নির্দিষ্ট সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও তাইওয়ানকে ঘিরে সামরিক মহড়া চালিয়ে যাচ্ছে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি। চিন তাদের উপরে হামলা চালালে কী ভাবে তারা প্রতিরোধ করবে, তার অনুকরণে এ বার পাল্টা সামরিক মহড়া শুরু করল তাইওয়ানও।
তাইওয়ানের অষ্টম আর্মি কোর-এর মুখপাত্র লউ ওয়েই জেই জানিয়েছেন, আজ সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ দেশের দক্ষিণে পিংটান কাউন্টিতে মহড়া শুরু করে সামরিক বাহিনী। এক ঘণ্টা ১০ মিনিট ধরে চলে সেই মহড়া। আগামী বৃহস্পতিবার তাইওয়ানের সেনা বাহিনীর ফের মহড়া চালানোর কথা। তবে সেটা পিংটানেই হবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। কয়েক দিন আগে এখানকার একটি হোটেল থেকেই রহস্যজনক ভাবে উদ্ধার করা হয়েছিল তাইওয়ানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির দ্বিতীয় শীর্ষ স্থানীয় আধিকারিকের মৃতদেহ। আজকের মহড়ায় শতাধিক বাহিনী ও ৪০টি হাওইৎজ়ার মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন লউ।
আজ মহড়ার পরে মুখ খুলেছেন দেশের বিদেশমন্ত্রী জোসেফ উ। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, তাইওয়ান ভূ-খণ্ডের উপরে সামরিক হামলা চালাতেই তাঁদের দেশকে চার দিক দিয়ে ঘিরে ধরে জল ও আকাশপথে মহড়া চালাচ্ছে চিনের সেনা। তাঁর কথায়, ‘‘তাইওয়ান প্রণালীর স্থিতাবস্থা পুরোপুরি বদল করাই চিনের উদ্দেশ্য। তারা চায়, গোটা অঞ্চলে আধিপত্য বজায় রাখতে। সে জন্যই এই বিশাল মাপের মহড়া চালাচ্ছে তারা। আমাদের ভূ-খণ্ড তাক করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে।’’ বিদেশমন্ত্রীর বক্তব্য, সাইবার হামলা থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও চিনের বিরোধিতা জারি রয়েছে। তবে এর পাশাপাশি, আমেরিকা ও পশ্চিমি দেশগুলিকে তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। জোসেফের কথায়, ‘‘গোটা বিশ্বকে আমরা এই বার্তাই দিতে চাই যে গণতন্ত্র কখনও স্বৈরাচার ও একনায়কতন্ত্রের কাছে মাথা নত করে না।’’
আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও জানিয়েছেন, তাইওয়ান প্রণালীর সাম্প্রতিক অবস্থা নিয়ে তিনি বিচলিত। তবে তিনি আশাবাদী যে, তাইওয়ানের উপরে সামরিক হামলা চালাবে না বেজিং। ডোভার বায়ুসেনা ঘাঁটিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বাইডেন বলেছেন, ‘‘আমি উদ্বিগ্ন নই, তবে ওরা (চিনের সেনাবাহিনী) যে ভাবে এগোচ্ছে তাতে কিছুটা বিচলিত। তবে মনে হয় না এর থেকে বেশি ওরা (চিন) কিছু করবে।’’
তাইওয়ানের সমুদ্র ও আকাশসীমার কাছে নিজেদের মহড়া আজও জারি রেখেছিল চিন। আজ তারা বিবৃতি দিয়ে ডুবোজাহাজ-বিধ্বংসী মহড়ার ব্যাখ্যা দিয়েছে। একই সঙ্গে আমেরিকাকে একহাত নিয়েছে তারা। আমেরিকান হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইপেই সফরের জন্যই এত কিছু হচ্ছে বলে ফের কটাক্ষ করেছেন চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা শুধু ষড়যন্ত্রকারীদের সতর্ক করছি মাত্র। আমেরিকার সাহায্যে তাইওয়ানের স্বাধীনতা অর্জনের ভ্রান্ত ধারণাকে চিন ধ্বংস করে দিতে চায়।’’ চিনের অভিযোগ, তাদের আকাশসীমার গা ঘেঁষে চক্কর কাটতে দেখা গিয়েছে আমেরিকান বেশ কয়েকটি যুদ্ধ ও নজরদারি বিমানকে। ওয়াশিংটন এ নিয়ে নীরব। ওয়েনবিন অবশ্য আরও একবার ওয়াশিংটনকে নিজেদের ‘ভুল শোধরানোর’ জন্য বার্তা দিয়েছেন।