আল্লাহ মুসলমানের প্রতি কত মহান! তিনি মুসলমানকে করেছেন শ্রেষ্ঠ উম্মত। দুনিয়া ও পরকালে তিনি তাদের সাহায্য করবেন। মুসলমানরা অবিশ্বাসীদের দ্বারা সামান্য কষ্ট পেলে কিংবা সাময়িক নির্যাতন ভোগ করলেও তারা মুসলমানদের বড় কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। পক্ষান্তরে যারা মুসলমানের বিরোধিতা করে কিংবা কষ্ট দেয় আল্লাহ তাআলা তাদের সাহায্য করবেন না। মহান আল্লাহ কোরআনুল কারিমে সুস্পষ্টভাবে এমনই ঘোষণা দিয়েছেন-
لَنۡ یَّضُرُّوۡکُمۡ اِلَّاۤ اَذًی ؕ وَ اِنۡ یُّقَاتِلُوۡکُمۡ یُوَلُّوۡکُمُ الۡاَدۡبَارَ ۟ ثُمَّ لَا یُنۡصَرُوۡنَ
তারা (ইয়াহুদি/অবিশ্বাসীরা) তোমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না (সাময়িক সামান্য) কষ্ট দেওয়া ছাড়া। আর যদি তারা তোমাদের সঙ্গে লড়াই করে; তবে তারা তোমাদের পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে (পেছনে ফেলে রেখে) পালাবে; তারপর তাদের সাহায্য করা হবে না।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১১১)
এ আয়াতে মহান আল্লাহ আগের আয়াতের ধারাবাহিকতা তুলে ধরেছেন। আহলে কিতাব তথা ইয়াহুদি-খ্রিস্টানরা মুসলমানদের শত্রুতা ও ধর্মীয় ক্ষতি করার অপচেষ্টায় নিয়োজিত থাকার বর্ণনা করা হয়েছিল। আলোচ্য আয়াতেও মুসলমানদের দুনিয়ার ক্ষতি সাধরনের অপচেষ্টার কথা ওঠে এসেছে।
এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, তারা (আহলে কিতাব- ইয়াহুদি/খ্রিস্টান) তোমাদের (মৌখিক ভালো-মন্দ বলে অন্তরে) সামান্য দুঃখ-কষ্ট দেওয়া ছাড়া কখনো কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। যদি তারা (এর বেশি ক্ষতি করার দুঃসাহস করে এবং) তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে, তবে তারা পিঠ দেখিয়ে পালিয়ে যাবে। কোনো দিক থেকেই তারা সাহায্য পাবে না।
ইসলামের ইতিহাসের ঘটনাগুলো সাক্ষ্য দেয় যে-
আয়াতে أَذًى (কষ্ট দেওয়া) বলতে মৌখিকভাবে মিথ্যা অপবাদ রটানোকে বোঝানো হয়েছে। মিথ্যা অপবাদ দ্বারা সাময়িকভাবে অবশ্যই কষ্ট হয়। তবে কোরআনের ঘোষণা যুদ্ধের ময়দানে মুসলমানদের পরাজিত করতে পারবে না। হয়েছিলও তা-ই। ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা অপবাদ আরোপের কারণে ইয়াহুদিদের মদিনা থেকেও বের হতে হয়েছিলো। এরপর খায়বার জয় করলে সেখান থেকেও বের হতে হয়েছিলো তাদের। অনুরূপভাবে শাম (সিরিয়া) অঞ্চলে খ্রিষ্টানরা মুসলিমদের হাতে পরাজিত হয়েছিলো। পরে ক্রুসেড যুদ্ধে খ্রিষ্টানরা এর প্রতিশোধ গ্রহণ করার প্রচেষ্টা চালায় এবং বায়তুল মুক্বাদ্দাস দখল করে নেয়। কিন্তু তা বেশি দিন টিকেনি। সুলতান সালাহুদ্দীন আইউবি ৯০ বছর পর পুনরায় তা ফিরিয়ে আনেন।
যদিও বর্তমান সময়ে আবারো ইসলাম ও মুসলমানদের দ্বীন ও ঈমানি শত্রু ইয়াহুদি-খ্রিস্টানদের সম্মিলিত চক্রান্ত ও প্রচেষ্টায় প্রথম কেবলা বায়তুল মুকাদ্দাস মুসলমানদের হাতছাড়া হয়ে গেছে।
হাদিসের দিকনির্দেশনা মোতাবেক অতি দ্রুতই এমন সময় আসবে যে, এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে; বিশেষ করে হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের আগমনের পর খ্রিষ্টবাদের পরিসমাপ্তি ঘটবে এবং ইসলামের বিজয়ও সুনিশ্চিত হবে।’ (ইবনে কাসির)
উল্লেখ্য, কোরআনের এ ভবিষ্যৎ বাণী অক্ষরে অক্ষরে পূর্ণ হয়েছে। আয়াতের লক্ষ্য সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে নবুয়তের জামানায় কোনো ক্ষেত্রেই মোকাবেলায় বিরুদ্ধবাদীরা জয়লাভ করতে পারেনি। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, মদিনার ইয়াহুদি গোত্রগুলো সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির অপপ্রয়াসে লিপ্ত ছিল, বিশেষ করে তারা পরিণামে মুসলমানদের হাতে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়েছিল। এর মধ্যে কিছু লোক নিহত হয়েছিল। তাদের কিছু সংখ্যক নির্বাসিত হয়েছিল এবং কিছু সংখ্যকের ওপর ধার্য করা হয়েছিল জিজিয়া কর। (মারেফুল কোরআন)
এ আয়াতে এসব আহলে কিতাবদের বোঝানো হয়েছে, যারা ইসলাম গ্রহণ করেনি বরং ইসলাম ও মুসলমানদের নানাভাবে কষ্ট দিয়েছে। আর তারা কোনোভাবেই আল্লাহর সাহায্য পাবে না বলেই কোরআনে এ ঘোষণা এসেছে।
আল্লাহ তাআলা মানুষকে কোরআনের সত্যতা বোঝার তাওফিক দান করুন। কোরআনের হেদায়েত গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। কোরআন-হাদিসের দিকনির্দেশনা মোতাবেক নিজেদের জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
রাজশাহীর সময় / এফ কে