গর্ভপাতের অধিকার সংক্রান্ত চলমান আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ১৭ কংগ্রেসওম্যানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ১৯ জুলাই মঙ্গলবার ওয়াশিংটন ডিসিতে সুপ্রিম কোর্টের সামনে সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানাতে গেলে নাগরিক আইন লঙ্ঘনের জন্য ১৭ কংগ্রেসওম্যানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা গর্ভপাতের অধিকার নিয়ে নাগরিক আন্দোলনের কর্মিদের সাথে সংহতি জানাতে তারা প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত হয়েছিলেন। গ্রেপ্তারকৃত কংগ্রেসওম্যানরা সকলেই ডেমক্র্যাটিক পার্টির সদস্য।
নিউ ইয়র্কের প্রভাবশালী কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও কার্টেজসহ ক্যারলিন মেলোনি নিদিয়া ভেলেস্কুয়েজ, ইলহান ওমরসহ উদারনৈতিক নেতৃবৃন্দ গ্রেপ্তারের শিকার হয়েছেন। যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টির অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে আটক কংগ্রেসওম্যানদের বিরুদ্ধে।
কয়েক ঘণ্টা পর জামিনে মুক্তির পর এক টুইট বার্তায় কংগ্রেসওম্যান মেলোনি বলেন, এখন সময় হচ্ছে ঘুরে দাঁড়ানোর। সরব হতে হবে নারীর অধিকারের প্রশ্নে। ন্যায় বিচারের প্রশ্নে আপসকামিতার অবকাশ থাকতে পারে না। আমরা নারীর ন্যায্য অধিকার সুসংহত রাখতে চাই। অপরদিকে কংগ্রেসওম্যান নিদিয়া বলেন, এখন সময় হচ্ছে ভালোর জন্য কিছুটা ঝামেলা সহ্য করার। দমন-পীড়নে আমরা থামব না।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আরও ছিলেন ক্যালিফোর্নিয়ার কংগ্রেসওম্যান জ্যাকি স্পিয়ার এবং বারবারা লী, ম্যাসেচুসেট্স’র আইয়ানা প্রেসলী, মিনেসোটার ইলহান ওমর, মিজৌরির কোরি বুশ এবং টেক্সাসের ভেরনিকা ইস্কোবার। কংগ্রেসওম্যান প্রেসলী বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের একচোখা সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে অহিংস আন্দোলন শুরু করেছি তৃণমূলের ক্ষুব্ধ জনতার সাথে। আইন অমান্যের এ আন্দোলন থেকে আমরা পিছু হটব ন’।'
গর্ভপাতের ইস্যু নিয়ে নিউইয়র্কে নারীদের এক প্রতিবাদ সভায় কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও কার্টেজ খোলা রাস্তায় দাড়িয়ে বলেন, তিনি ১৫ বছর বয়সে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন । তখন তাঁর পাশে সাহায্য করার মত কেউ ছিল না । তিনি তখন নিউইয়র্কের হাসপাতালের সাহায্য পেয়েছিলেন বলেই ধর্ষণের ধাক্কা সামলে উঠতে পেরেছিলেন। গর্ভপাত নিষদ্ধের আইনকে অন্যায্য উল্লেখ করে এ আইনের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করে জানিয়ে দেন ওকাসিও কার্টেজ । তিনি আরও বলেন, গর্ভপাত নিষিদ্ধ আইনের ফলে আধুনিক বিশ্বে নারীদের অধিকার হরণ তো করা হয়েছেই, সাথে ধর্ষকের সন্তান পালনে নারীদের বাধ্য করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, এ মাসের শুরুতে প্রতিনিধি পরিষদে গর্ভপাতের সুযোগ অবারিত রাখার অভিপ্রায়ে একটি বিল পাস হলেও সিনেটে রিপাবলিকানদের সমর্থনের সঙ্কটে সেটি আইনে পরিণত হওয়া নিয়ে সমস্যা রয়েই গেছে। গর্ভপাতের অধিকার রক্ষিত করে ৫০ বছর আগের একটি বিধি এ বছরের ২২ জুন নাকচ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট আদালত। এরপর সারা আমেরিকায় আন্দোলন চলছে। আন্দোলনের পরিপূরক হিসেবে নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে একটি বিল উত্থাপন করেছিলেন কাউন্সিলওম্যান শাহানা হানিফ। গত সপ্তাহে তা পাস হয়েছে। এর ফলে নিউইয়র্ক সিটিতে গর্ভপাতের সুযোগ বহাল থাকবে। এমনকি অন্য স্টেটের নারীরাও নিউইয়র্ক সিটিতে এসে গর্ভপাত করতে পারবেন। কানেকটিকাট স্টেটেও এমন একটি বিধি তৈরি হয়েছে।
এদিকে মার্কিন জনগণ যাতে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর গর্ভপাতের অধিকার থেকে বঞ্চিত না হন, সে জন্য নির্বাহী আদেশে সই করেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর নিজের দলের মধ্যেই তীব্র চাপে পড়েছেন জো বাইডেন। তিনি বলেন, 'আমরা যা দেখেছি, সেটা রাজনৈতিক ক্ষমতার আস্ফালন। কোনো সংবিধানসম্মত রায় নয়।' হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন , 'স্বাধীনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার কেড়ে নিতে রিপাবলিকান দলের চরমপন্থী সদস্যদের তালে তাল মিলিয়ে কাজ করে চলা এই লাগামহীন সুপ্রিম কোর্টকে আমরা মেনে নিতে পারি না।'
নির্বাহী আদেশের পরিসর খুব বেশি নয়। কারণ মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, আমেরিকার প্রদেশগুলো চাইলে নিজেদের মতো করে গর্ভপাত সংক্রান্ত আইন তৈরি করে নিতে পারে। সেক্ষেত্রে বাইডেনের সই করা এই অর্ডারের খুব বেশি গুরুত্ব থাকবে না। তবু এর মাধ্যমে দলের অবস্থানগত বার্তা স্পষ্ট করে দেওয়া যাবে। সে কারণেই সম্ভবত এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে যতই সমালোচনা হোক না কেন, এই মুহূর্তে তাতে কোনও রদবদলের কথা ভাবছেন না বাইডেন। সেটি সদস্যসংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাবেও মত নেই হোয়াইট হাউসের। বরং আমজনতার কাছে বাইডেনের বার্তা, গর্ভপাতের অধিকার সমর্থন করেন এমন সিনেটরই আরও বেশি সংখ্যায় নির্বাচিত হয়ে আসা উচিত। তাঁর দলের অন্যান্য সদস্যদের কথায়, সুপ্রিম কোর্টের রায় এভাবে একটা নির্বাহী আদেশ দিয়ে শোধরানো যাবে না। তবু প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন অনেকে। বহু ক্ষেত্রেই গর্ভপাত নারীস্বাস্থ্য ও অধিকারের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
রাজশাহীর সময়/এ