জনগনের সহযোগিতা পেলে নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে রোটারি এক উন্নত ধারায় উপনীত হবে


চট্টগ্রাম প্রতিনিধি , আপডেট করা হয়েছে : 30-06-2022

জনগনের সহযোগিতা পেলে নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে রোটারি এক উন্নত ধারায় উপনীত হবে

জনগণের সহযোগিতা পেলে নারীর ক্ষমতায়ন, পরিবেশ উন্নয়ন ও পরিবেশগত সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে রোটারি ইন্টারন্যাশনাল এক উন্নত ধারায় উপনীত হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন রোটারি জেলা গভর্নর রুহেলা খান চৌধুরী।

বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে ২০২২-২৩ রোটারি বর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান।

তিনি বলেন, ছাত্র/ছাত্রীদের জন্য গ্র্যাজুয়েশন পর্যন্ত শিক্ষা সহায়তা, সুবিধাবঞ্চিত প্রবীণদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও তাদের পরিচর্যায় সেবা ও সহায়তামূলক ভূমিকা রাখা এবং তরুণদের অংশগ্রহণমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের শিক্ষা স্বাস্থ্য ও আত্মউন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করার পরিকল্পনার কথা রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে রোটারির অর্জিত সাফল্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, আমরা সবাই জানি পোলিও একটি মারাত্মক ব্যাধি। পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতি বছর এ রোগে আক্রান্ত হয়ে শারীরিকভাবে অকার্যকর অথবা মৃত্যুবরণ করতেন। এমন সময়ে রোটারি এগিয়ে আসে পৃথিবীর বুক থেকে পোলিও নামক মারাত্মক ব্যাধি নির্মূল করতে। কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা ও স্থানীয় সরকারগুলোর সহযোগিতায় আমরা বর্তমানে বিশ্ব থেকে পোলিও নির্মূলের একেবারে কাছাকাছি চলে এসেছি। শুধুমাত্র আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের কিছু এলাকা ব্যতিত পৃথিবী থেকে পোলিও নির্মূল হয়ে গেছে। এই প্রকল্পে রোটারি আন্তর্জাতিক অদ্যাবধি ২.৬ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। রোটারির এই কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমেরিকার বিল গেটস্ ফাউন্ডেশন স্বপ্রণোদিত হয়ে ২০০ মিলিয়ন ডলারের অধিক অনুদান দিয়েছে। ১৯৪৫ সালে যখন জাতিসংঘের সনদ পত্র তৈরি করা হয় তখন ৪৯ জন রোটারিয়ান উক্ত প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত ছিলেন। বিশ্বশান্তির লক্ষ্যে এই কাজটি রোটারির অবদানের একটি মাইলফলক হিসেবে চিরদিন সমুজ্জ্বল হয়ে থাকবে।

তিনি আরও বলেন, ২০০৮ সালে লসএঞ্জেলস কনভেনশনে রোটারি যে উদ্যোগ নিয়েছিল তাতে ২ লক্ষ ৪২ হাজার ৬২৪টি বই সংগ্রহ করে রোটারি, যিনিস বুকে তাঁর নাম অন্তর্ভূক্ত করে। রোটারির সবচে বড় অর্জন The Rotary Foundation, ১৯১৭ সালে মাত্র ২৬.৫০ ডলার দিয়ে যাত্রা সূচনা করে বর্তমানে সর্বোচ্চ ১ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত প্রতি বছর মানবতার কল্যাণে ব্যয় করা হয় এবং বিশ্বের সর্ববৃহৎ ফাউন্ডেশন হিসেবে স্বীকৃত। বিগত কোভিট মহামারীতেও এই ফাউন্ডেশন বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। Ambassadorial Scholarship  বিশ্বশান্তির প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের লক্ষ্যে পৃথিবীর ৭টি প্রখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি বছর দুই শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীকে অনুন্য ছয় মাস ও সর্বোচ্চ তিন বছরের জন্য বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে এবং পড়াশুনা শেষে উপরোক্ত ব্যক্তিগণ স্ব-স্ব এলাকায় সরকারকে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

