প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঘাতক নূর চৌধুরী ও বজলুল হুদাকে উদ্ধারকারী হিসেবে ভেবেছিল শেখ কামাল। কিন্তু তারা প্রথমেই কামালকে গুলি করে হত্যা করে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠপুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার (৫ আগস্ট) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
১৫ আগস্টে শেখ কামালের হত্যার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব নেন জেনারেল ওসমানী। তার এডিসি হিসেবে শেখ কামালকে নিয়োগ দেয়া হয়। কামাল এবং খুনি নূর চৌধুরী একই সঙ্গে ওসমানীর এডিসি ছিল। নিয়তির কী নিষ্ঠুর পরিহাস! ১৫ আগস্ট এ নূরই প্রথম আমাদের বাড়িতে আসে। কারণ কর্নেল ফারুকের নেতৃত্বে যে গ্রুপটা আমাদের বাড়িতে আক্রমণ করে সেখানে কর্নেল নূর, হুদা প্রবেশ করেছিল। কামাল কিছুটা ধোঁকায় পড়ে গিয়েছিল তাকে দেখে। ভেবেছিল তারা উদ্ধার করতে এসেছে। তারা যে ঘাতক হয়ে এসেছিল সেটা জানতো না। প্রথম তারা কামালকে গুলি করে। এরপর একে একে পরিবারের সব সদস্যকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে।”
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কামাল শুধু একজন ক্রীড়াবিদই নয়, রাজনৈতিক নেতা হিসেবেও তার দূরদর্শিতা ছিল। ঢাকা কলেজ থেকে পাস করে কামাল যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী ছিল। আমাদের বাসায় সব সময় মানুষ ভরা থাকতো। তাই পরীক্ষার আগে কোনো বন্ধুর বাসায় গিয়ে পড়াশোনা শেষ করতো, যাতে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কামালের জন্মের পরপরই আব্বা গ্রেফতার হয়ে যান। ১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত আব্বা বন্দি ছিলেন। আমি যেমন আব্বা বলে ছুটে যেতাম, ও (কামাল) ঠিক ওইভাবে যেতে পারতো না। তবে আব্বা বের হওয়ার পর ওকে যথেষ্ট আদর করতেন। তারপরও বোঝা যেতো ছোটবেলায় বাবার আদর থেকে বঞ্চিত ছিল। সেজন্য আব্বা ওকে খুব বেশি আদর করতেন। যে সময়টা দিতে পারেননি, সেটা দেয়ার চেষ্টা করতেন। আব্বা যখন কারাগারে ছিলেন, সে সময় মায়ের পাশে থেকে সংসারের অনেক দায়িত্ব পালন করতেন। খুবই দায়িত্বশীল ছিলো। পাশাপাশি আমার দাদা-দাদি ও সবার প্রতি তার দায়িত্ববোধ ছিল। যেটা খুবই বিরল, এ রকম একটা অল্প বয়সী ছেলের মাঝে এরকম দায়িত্ববোধ! এ জিনিসটা তার মাঝে বেশি ছিল।’
অনুষ্ঠানে শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার-২০২২ দেয়া হয়। সাত ক্যাটাগরিতে মোট নয় ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব ও দুই প্রতিষ্ঠানকে এ পুরস্কার দেয়া হয়। পুরস্কার হিসেবে ১ লাখ টাকা, ক্রেস্ট ও সম্মাননা সনদ দেয়া হয়।
উদীয়মান ক্রীড়াবিদের পুরস্কার পেয়েছেন ক্রিকেটার শরীফুল ইসলাম ও আর্চার দিয়া সিদ্দিকী। ক্রীড়াবিদের তালিকায় আরও আছেন ক্রিকেটার লিটন দাস, শ্যুটার আবদুল্লা হেল বাকী ও ভারোত্তোলক সাবেরা সুলতানা।
সংগঠক হিসেবে এবার পুরস্কার পেয়েছেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সাইদুর রহমান প্যাটেল ও জাতীয় মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাজমা শামীম।
আজীবন সম্মাননা দেয়া হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ও দেশের বর্ষীয়ান ক্রীড়া সংগঠক হারুনুর রশিদকে। এছাড়াও পুরস্কার পেয়েছেন বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন।
পৃষ্ঠপোষক হিসেবে শেখ কামাল ক্রীড়া পুরস্কার দেয়া হয় গ্রিন ডেলটা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডকে। এছাড়াও প্রথমবারের মতো শেখ কামাল ক্রীড়া পুরস্কার দেয়া হয় ক্রীড়া সাংবাদিক কাশিনাথ বসাককে।