চিন্তামুক্ত থাকার আমল


ধর্ম ডেস্ক : , আপডেট করা হয়েছে : 18-07-2022

চিন্তামুক্ত থাকার আমল

হতাশা ও দুঃশ্চিন্তার কারণেই মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। চিন্তামুক্ত থাকার মাধ্যমেই মানসিক চাপ থেকে বাঁচার উপায়। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে কোনো বিষয়ে চিন্তামুক্ত থাকতে মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতেন। এটি হতে পারে উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য বিশেষ আমল। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চিন্তা ও চাপমুক্ত থাকতে কী আমল করতেন এবং দোয়া পড়তেন?

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে কোনো চিন্তা বা চাপমুক্ত থাকতে আল্লাহর কাছে এভাবে বেশি বেশি সাহায্য চাইতেন-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَ أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَ أَعُوذُ بِكَ مِنَ ضَلَعِ الدَّيْنِ، وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আউযু বিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউযু বিকা মিন দ্বালা’য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)

অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে আপনার আশ্রয় চাই, অপারগতা ও অলসতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই, কৃপনতা ও ভীরুতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই আর ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকেও আপনার আশ্রয় চাই।

চিন্তামুক্ত থাকার আমল

যে কোনো মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকতে নিয়মিত যে আমলগুলো করা জরুরি। তাহলো-

১. নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত

কুরআনুল কারিম তেলাওয়াত করা। কুরআন তেলাওয়াত মানুষের মনকে প্রফুল্ল করে তোলে। কুরআনের তেলাওয়াত ও অধ্যয়ন মানুষকে দুনিয়ার সব দুঃশ্চিন্তা ও হতাশামুক্ত রাখে।

২.নির্ধারিত সময়ে নামাজ পড়া

নামাজের নির্ধারিত সময়ে যথাযথভাবে নামাজ আদায় করায় হতাশা ও দুঃশ্চিন্তামুক্ত থাকে মন। আর নামাজের মাধ্যমেই বান্দা মহান আল্লাহর সাহায্য লাভে ধন্য হয়। কেননা নামাজ ও ধৈর্যের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার কথা এসেছে এভাবে-

’তোমরা নামাজ ও ধৈর্যের মাধ্যমে আমার সাহায্য প্রার্থনা কর। কিন্তু সে সমস্ত বিনয়ী লোকদের পক্ষেই তা সম্ভব।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৪৫)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও যে কোনো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হলে নামাজ আদায় করতেন।’ (আবু দাউদ) দুঃশ্চিন্তা বিপদ ও হতাশার সময় নামাজের আমলে অভ্যস্ত ছিলেন সাহাবায়ে কেরাম। ছোট থেকে ছোট যে কোনো বিষয়ের জন্যও তারা নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন।

৩ তাওবাহ-ইসতেগফার

যে কোনো বিষয়ে আল্লাহ সাহায্য পাওয়ার অন্যতম উপায় বেশি বেশি তাওবাহ-ইসতেগফার করা। কেননা মানুষকে প্রশান্তি দেওয়ার একচ্ছত্র ক্ষমতা মহান আল্লাহর। তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে তিনি মানুষকে প্রশান্তি দেবেন। কুরআনের বর্ণনায় তা প্রমাণিত।

> ‘অতঃপর বলেছি- তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দেবেন। তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন।’ (সুরা নুহ : আয়াত ১০-১২)

> রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইসতেগফার করবে, আল্লাহ তাআলা তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন। তার সব দুঃশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ (আবু দাউদ)

৪. নিয়মিত দরূদ পড়া

প্রশান্তি পাওয়ার অন্যতম আরেক মাধ্যম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরূদ পড়া। দরূদ পড়লে আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতি রহমত নাজিল করেন। এ রহমত মানুষকে যাবতীয় মানসিক চাপ থেকে মুক্ত রাখে। হাদিসে এসেছে-

হজরত উবাই ইবনে কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি বললাম- হে আল্লাহর রাসুল! আমি আপনার ওপর অনেক বেশি দুরুদ পড়তে চাই। আপনি বলে দেন আমি দুরুদে কতটুকু সময় দেব?

তিনি বললেন- ’তুমি যতটুকু চাও!

আমি বললাম- এক চতুর্থাংশ সময়?

তিনি বললেন, তুমি যতটুকু চাও!

যদি আরো বাড়াও তা তোমার জন্যে ভালো।

আমি বললাম- অর্ধেক সময়?

তিনি বললেন- তুমি যতটুকু সময় পড়তে পার, যদি এর চেয়ে আরো সময় বাড়াও তোমার জন্যে ভালো। আমি বললাম- তাহলে সময়ের দুই তৃতীয়াংশ?

তিনি বললেন- তুমি যতটুকু চাও, যদি আরো বাড়াও তোমার জন্যে ভালো।

আমি বললাম- সম্পূর্ণ সময় আমি আপনার ওপর দুরুদ পড়ায় কাটিয়ে দেব।

তখন তিনি বললেন- তাহলে এখন হতে তোমরা পেরেশানি দূর হওয়ার জন্য দুরুদই যথেষ্ট এবং তোমার পাপের কাফফারার জন্য দুরুদই যথেষ্ট।’ (তিরমিজি)

> হতাশামুক্ত থাকতে দোয়া করা

মানসিক চাপ কমাতে নিয়মিত দোয়া করাও অন্যতম। কারণ হাদিসে দোয়াকে ইবাদতের মূল বলা হয়েছে। দোয়া বা প্রার্থনা করলে, কোনো কিছু চাইলে মহান আল্লাহ খুশি হন। না করলে বরং অসন্তুষ্ট হন। তবে দোয়ার ক্ষেত্রে হাদিসে বর্ণিত দোয়াগুলোকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।


রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি এমন একটি দোয়া সম্পর্কে জানি, কোনো বিপদে পড়া লোক যদি তা পড়ে তবে আল্লাহ তাআলা সে বিপদ দূর করে দেন। সেটি হচ্ছে আমার ভাই (হজরত) ইউনুস (আলাইহিস সালাম)-এর দোয়া। তাহলো-

لَا اِلَهَ اِلَّا اَنْتَ سُبْحَانَكَ اِنِّى كَنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ

উচ্চারণ : ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ্বলিমিন।’

অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই; আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিঃসন্দেহে আমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত।’ (তিরমিজি)


এছাড়াও চিন্তা ও পেরেশানির সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি বিশেষ দোয়া পড়তেন। তাহলো-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَ أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَ أَعُوذُ بِكَ مِنَ ضَلَعِ الدَّيْنِ، وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আউযু বিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউযু বিকা মিন দ্বালা’য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)

অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে আপনার আশ্রয় চাই, অপারগতা ও অলসতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই, কৃপনতা ও ভীরুতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই আর ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকেও আপনার আশ্রয় চাই।

সুতরাং বর্তমান সময়ে  মানসিক চাপে থাকেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কম-বেশি সবাই মানসিক চাপ ও উদ্বেগে থাকে। মনে হয় তা যেন এখন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই উল্লেখিত আমলগুলো অনুসরণ ও অনুকরণের মাধ্যমে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।

আল্লাহ তাআলা মসুলিম উম্মাহসহ সবার ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, কর্মক্ষেত্রের সব মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকতে উল্লেখিত আমলগুলো যথাযথভাবে করার তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনার মাধ্যমে মানসিক চাপমুক্ত জীবন গড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

রাজশাহীর সময় / এম আর


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]