রোটারি ইন্টারন্যাশনালের বর্ণিত কার্যক্রমের আলোকে আমাদের দেশেও রোটারি ক্লাবগুলো অনেক উল্লেখযোগ্য জনকল্যাণক কাজ করে যাচ্ছে। তার কিছু উদাহরণ তুলে ধরে এই রোটারিয়ান বলেন, রোটারির প্রয়াত জেলা গভর্ণর আজিজুল হক সাহেবের উদ্যোগে কুমিল্লায় ইন্টিগ্রেটেট ফার্মিং ও ডেভেলপমেন্ট’-এর যে কাজকর্ম শুরু হয় তাহাই পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারের সমবায় আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। জালালাবাদ রোটারি ক্লাবের উদ্যোগে সিলেট শহরস্থ মানিক পীর (র.) রোড-এ ১৯৯৯ খ্রি. একটি প্রতিবন্ধী হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল যাহা বর্তমানে বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রতিবন্ধী হাসপাতাল ও পূণর্বাসন কেন্দ্র হিসাবে সেবা দান করে আসছে। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের শারীরিক প্রতিবন্ধী অসংখ্য রোগী এই হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করছেন এবং ইতোমধ্যে শত শত পঙ্গু রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন। সম্প্রতি এই হাসপাতাল থেকে ভারতের জয়পুর প্রযুক্তিতে কৃত্রিম পা অত্যন্ত স্বল্পমূল্যে তৈরি ও সংযোজন করা হচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া তিতাস রোটারি ক্লাবের উদ্যোগে এবং রোটারি ইন্টারন্যাশনালের সহায়তায় সীতানগর গ্রামে অবহেলিত হরিজন সমাজের সার্বিক কল্যাণে দীর্ঘ মেয়াদী প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে, স্যানিটেশন, পানীয় জল, শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে গ্রামবাসীদের জীবনে আমূল পরিবর্তন এনে সেবার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে।

এছাড়াও দেশব্যাপি বিভিন্ন রোটারি ক্লাবগুলোর মাধ্যমে ছোট বড় অনেক প্রকল্পে গরিব ও দুস্থ জনগণ স্বাস্থ, শিক্ষা ও মানব সম্পদ উন্নয়নে রোটারি বিভিন্ন সেবামুলক কাজ করে যাচ্ছে। আপনাদের আরও অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, মানুষের সেবা ও কল্যাণের জন্য রোটারি যে কাজ করে তা বহুমাত্রিক হলেও ৭ কর্মক্ষেত্রে রোটারি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে বলে জানান তিনি।

শান্তি প্রতিষ্ঠা ও বিরোধ নিবারণে সহায়তা। রোগ-ব্যাধি নিয়ন্ত্রন ও চিকিৎসা। নিরাপদ পানি ও সেনিটেশন। মাতৃত্ব ও শিশু স্বাস্থ্য। প্রাথমিক শিক্ষা ও স্বাক্ষরজ্ঞান। অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন ও পরিবেশ সুরক্ষা নিয়েও কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কনফারেন্স সাব-কমিটির চেয়ারম্যান সিনিয়র রোটারিয়ান দৈনিক পূর্বকোণ প্রকাশক জসিম ইউ চৌধুরী, ডিস্ট্রিক্ট ফাষ্ট জেন্টেলম্যান জিয়া উদ্দীন চৌধুরী, ডিজিই প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান, জেলা সেক্রেটারি মোহাম্মদ শাহজাহান, ডো. ইমরান বিন ইউনুস, এডিশনাল সেক্রেটারি সাব্বির চৌধুরী, ওমর আলী ফয়সাল, বর্ষ বরণ কমিটির চেয়ারম্যান আবু হাসনাত চৌধুরী, ব্র্যান্ডিং রোটারির চেয়ারম্যান তানভীর শাহরিয়ার রিমন, জোনাল কো-অর্ডিনেটর এমদাদুল আজিজ চৌধুরী, কফিল উদ্দীন মাহমুদ রিপন, ডিস্ট্রিক্ট ডাইরেক্টরী কমিটির চেয়ারম্যান নগর নিউজ সম্পাদক এম.নাসিরুল হক। সংবাদ সম্মেলন শেষে এম. নাসিরুল হক এর সম্পাদনায় প্রকাশিত রোটারি ডাইরেক্টরীর বইয়ের আনুষ্ঠানিক মোড়ক উম্মোচন করা হয়।

রাজশাহীর সময়/এএইচ

Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]