বিশ্বজুড়ে বন্ধ হচ্ছে বিষাক্ত পণ্য’ জনসন বেবি পাউডার


আন্তর্জাতিক ডেস্ক : , আপডেট করা হয়েছে : 12-08-2022

বিশ্বজুড়ে বন্ধ হচ্ছে বিষাক্ত পণ্য’ জনসন বেবি পাউডার

বন্ধ হতে চলেছে জনসন অ্যান্ড জনসন কোম্পানির বেবি পাউডারের বিক্রি। বছর দুয়ের আগেই এটি নিষিদ্ধ হয়েছিল আমেরিকা ও কানাডায়। এবার বিশ্ব বাজার থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে জনসনের এই প্রোডাক্ট। ২০২৩ সাল থেকে আর বেবি পাউডার বিক্রি করবে না তারা। তবে এই পাউডারটি বন্ধ করলেও তারা যে একেবারেই পাউডারের ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে তা নয়, তাদের প্রোডাক্টটিকে তারা কর্নস্টার্চ-ভিত্তিক বেবি পাউডার হিসেবে রূপান্তরিত করবে বলে জানিয়েছে। 

জনসনের বেবি পাউডার নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। কয়েক বছর ধরেই চলছে একাধিক মামলাও। অভিযোগ, ‘জনসন অ্যান্ড জনসন’-এর বেবি পাউডারে মেশানো হয় বিষাক্ত খনিজ, ক্ষতিকর অ্যাসবেস্টসের গুঁড়ো। সে নমুনাও পাওয়া গিয়েছে গবেষণাগারে। এই নিয়ে দায়ের হয়েছে বহু অভিযোগ। 

তথ্য বলছে, এই অ্যাসবেস্টস শিশু শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। শরীরের ভিতরে কোনওভাবে সংস্পর্শে এলে ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে আমেরিকা ও কানাডা আগেই নিষিদ্ধি করেছিল এই পাউডার। এবার আমেরিকায় চলতে থাকা একাধিক ক্রেতা সুরক্ষা মামলার কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জনসন কর্তৃপক্ষ।

‘জনসন অ্যান্ড জনসন’ বেবি পাউডার বিক্রি শুরু হয়েছে সেই ১৮৯৪ সাল থেকে। এই পাউডারের কৌটো, গন্ধ– সবই যেন প্রতিটি পরিবারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে উঠেছে বিশ্বজুড়ে।

কিন্তু বছর তিনেক আগে ওঠে সাংঘাতিক অভিযোগ। আমেরিকার ৩৫ হাজার মহিলার জরায়ুর ক্যানসারের জন্য দায়ী হিসেবে দেখা যায় এই পাউডারের ব্যবহার। তার পরেই ওই সংস্থাকে দায়ী করে মামলা দায়ের হয় একের পর এক। আমেরিকার এক আদালত সংস্থাকে ১৫ হাজার কোটি টাকার জরিমানার ‘সাজা’ও দিয়েছিল। সঙ্গে জানিয়েছিল, মারাত্মক অপরাধ করছে জনসন। কোনও অঙ্কের জরিমানাতেই এই ক্ষতির পূরণ হয় না। এসবের মধ্যে স্বাভাবিক ভাবেই কমে যায় বিক্রিও। ২০২০ সালে বন্ধই হয়ে যায় এই পণ্য।

তথ্য বলছে, ১৯৭১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত একাধিক বার পরীক্ষা করা হয় জনসনের ওই পাউডার৷ প্রতিবারই পরীক্ষার পরে তাতে মেলে বিষাক্ত খনিজ অ্যাসবেস্টস৷ বেশ কিছু ক্ষেত্রে মামলায় হেরে গিয়ে মামলাকারীদের মোটা অঙ্কের জরিমানা দিতেও বাধ্য হয় জনসন৷ অভিযোগ, জনসনের বেবি পাউডার ব্যবহারের কারণে জরায়ু-সহ অন্যান্য ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন অনেকে৷ সংস্থার শীর্ষ কর্তা থেকে খনি ম্যানেজার, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, আইনজীবী প্রত্যেকেই বিষয়টি জানতেন৷ কিন্তু তা স্বত্ত্বেও বিষয়টি প্রকাশ্যে এনে কেন সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হয়নি, সেই নিয়ে উঠছে প্রশ্ন ৷

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের বাসিন্দা ডারলিন কোকার মেসোথেলিয়োমা নামের এক জটিল ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। খনি বা কারখানায় কাজ করার সময়ে অ্যাসবেস্টস কণা শরীরে ঢুকলে এই ক্যানসার হয় সাধারণত। কিন্তু অ্যাসবেস্টসের সংস্পর্শে কখনওই আসেননি কোকার। চিকিৎসকেরা জানান, বছরের পর বছর ছোটো দুই মেয়েকে জনসনের যে পাউডার মাখিয়েছেন তিনি, তারই কণা শরীরে ঢুকেছে তাঁর।

আদালতে জনসনের পেশ করা বিভিন্ন নথির বিশ্লেষণ করে স্পষ্ট হয়, ১৯৭১ সাল থেকেই নিজেদের উৎপাদিত বেবি পাউডারে অ্যাসবেস্টস থাকার কথা জানত জনসন অ্যান্ড জনসন। এমনকী প্রসাধনীতে অ্যাসবেস্টস ব্যবহারের মাত্রা যাতে বেঁধে দেওয়া না-হয়, তার জন্য মার্কিন গবেষণা সংস্থাগুলিকেও প্রভাবিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। পাউডারের কু-প্রভাব নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণাও বন্ধের চেষ্টা করেছে তারা।

তবে আমেরিকায় তোলপাড় হয়ে গেলেও, বিশ্বের অন্য নানা দেশে দিব্যি বিক্রি হচ্ছিল এই পাউডার। এমনকি ভারতেও ঘরে ঘরে জনপ্রিয় পাউডারটি। শেষমেশ পণ্যটি আর তৈরি হবে না। বিক্রিও বন্ধ হবে ২০২৩ থেকে।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]