লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে রড-সিমেন্টের দাম, শঙ্কায় ঠিকাদাররা


অনলাইন ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 28-08-2022

লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে রড-সিমেন্টের দাম, শঙ্কায় ঠিকাদাররা

রড-সিমেন্টের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। ভোক্তাকে বাড়তি টাকা গুনতে হলেও উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, লাভের আশায় লোকসান দিয়ে বাজার ধরে রেখেছেন তারা। এদিকে হিসাব মিলিয়ে আবাসন ব্যবসায়ীরা বলছেন, মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে ফ্ল্যাটের দাম আরেক দফা বাড়বে।

অন্যদিকে সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ ঝুলে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ঠিকাদাররা। আবার রড-সিমেন্টের ব্যবহার কমে যাওয়া মানে উন্নয়ন-অগ্রগতি কমে যাওয়া- এমন বিশ্লেষণ অর্থনীতিবিদদের।

এক রড ব্যবসায়ী বলেন, রডের দাম প্রতিনিয়ত ১ হাজার বা ২ হাজার করে বাড়তে বাড়তে এখন বলতে গেলে আমাদের কোনো বেচাকেনা নেই। তার কথায় এটি পরিষ্কার যে, রডের দাম বাড়ায় কমে গেছে বিক্রি। মন্দায় পড়েছেন তারা। রডের দাম কেন বেড়েছে, তা জানার আগে জেনে নেয়া যাক, এক বছর আগের তুলনায় কতটা কমেছে বেচাকেনা।

এ প্রশ্নের জবাবে ইংলিশ রোড আয়রন অ্যান্ড স্টিল মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ইমরান হোসাইন বলেন, ‘বাজার বলতে গেলে ক্রেতাশূন্য। আমার মতে, প্রায় ৭৫ শতাংশ বেচাকেনা কমে গেছে। এরকম অবস্থা আমরা আগে কখনো দেখিনি।’

ইংলিশ রোডের ব্যবসায়ীদের তথ্য বলছে, গত ২০ জুলাই যে রড প্রতি মেট্রিক টন বিক্রি হয়েছে ৭৯ হাজার টাকায়, এক মাসে তা ওঠেছে ৯২ হাজার টাকায়। কারণ হিসেবে উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, বিশ্ববাজারে স্ক্র্যাপের দাম বেড়ে যাওয়ার পাশাপাাশি দেশে বেড়েছে ডলার ও জ্বালানির দাম। সেই সঙ্গে উৎপাদন পর্যায়ে গ্যাস-বিদ্যুতের লুকোচুরি তো রয়েছেই।

বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ মাসাদুল আলম মাসুদ বলেন, যেমনভাবে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে, তেমনিভাবে আমাদের স্ক্র্যাপের দামও বেড়ে গেছে। আবার ডলারের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়া আমাদের সংকটকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। গত বছর ঠিকাদাররা তেমন লাভ করতে পারেননি। আমরাও কিন্তু লাভ করতে পারিনি। লোকসান করে ব্যবসা করেছি। কারণ ব্যবসায় লাভ-লোকসান হবে, সেটিই স্বাভাবিক।

একই অবস্থা আমদানিনির্ভর কাঁচামালে তৈরি সিমেন্টের বাজারেও। মাসের ব্যবধানে প্রতি বস্তায় দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। যদিও প্রস্তুতকারকদের দাবি, যে পরিমাণ ব্যয় বেড়েছে তার কেবল অর্ধেক তারা ভোক্তাদের কাঁধে চাপিয়েছেন।

লোকসান হওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. শহিদুল্লাহ বলেন, যে ক্লিংকার দিয়ে সিমেন্ট তৈরি হয়, তার শতভাগই আমরা বিদেশ থেকে আমদানি করে থাকি। সেটার দাম বেড়েছে। তাই সংগত কারণেই আমাদের খরচ বেড়েছে। আমাদের যতটুকু খরচ বেড়েছে তার কেবল ৫০ শতাংশ বাজারে সমন্বয় করা গেছে। বাকি ৫০ শতাংশ সমন্বয় করা যায়নি। যার মানে হলো, আমাদের ওই সমপরিমাণ লোকসান হচ্ছে।

রড-সিমেন্টের দাম বাড়ায় আবাসন ব্যবসায়ীরা বলছেন, নির্মাণ খরচের কারণে গত দুই বছরে ফ্ল্যাটের দাম কমবেশি ৩০ শতাংশ বেড়েছে। এবার আরেক ধাক্কা চাপ বাড়বে ক্রেতার ঘাড়ে। আর সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ সময়মতো শেষ করা নিয়ে সংশয়ে আছেন ঠিকাদাররা।

অবকাঠামো নির্মাণ কাজ অনেক কমে গেছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী এস এম খোরশেদ আলম বলেন, যারা অত্যন্ত লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন, তারা কাজের মধ্যে যেতে চাচ্ছেন না। তারা কাজকে ধীর গতিতেই নিচ্ছেন। কিন্তু সরকারি চুক্তির কাজ ধীর গতিতে করলেও, একটা সময়ে গিয়ে শেষ করতে হবে।  

এ বিষয়ে রিয়াল স্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. কামাল মাহমুদ বলেন, আমরা ২ থেকে ৩ বছর আগেও যেটি দেখেছিলাম যে নির্মাণ সামগ্রী ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা যেত, তা এখন ৬ হাজার ৫০০ টাকার নিচে বিক্রি করা যায় না। এর কারণ হচ্ছে প্রত্যেকটি নির্মাণ সামগ্রীর দাম হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে। এদিকে যেসব নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ছে, তা কিন্তু আমার পকেট থেকে যাচ্ছে না; আমরা কিন্তু সেটি দিন শেষে ক্রেতার কাছ থেকেই নেব।

সামগ্রিক বিবেচনায় অর্থনীতিবিদরা বলছেন, উন্নয়নশীল একটি দেশে রড-সিমেন্টের বিক্রি বা ব্যবহার কমে যাওয়া কোনো শুভ বার্তা দেয় না।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, রড ও সিমেন্টের দাম বাড়লে দেখা যায় এ নির্মাণ সামগ্রী দুটির চাহিদাও কমে গেছে। সুতরাং, এগুলোর সঙ্গে তো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের বিনিয়োগ জড়িত। তার মানে হচ্ছে, বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে। আর বিনিয়োগ কমে গেলে তো কর্মসংস্থান, প্রবৃদ্ধি সবকিছুই ধীরগতিতে হবে।

তবে আরও দুই মাস পর নির্মাণ মৌসুম পুরোপুরি শুরু হলে কোথায় দাঁড়াবে এ নির্মাণ সামগ্রীর দাম- আশঙ্কা নিয়ে তা দেখার অপেক্ষায় বাজার বিশ্লেষকরা। 


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]