ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় সাত মাস আগে সাম্মী নামের শিশুটি জন্ম নেয় এক গরীব বাবার ঘরে। শাম্মীসহ সে পরিবারে সদস্য ৬ জন। ছয় সদস্যের পরিবারে সবসময়ই লেগে থাকে অভাব অনটন। আর অভাবের কারণে ৭ মাস বয়সী শিশু কন্যা সাম্মীকে স্থানীয় বাজারে দত্তক অথবা বিক্রি করতে গেলে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। তখন এলাকাবাসীর বিক্রি না করার পরামর্শে শিশু সাম্মীকে বাড়ি ফেরত নিয়ে আসেন বাবা মতিউর রহমান মতি।
মতিউর রহমান (৪৬) উপজেলার ৪নং বড় পলাশবাড়ি ইউনিয়নের জিয়াবাড়ি দক্ষিণ দুয়ারী গ্রামের বাসিন্দা।
তিনি একজন দিনমজুর। সারাদিন মাঠে কাজ করে যা আয় করেন তা দিয়ে কোনমতে সংসার চলে। তিন মেয়ের লেখাপড়ার খরচ ও ৭ মাস বয়সী শিশুকন্যা শাম্মীর খরচ জোগাতে পারছিলেন না তিনি। তাই বাধ্য হয়ে গত রোববার তার ৭ মাসের শিশু কন্যাকে বিক্রি ও দত্তক দেয়ার উদ্দেশ্যে নিয়ে যান স্থানীয় এক বাজারে।
পরে স্থানীয়রা তাকে ও তার শিশু কন্যাকে বাড়িতে ফেরত আনেন। বড় মেয়ে পারুল (১৪) স্থানীয় এক স্কুলে নবম শ্রেণিতে, মেজো মেয়ে সুমাইয়া আক্তার (৯) ৩য় শ্রেণিতে, সেজো মেয়ে সুরাইয়া আক্তার (৬) বাড়ির পাশে একটি মাদরাসায় লেখাপড়া করেন।
স্থানীয়রা জানান, মতিউর খুবই হত-দরিদ্র। সন্তানদের ঠিকমতো খাবার ও ভরণপোষণ কাপড়চোপড় কিনে দিতে পারে না। কোন কোন দিন একবেলা খায় তো আরেক বেলা না খেয়ে থাকে। মা-বাবা কখনোই চায় না তাদের সন্তানকে বিক্রি বা দত্তক দিতে। কিন্তু অভাবের সংসার তাদের বাধ্য করেছে।
সরেজমিনে গেলে জানা যায়, ২৬ বছর আগে মতিউর রহমানের সঙ্গে নাজমা বেগমের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পরে তাদের সংসারে জন্ম নেয় এক কন্যা সন্তান। এভাবে ছেলে সন্তানের আশায় তাদের সংসারে একে একে জন্ম নেয় ৪ কন্যা সন্তান। এখন সেই চার কন্যা সন্তানসহ মোট ছয়-জনের সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। তাই বাধ্য হয়ে ৭ মাসের কন্যা সন্তান সাম্মীকে বিক্রয় ও দত্তক দেয়ার জন্য বাজারে নিয়ে গেছিলেন তিনি। পরে এলাকাবাসী শিশুকন্যাসহ মতিউর রহমানকে বাড়ি ফিরিয়ে আনেন।
প্রতিবেশী রসনা বেগম, রমজান আলী, মুনসুর, নাজমুল, জাহিদসহ আরও অনেকেই বলেন, মতিউর চার কন্যা সন্তানকে নিয়ে কষ্টে দিন পার করেন। সারাদিন কাজ করে যা পায় তা দিয়ে সংসার চলে না। তার কোন জমি-জায়গা নাই। অনেক সময় তারা না খেয়ে থাকেন। সরকারিভাবে যদি সে সহযোগিতা পায় তাহলে চার মেয়েকে নিয়ে সংসার চালাতে পারবে নয়তো তার সন্তানকে দত্তক দিতে বাধ্য হবেন।
বাবা মতিউর রহমান (মতি) বলেন, আমার কোন ছেলে নাই। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আমি। দিনমজুরি দিয়ে যা আয় হয় সেটা দিয়ে তিন বেলার খাবারই জুটেনা। তাই আমার ছোট মেয়ে সাম্মীকে বিক্রয় ও দত্তক দিতে বাজারে গিয়েছিলাম। কিন্তু এলাকার অনেকে তা করতে না দিয়ে আমাকে বাড়িতে নিয়ে আসে। সরকারিভাবে যদি আমাকে সহযোগিতা করা হয় তাহলে আমি আমার চার কন্যা সন্তানকে নিয়ে সংসার চালিয়ে যেতে পারবো।
মা নাজমা বেগম (৩৯) বলেন, আমার স্বামীর তেমন আয় রোজগার না থাকায় ঠিকমত সংসার চালাতে পারে না। একটা মেয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ছে। কিছুদিন পর তাকে বিয়ে দিতে হবে। আমাদের কোন সম্পদ নেই। যে সেগুলো বিক্রি করে মেয়েদের পড়াশোনা করিয়ে বিয়ে দিব।
তাই আমার স্বামী আমার সব থেকে ছোট ৭ মাসের কন্যা সন্তানকে মানুষের কাছে বিক্রি দেয়ার জন্য বাজারে নিয়ে গিয়েছিল।
তবে মতিউরকে ইউনিয়ন পরিষদ ও সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতার ব্যবস্থা করে দিবেন বলে জনান ৪নং বড় পলাশবাড়ি ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, মতি গরিব মানুষ। তার কোন জমি-জায়গা নাই। দিন মজুরি দিয়ে যা আয় হয় তা দিয়ে সন্তানদের মুখে খাবার দেন। অভাব অনটনের জন্য তার ৭ মাসের কন্যাকে বাজারে বিক্রি করতে যান। এটা খুবই দুঃখজনক। তবে মতিকে কিভাবে সাহায্য সহোযোগীতা করা যায় তার চেষ্টা আমি করব।
এবিষয়ে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহা. যোবায়ের হোসেন এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ওই দরিদ্র পিতা আমার সাথে যোগাযোগ করলে তার জন্য সহযোগিতার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।