বিয়ে না করেও ঢাকায় প্রায় তিন বছর স্বামী-স্ত্রীর মতো বসবাস করছিলেন আলী নূর বিশ্বাস ও আহিনা খাতুন। সম্প্রতি গ্রামের বাড়িতে এসে অন্য মেয়েকে বিয়ে করেন আলী নূর বিশ্বাস। এ খবর জানতে পেরে ক্ষুব্ধ হন আহিনা খাতুন। ভাড়া বাসায় ঘুমন্ত অবস্থায় বঁটি দিয়ে আলী নূর বিশ্বাসকে কুপিয়ে হত্যা করেন। র্যাবের হাতে ধরা পড়ার পর এই লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন অহিনা খাতুন।
নিহত আলী নূর বিশ্বাস মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার হোগলডাঙ্গা গ্রামের মো. বাহাদুর বিশ্বাসের ছেলে। গত ৩০ জুলাই আশুলিয়ার জিরাবো নামাপাড়া এলাকার দেলোয়ার বেপারীর বাসায় তাকে হত্যা করা হয়। সেখানেই স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতেন আলী নূর ও আহিনা খাতুন।
বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) দিবাগত রাতে হোগলডাঙ্গা গ্রামের কবরস্থানে আলী নূরকে দাফন করা হয়।
নিহতের পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়রা জানান, আলী নূর কোরবানির ঈদে বাড়িতে বেড়াতে এলে শ্রীপুর উপজেলার খামারপাড়া গ্রামের এক মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। আলী নূর স্ত্রীকে শ্বশুরবাড়ি রেখে ঢাকার সাভারে অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছিলেন।
নিহত আলী নূরের বড় ভাই নূর আলম বলেন, আমার ছোট ভাই আলী নূর কোরবানির ঈদে বাড়ি আসলে পারিবারিকভাবে তাকে আমরা গত ১৪ জুলাই বিয়ে দেই। তার আগে ভাইকে আমরা জিজ্ঞাসা করেছি তার কোনো পছন্দ আছে কিনা। সে আমাদের জানায় তার কোনো পছন্দ নেই। তাই আত্মীয়-স্বজন মিলে শ্রীপুর উপজেলার খামারপাড়া গ্রামে তাকে বিয়ে দেই। এখনো নতুন বউকে আমরা ঘরে তুলতে পারিনি। তার আগেই আমার ভাই হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে।
তিনি বলেন, পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে আলী নূর সবার ছোট। মা মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। বাবা এখনো বেঁচে আছেন। আলী নূরের মৃত্যুতে বাবা ভেঙে পড়েছেন। কারও সঙ্গে তেমন কথা বলছেন না। সব সময় ভাইয়ের কথা জানতে চাইছেন।
নূর আলম আরও বলেন, আমার ছোট ভাই ২০১৪ সাল থেকে ঢাকার চাকরি করে। সম্প্রতি সে চাকরি ছেড়ে অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছিল। আমরা জানতে পেরেছি ঢাকায় থাকাকালীন অবস্থায় আসামি আহিনা খাতুনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরে তাদের মধ্যে গভীর সখ্যতা গড়ে ওঠে। সস্পর্কের একপর্যায়ে দুইজন স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে সাভারের জিরাবো বাজার এলাকায় মা হোটেলের পাশে একটি টিনশেডের ভাড়া বাড়িতে বসবাস শুরু করে।
বিয়ের পর গত ১৭ জুলাই ঢাকায় ফিরে আলী নূর আবার আহিনার সঙ্গে বসবাস করতে থাকে। এরই মধ্যে আলী নূরের বিয়ের কথা জানতে পেরে আহিনার মনে ক্রোধ এবং প্রতিহিংসার সৃষ্টি হয়। গত ৩০ জুলাই রাতে খাবার শেষে উভয়েই ঘুমিয়ে পড়ে। আহিনা ভোররাতে আলী নূরকে ঘুমন্ত অবস্থায় বঁটি দিয়ে মাথা, গলা এবং বুকে কুপিয়ে হত্যা করে। পরে আশুলিয়া থানায় হত্যা মামলা করলে র্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে। এরপর র্যাবের হাতে ধরা পড়ে আহিনা খাতুন।
এদিকে র্যাব-৪ এর কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রাকিব মামুদ খান জানান, আসামি আহিনার সঙ্গে নীলফামারীর মিজানুর রহমানের প্রথম বিয়ে হয়। পারিবারিক কলহের কারণে বিয়ের দেড় বছর পর তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। ওই পরিবারে তার একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। পরবর্তীতে জীবিকার তাগিদে আশুলিয়ার একটি গার্মেন্টসে চাকরির সুবাদে আলী নূরের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেখান থেকে শুরু হয় তাদের সম্পর্ক। শেষ পর্যন্ত আলী নূরকে হত্যা করেন আহিনা।
এ ঘটনায় আলী নূরের বাবা মো. বাহাদুর আলী বলেন, আহিনা খাতুন নামে একজন বিবাহিত নারীর সঙ্গে আমার ছেলের বিয়ে হয়েছে তা আমরা কেউ জানতাম না। সেও কোনো দিন আমাদের বিষয়টি বলেনি। তাই তাকে পারিবারিকভাবে বিয়ে করিয়েছি। সম্প্রতি র্যাবের হাতে আমার ছেলের হত্যাকারী আটক হয়েছে। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে ছেলের হত্যাকারীর বিচার দাবি করছি।