চার গণতন্ত্রকর্মীর ফাঁসি কার্যকরের প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল মিয়ানমার। সোমবার (২৫ জুলাই) ইয়াঙ্গুনসহ দেশটির প্রধান শহরগুলোতে বিক্ষোভ করেন সাধারণ মানুষ। বিশ্বজুড়েও বইছে নিন্দার ঝড়। ক্ষোভ জানিয়েছে জাতিসংঘ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এ ছাড়া এ ঘটনার জেরে মিয়ানমারের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। খবর রয়টার্স।
সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার দায়ে মিয়ানমারে গণতন্ত্রপন্থি কর্মীসহ ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, সোমবার (২৫ জুলাই) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এ দেশটি তিন দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো বিচার বিভাগীয় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করল। এর প্রতিবাদে হাতে ব্যানার, প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্লোগানে উত্তাল মিয়ানমারের রাজধানী ইয়াংগুন। ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন বিক্ষোভকারীরা।
জান্তাবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ায় চার কারাবন্দির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করায় সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে এ প্রতিবাদ। ফাঁসি কার্যকর করা দুজন মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি দলের সাবেক আইনপ্রনেতা ও একজন অধিকারকর্মী। গত জানুয়ারি মাসে তাদের বিরুদ্ধে অভিয়োগ দায়েরের পর দেশটির আদালত তাদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়। ক্লোজ ডোর ট্রায়ালে তাদের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়।
জানা যায়, তাদের বিরুদ্ধে গত বছর অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মিলিশিয়াদের সাহায্য করার অভিযোগ আনা হয়েছিল। সোমবার (২৫ জুলাই) এ ঘটনাকে কেন্দ্র কোরে দেশটির রাজধানীসহ প্রধান শহরগুলোতে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় বিক্ষোভকারীদের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে বলেন, তারা কখনোই ভয়ে পিছপা হবেন না। আন্দোলনের এক পর্যায়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় তারা। এ ঘটনার পরপরই নিন্দার ঝড় উঠে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
এ ন্যক্কারজনক ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্ষুব্ধ যুক্তরাষ্ট্রও। এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র মিয়ানমারের সঙ্গে সব ধরনের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড বন্ধের হুঁশিয়ারি দেন। এমনকি দেশটির কাছে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি বন্ধে এবং ঋণসহায়তা দিতে অন্যান্য দেশের প্রতিও আহ্বানও জানান তিনি।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র বলেন, আমরা আমাদের সব অংশীদারদের অনুরোধ করছি বার্মার এই নৃশংস ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাদের ওপর রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক চাপ বাড়াতে। বার্মার যে সব লোকজন নিজেদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন, যারা গণতন্ত্রের দিকে ফিরে আসতে চায় এ ঘটনা তাদের সবার গালে চড় মারার মতোই।
জাতিসংঘে মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতিবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি টম অ্যান্ড্রু বলেন, ''মিয়ানমারের দেশপ্রেমিক এবং মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের চ্যাম্পিয়নদেরকে ফাঁসি কার্যকরের ঘটনায় তিনি ক্ষুব্ধ ও বিধ্বস্ত। যারা জান্তা সরকারের নৃশংসতার শিকার হয়েছেন, তাদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
নিন্দনীয় এ ঘটনায় মিয়ানমারকে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে অ্যামিনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল
জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োশিমাসা হায়াশি জান্তা সরকারের এই পদক্ষেপকে গভীর উদ্বেগের বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন এ ঘটনাটি দেশটিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে আরও আলাদা করে ফেলবে।
রাজশাহীর সময়/এম