করোনাভাইরাস পরীক্ষা নিয়ে জালিয়াতির মামলায় জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা চৌধুরী ও প্রতিষ্ঠানটির সিইও আরিফুল হক চৌধুরীসহ আট আসামির ১১ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেন মঙ্গলবার মামলাটির রায় ঘোষণা করবেন।
রায় ঘোষণার আগে আসামিদের সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কাশিমপুর কারাগার থেকে আদালতে এনে হাজতখানায় রাখা হয়। এরপর দুপুরে তাদের উপস্থিতিতে রায় ঘোষণা করা হয়।
সাবরিনা ও আরিফুল ছাড়াও সাজা পাওয়া অন্য আসামিরা হলেন- আরিফুলের বোন জেবুন্নেছা রিমা, সাবেক কর্মচারী হুমায়ুন কবির হিমু ও তার স্ত্রী তানজিলা পাটোয়ারী, জেকেজির কোঅর্ডিনেটর আবু সাঈদ চৌধুরী, জেকেজির কর্মচারী বিপুল দাস ও শফিকুল ইসলাম রোমিও।
রায়ে বিচারক বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। এ অপরাধে তাদের শাস্তি হওয়া উচিত।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে ২০২০ সালের মার্চে স্বাস্থ্য অধিদফতরে আবেদন করে পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহের দায়িত্ব নিয়েছিল জেকেজি হেলথকেয়ার।
কিন্তু জুনের শেষ দিকে অভিযোগ আসে, সরকারের কাছ থেকে বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহের অনুমতি নিয়ে বুকিং বিডি ও হেলথকেয়ার নামে দুটি সাইটের মাধ্যমে টাকা নিচ্ছিল ওভাল গ্রুপের প্রতিষ্ঠানটি। নমুনা পরীক্ষা না করে রোগীদের ভুয়া সনদও তারা দিচ্ছিল।
কামাল হোসেন নামে এক ব্যক্তির অভিযোগের সত্যতা পেয়ে গত ২২ জুন জেকেজি হেলথ কেয়ারের সাবেক কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর হিরু ও তার স্ত্রী তানজীলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পরে তাদের কম্পিউটার থেকে চারজন প্রবাসীরসহ ৪৩ জনের নামে তৈরি করা করোনাভাইরাস পরীক্ষার ভুয়া সনদ পাওয়া যায়।
পরদিন কামাল হোসেন বাদী হয়ে ওই দুইজনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় সরকারি নাম ব্যবহার করে টাকা আত্মসাৎ, কাজে অবহেলার মাধ্যমে জীবন বিপন্নকারী রোগের সংক্রামণ বিস্তারের ঝুঁকি তৈরি, করোনাভাইরাসের সনদ জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়।
হুমায়ুন ও তার স্ত্রীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে তেজগাঁও থানা পুলিশ জেকেজির সিইও আরিফুল চৌধুরী, তার বোন জেবুন্নেছাসহ সাতজনকে গ্রেফতার করে।
পরে ১২ জুলাই জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের চিকিৎসক ডা. সাবরিনাকেও গ্রেফতার করা হয়। সরকারি চাকরিতে থাকা অবস্থায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জেকেজির সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
গত ১১ মে আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে আসামিরা নিজেদের ‘নির্দোষ’ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন। দুই বছর পর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে গত ২৯ জুন মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসে।