বন্যা: সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কতটা ?


অনলাইন ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 24-06-2022

বন্যা: সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কতটা ?

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট-সুনামগঞ্জসহ বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে আগামী কয়েকদিন পানি কমা অব্যাহত থাকবে বলে ঢাকায় বন্যা পূর্বাভাস এবং সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলেছে।

সিলেট অঞ্চলসহ দেশটিতে বন্যা কবলিত ১২টি জেলায় এপর্যন্ত ৭০ জনের মৃত্যুর কথা সরকারিভাবে জানানো হয়েছে।

এক মাসের ব্যবধানে এবার বন্যা সিলেট এবং সুনামগঞ্জে ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল।

আকস্মিক বন্যায় পানিতে তলিয়ে সুনামগঞ্জ জেলা শহর সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। সিলেট নগরীরও রেল এবং মহাসড়ক পানিতে ডুবে গিয়েছিল।

সিলেটের সাথে সারাদেশের বাস-ট্রেন এবং বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সিলেটের মানুষ গত কয়েকযুগে এত ভয়াবহ বন্যা দেখেন নি বলে বলা হচ্ছে।

একদফা বন্যার পর পরিস্থিতি সামলে উঠতে না উঠতেই এই অস্বাভাবিক বন্যা তাদের মোকাবেলা করতে হয়।

সেজন্য এ ধরনের পরিস্থিতির ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। একইসাথে নদীতে নাব্যতার অভাব এবং অবৈধ দখল - এসব বিষয় আলোচনায় আসছে।

পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেই ব্যাপক বৃষ্টিপাত হওয়ায় এবার বন্যা ভয়ংকর রূপ নিয়েছিল।

অতিবৃষ্টি এবং উজানের পানি

সিলেট থেকে নাগরিক অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীদের অন্যতম শাহ শাহেদা বেলা বলেছেন, ভারতের চেরাপুঞ্জী এলাকার অতিবৃষ্টির পানি এসে সিলেট অঞ্চলে অল্প সময়েই বন্যা ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছিল। অতিমাত্রার বৃষ্টির পানি ধারণ করার ক্ষমতা সেখানে হাওর এবং নদীগুলোর নেই।

আর সেজন্য তিনি হাওরে অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ এবং নদী দখল বা খনন না করা-এসব বিষয়কে কারণ হিসাবে দেখেন।

"সিলেট অঞ্চলে নদীগুলো দীর্ঘদিন খনন করা হয়নি। হাওরগুলোতে ফসল রক্ষার নামে প্রতিবছর অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ দেয়া হচ্ছে।

"এছাড়া হাওর, জলাশয় এবং নদীর অবৈধ দখল চলছে। সুতরাং এগুলোই আমাদের মুল সমস্যা," বলেন শাহ শাহেদা বেলা।

উজানে ভারতের মেঘালয় এবং আসামে অতিমাত্রায় বৃষ্টি হলে সেই পানি সিলেট অঞ্চলে হাওরগুলোতে আসে এবং হাওর থেকে সুরমা ও কুশিয়ারা নদী দিয়ে বেরিয়ে যায়।

সিলেটের স্থানীয় লোকজনও মনে করেন, হাওরগুলোতে ফসল রক্ষার জন্য অপরিকল্পিত বাঁধ সমস্যা সৃষ্টি করছে।

এছাড়া অবৈধ দখলের কারণে সুরমা এবং কুশিয়ারা নদী দু'টিও সরু হয়ে গেছে। আর খনন না করায় নদীগুলো নাব্যতা হারিয়েছে।

এই বিষয়গুলোকেই বড় কারণ হিসাবে দেখা হচ্ছে স্থানীয়ভাবে।

বড় কারণ জলবায়ু পরিবর্তন

তবে বিশেষজ্ঞরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়কে বড় কারণ হিসাবে চিহ্নিত করেন।

বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে কাজ করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মোস্তাক আহমেদ।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেই সিলেট সুনামগঞ্জে বন্যার ব্যাপকতা বাড়ছে।

"ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে ব্যাপকভাবে গাছ এবং পাহাড় কাটা হচ্ছে। পাহাড়গুলো কিন্তু পানি শোষণ করতে পারতো। পাহাড় কাটার কারণে পানিশোষণ করতে পারছে না।"

ড: আহমেদ মনে করেন, এই পরিস্থিতিতে জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বা বাপা নামের একটি সংগঠন এবার সিলেট সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যার পেছনে তিনটি কারণ চিহ্নিত করেছে।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক শরিফ জামিল বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বেশি বৃষ্টি হয়েছে।

এছাড়া নদী দখলের পাশাপাশি হাওরগুলোতে যেখানে সেখানে বাঁধ, রাস্তা-ঘাট এবং ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এসবই তারা বড় কারণ হিসাবে পেয়েছেন।

হাওরগুলোতে অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ এবং রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, নদী খনন না করা এবং অবৈধ দখল-এসব সমস্যা যে রয়েছে, তা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো স্বীকার করছে।

পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক দাবি করেছেন, নদী খনন বা অবৈধ দখলসহ দেশের ভেতরে সমস্যাগুলো সমাধানে সরকার বড় পরিকল্পনা নিয়েছে।

সুরমা এবং কুশিয়ারাসহ সারাদেশের নদীগুলো খননের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়ার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।

একইসাথে তিনি বলেছেন, নদী খননের কাজ অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

"নদীগুলোতে প্রতিবছর ব্যাপক পলি জমে। ফলে প্রতি বছর খনন করলেও পলি জমে সমস্যা সৃষ্টি করবে।"

এরপরও সরকার নদী খননের ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেই বার বার বন্যা

তবে এবারের ভয়াবহ বন্যার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকেই বড় কারণ হিসাবে বলা হচ্ছে।

পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনেই অস্বাভাবিক বৃষ্টিতে বন্যা ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল।

"ভাটির দেশ বা নদীমাতৃক দেশ হিসাবে আমরা বাংলাদেশ বৈশ্বিক আবহাওয়ার পরিবর্তনের প্রভাবের বড় ভিক্টিম।"

প্রতিমন্ত্রী তার বক্তব্যের সমর্থনে যুক্তি দিতে গিয়ে বলেন, ভারতের চেরাপুঞ্জীতে পুরো বছরে ৫০০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। কিন্তু এবার মাত্র ছয় দিনেই বৃষ্টি হয়েছে ১২০৯ মিলিমিটার।

এত বৃষ্টির পানি সুনামগঞ্জে হাওরগুলোর ধারণ করার ক্ষমতা নেই। সেকারণে এবার পরিস্থিতি খুব খারাপ হয়েছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন।

জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর প্রভাব নিয়ে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যে বাংলাদেশের অসহায়ত্ব প্রকাশ পেয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের দায় মূলত উন্নত দেশগুলোর। এর প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের মতো এমন দেশগুলোর বক্তব্য বিশ্ব কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে, সে প্রশ্ন রয়েছে।

সেকারণে তারা মনে করেন, নদী খননসহ নিজেদের সমস্যাগুলোতে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে বন্যার ভয়াবহতা কমাতে কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]