সাধারণত মধ্য আগস্টেই প্রায় সব ধরনের আমন আবাদ সম্পন্ন হয়। কিন্তু চলতি মৌসুমে অতি খরার পর সার ও ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে আমন আবাদে কিছুটা ভাটা পড়েছে কৃষকদের। ফলে আমন আবাদের ২০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। লক্ষ্যমাত্রা থেকে এখনো প্রায় ১২ লাখ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়নি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, এবার আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৫৯ লাখ হেক্টর জমি। খরার কারণে কৃষকরা দেরিতে আবাদ শুরু করেন। কিন্তু ইউরিয়া সারের দাম বাড়ার পর ডিজেলের দাম বাড়ায় কৃষকের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পায়। এতে আমন আবাদ করা থেকে বিরত থাকেন অনেক কৃষক। ফলে চলতি সপ্তাহ পর্যন্ত আমন আবাদ হয়েছে প্রায় ৪৭ লাখ হেক্টর জমিতে, যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৮০ শতাংশ। আবাদে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ এগিয়ে রয়েছে। এ দুটি বিভাগে লক্ষ্যমাত্রার ৯৮ শতাংশ অর্জিত হয়েছে।
কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক গতকাল একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘আমন চাল উৎপাদনের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৌসুম। খরা আর অনাবৃষ্টির কারণে এ বছর আমন রোপণ ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে জ্বালানি তেলের দাম বেশি। গ্রামগঞ্জে অনেক সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। সেচসংকট তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দেরিতে লাগানো আমনের ক্ষেত এখন সেচের অভাবে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। সে জন্য আমন নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছি। গতকাল (সোমবার) ক্যাবিনেটে এ পরিস্থিতি নিয়ে অলোচনা হয়েছে। আমি বলেছি, আগস্টের পরে ধান রোপণ করলে উৎপাদন কমে যাবে। আগামী ১৫ দিন আমনের সেচের কাজে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী সেটি বিবেচনায় নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগকে রাতে সেচের জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে চলতি আমন মৌসুমে আবাদ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নতুন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়, বিশেষ করে সেচের জন্য আলাদা ব্যবস্থা নিতে নতুন পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। গতকাল সচিবালয়ে ভার্চুয়ালি ‘আমন মৌসুমে প্রয়োজনীয় সেচ নিশ্চিতকরণ’ বিষয়ক সভা শেষে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সভা শেষে কৃষিসচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, ‘আমন মৌসুমে প্রয়োজনীয় সেচ নিশ্চিতকরণের জন্য রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। সেচের প্রয়োজনে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ প্রয়োজন হলে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা নিশ্চিত করবে। এ মাসের মধ্যে যাতে লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ অর্জন করা যায় এবং রোপণের পর অন্তত ৩০ দিন যাতে সেচ নিশ্চিত করা যায়, সে লক্ষ্যেই আলোচনা হয়েছে। ’
আলোচনাসভায় আরো যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে এর মধ্যে সেচের সুবিধার্থে পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের বৃহৎ সেচ প্রকল্পগুলো চালু করেছে। অন্যগুলোও শিগগিরই চালু করবে। উপজেলা সেচ কমিটি দ্রুত মিটিং করে সেচের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বৃষ্টির অভাবে যারা ধানের চারা উৎপাদন করতে পারেনি, তাদের কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে বিনা মূল্যে চারা দেওয়া হবে।