্তু পরীক্ষা দিয়ে আমি যাচাই করে দেখি আমার রেজাল্ট ভালো। আয়া পদে আমিই সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী প্রার্থী ছিলাম। আমি চাই যাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তার সাথে আবারো পরীক্ষা নেওয়া হোক। নিয়োগ পরীক্ষার রেজাল্ট শীটের জন্য দিনাজপুর জিলা স্কুলে আবেদন করেছিলাম, এমন কি বিদ্যালয়ের তৎকালিন প্রধান শিক্ষক মুক্তার আলী সরকার ও বিদ্যালয়ের সভাপতি মঈদুলকে বলার সত্ত্বেও তারাও কেউই রেজাল্ট সিট দেননি।’ নিয়োগের পুরোপক্রিয়াটি ছিল জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থগ্রহণের নিয়োগ প্রক্রিয়া। এজন্য অভিযোগ দিয়েছি।’
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বলেন, ‘রমজানের ছুটিকালিন সময়ে গোপণে নিয়োগের রেজুলেশন করে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আমরা যারা নিয়োগ কমিটিতে ছিলাম আমাদেরকে বাদ দিয়েই নিয়োগগুলো দেওয়া হয়েছে।’
এলাকাবাসী রফিকুল ইসলাম মন্টু বলেন, ‘বিদ্যালয়টিতে যে নিয়োগগুলো হয়েছে, সে নিয়োগে স্বচ্ছতা ছিল না বলেই অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে। রেজুলেশন জালিয়াতি হয়েছে। যে পাশ করেছে তাকে চাকরি দেয়নি, যে ফেল করতে তাকে চাকরি দিয়েছে।’
তৎকালিন বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মুক্তার আলী সরকার বলেন, ‘যা কিছু হয়েছে তার সবটাই নিয়মের মধ্যেই হয়েছে।’
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মঈদুল ইসলাম এ বিষয়ে কোন বক্তব্য দিতে রাজী হননি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শমশের আলী মন্ডল বলেন, ‘জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিয়েছে, তাই তিনি সরেজমিনে তদন্তে এসেছিলেন। তিনি তদন্তে কি পেয়েছেন তা জানা নেই। তবে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিং আছে।’
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামকে তার ০১৭১২ ৫০৫২০৯ নন্বরের মুঠোফোনে ফোন করা হলে কোন কিছু জানতে হলে তার অফিসে আসতে হবে, এ কথা বলেই বলেই তিনি ফোনের লাইন কেটে দেন।