অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ মানে হলো, শরীরের ব্যক্তিগত অংশে যখন অন্য কেউ অযাচিতভাবে স্পর্শ করে থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই বাচ্চারা এমনকি কিশোর-কিশোরীরাও এ ধরনের স্পর্শের বিষয়টা বা তাদের সঙ্গে কী হচ্ছে, সেটা ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারে না। শিশু অল্প অল্প করে বুঝতে শুরু করার সময় থেকেই তাকে তার শরীর, ‘ভালো স্পর্শ-মন্দ স্পর্শ’ ও ‘স্পর্শ সুরক্ষা বিধি’ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান দিতে হবে।
আজকে এ প্রসঙ্গে রইল কয়েকটি টিপস-
শিশুর আস্থা তৈরি করুন: সবার আগে শিশুর আস্থা অর্জন করুন। আপনি হয়ে উঠুন তার ভরসার জায়গা। যাতে সে যেকোনো ভালোলাগা বা মন্দলাগার কথা আপনার কাছে নির্ভয়ে বলতে পারে। শিশুকে বোঝান, তার বিশ্বাসের জায়গা তৈরি করুন। তাকে গুড টাচ বা ব্যাড টাচ বোঝানোর আগে তার আস্থা অর্জন করা জরুরি।
খারাপ স্পর্শ সহজভাবে বোঝান: শিশুরা সরল। তারা গম্ভীর আলোচনা বুঝতে পারে না। তাই শিশুকে ব্যাড টাচ সম্পর্কে বলতে গিয়ে গম্ভীরভাবে আলোচনা করার দরকার নেই। তাহলে সে ভয় পেয়ে যেতে পারে। এটি নিয়ে আলাদা আলোচনায় বসারও দরকার নেই। প্রতিদিনের ছোট ছোট আলাপের মাঝেই বুঝিয়ে বলতে পারেন।
শিশুকে ‘না’ বলতে শেখান: কেউ তার শরীরে হাত দিলে সেটা যদি তার পছন্দ না হয়, তাহলে সে যেন তক্ষুণি না বলতে পারে। তাকে আত্মবিশ্বাসী হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করুন। প্রয়োজনে ছবির সাহায্য নিন। বইতে হিউম্যান বডির ছবি দেয়া আছে সেই ছবি দেখিয়ে শিশুর শরীরের কোন অংশে কারও হাত দেয়া উচিত নয় এটা শেখান। নিজে ছবি এঁকেও তা দেখাতে পারেন।
শরীরের সব অঙ্গ পরিচিত করুন: বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুকে অবশ্যই তার প্রাইভেট পার্ট সম্পর্কে সচেতন করা প্রয়োজন। অভিভাবক হিসেবে কাজটি করতে হবে আপনাকে। তার প্রাইভেট পার্টে স্পর্শ করে কখনো আদর করবেন না। তাকে যে কেউ প্রাইভেট পার্টে হাত দিতে পারবে না শিশুর বয়স পাঁচ বছর হলে সেকথাও বুঝিয়ে বলুন।
অনুমতি নিন: সে শিশু হলেও তার থেকে অনুমতি নেওয়ার অভ্যাস করুন। এতে সে অনুমতির গুরুত্ব শিখবে। গোসল কিংবা পোশাক পরিবর্তন করানোর সময় অবশ্যই তাকে স্পর্শ করার আগে অবশ্যই তার অনুমতি নিন। এতে সে অনুমতি ছাড়া যে প্রাইভেট পার্টে হাত দেওয়া যায় না এটি বুঝতে শিখবে।
শিশুর কথাকে গুরুত্ব দিন: হয়তো শিশু আপনাকে এসে জানাল কেউ তার শরীর ছুঁয়েছে। এটা হেসে বা তাচ্ছিল্যের সাথে উড়িয়ে দেবেন না। থেরাপিস্টরা মনে করেন যে, কোনো ছোঁয়া যদি শিশুর অস্বস্তির কারণ হয়, তাহলে সেটা অবশ্যই ব্যাড টাচ।
চিৎকার করতে শেখান: যেকোনো নেতিবাচক বা খারাপ আচরণ পেলে তাকে চিৎকার করতে শেখান। কারও স্পর্শ ভালো না লাগলে যেন সে সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার শুরু করে। হতে পারে তা যে কারও স্পর্শ। যেকোনো পরিস্থিতিতে তাকে নিজেকে রক্ষা করার বুদ্ধি শেখাতে হবে। তবে খেয়াল রাখবেন, এসব শেখাতে গিয়ে যেন শিশুর মনের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
কেউ খারাপ স্পর্শ করলে শিশুকে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে, সেগুলো তাকে গুছিয়ে বলুন। তাকে বোঝান, তুমি খারাপ কিছু করনি। যে তোমার সাথে এমন করছে, সেই বরং খারাপ। কেউ যদি তাকে খারাপভাবে স্পর্শ করে, তবে সে যাকে বিশ্বাস করে, এমন কাউকে ঘটনাটি খুলে বলতে হবে, বুঝিয়ে দিন। বলুন, এমন কোনো ঘটনা গোপন রাখবে না, যা তোমাকে বিব্রত বোধ করায়।