অল্প আহার গ্রহণ নিয়ে মহানবী (সা.) যা বলেছেন


ধর্ম ডেস্ক : , আপডেট করা হয়েছে : 15-06-2022

অল্প আহার গ্রহণ নিয়ে মহানবী (সা.) যা বলেছেন

নানা কারণে মানুষের মধ্যে রোগব্যাধি ও অসুস্থ হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। শরীরের রোগ প্রতিরোধের উপাদানগুলো দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ছে। ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, ব্লাড প্রেসার, শ্বাসকষ্ট, অনিদ্রা ইত্যাদি রোগ আধুনিক মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। এর সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগ হচ্ছে নতুন নতুন ভাইরাস ও অদ্ভুত রোগব্যাধি।

এসব রোগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ডাক্তার ও হাসপাতালের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু মানুষ আসলে কী পরিমাণ সুস্থ হচ্ছে বা সুস্থ থাকতে পারছে বা মানুষ কতটা ডাক্তারদের ওপর আস্থা রাখতে পারে—সেটি এক অমীমাংসিত অধ্যায়। এসব রোগ ও রোগীর কূল-কিনারা করতে না পেরে বর্তমানে এ কথার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে যে ‘কম আহার করুন, বেশি দিন বাঁচুন’। আর মানুষকে বারবার এ কথা বলা হচ্ছে যে বেশি খেলে বহু রোগ সৃষ্টি হয়।

প্রফেসর রিচার বার্ড এই মর্মে একটি তালিকাও প্রণয়ন করেছেন। তিনি লিখেছেন বেশি খেলে কী কী ক্ষতি হতে পারে : ১. মস্তিষ্কের ব্যাধি, ২. চক্ষু রোগ, ৩. জিহ্বা ও গলার রোগ, ৪. বক্ষ ও ফুসফুসের ব্যাধি, ৫. হৃদরোগ, ৬. যকৃৎ ও পিত্তের রোগ, ৭. ডায়াবেটিস, ৮. উচ্চ রক্তচাপ, ৯. মস্তিষ্কের শিরা ফেটে যাওয়া, ১০. দুশ্চিন্তাগ্রস্ততা, ১১. অর্ধাঙ্গ রোগ, ১২. মনস্তাত্ত্বিক রোগ এবং ১৩. দেহের নিম্নাংশ অবশ হয়ে যাওয়া। (সান, উইকলি, সুইডেন)

গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে এই তালিকা প্রকৃতপক্ষে মৃত্যুর তালিকা, যা সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু মহানবী (সা.)-এর জীবনচরিত ও হাদিসের প্রতি লক্ষ করুন। তাঁর খাদ্যবিধি পাঠ করুন। তিনি বলেছেন, ‘পেটের এক-তৃতীয়াংশ ভাগ আহারের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ ভাগ পানির জন্য আর এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৩৪৯)

পেটের এক-তৃতীয়াংশ পানি দিয়ে পূর্ণ করতে বলার কারণ হলো, পানির মধ্যেও বহুবিধ উপকারিতা রয়েছে।

পানির উপকারিতা নিম্নরূপ :

শরীরে পানির অভাব পূরণ করা, রক্তের তরলতা বজায় রাখা, শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় দূষিত জিনিস নির্গত করতে সাহায্য করা, খাদ্যদ্রব্য হজম করতে সাহায্য করা, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা, শরীরের অম্ল-ক্ষারের স্বাভাবিকতা ঠিক রাখা, হরমোন তৈরি করতে অনেক ক্ষেত্রে সাহায্য করা।

একজন ঈমানদার শুধু নামাজ-রোজায়ই তাঁর জীবনকে সীমাবদ্ধ রাখেন না। তাঁর আহার-বিহার, নিদ্রা-জাগরণ সব কিছুই রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনাদর্শ মোতাবেক পরিচালিত হতে হবে। মুহাম্মাদ ইবনে বাশশার (রহ.) নাফে (রহ.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ইবনে ওমর (রা.) ততক্ষণ পর্যন্ত আহার করতেন না যতক্ষণ না তাঁর সঙ্গে খাওয়ার জন্য একজন মিসকিনকে ডেকে আনা হতো। একবার আমি তাঁর সঙ্গে বসে খাওয়ার জন্য এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসলাম। লোকটি খুব বেশি পরিমাণে আহার করল। তিনি বলেন, নাফে! এমন মানুষকে আমার কাছে নিয়ে আসবে না। আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, মুমিন এক পেটে খায়। আর কাফির সাত পেটে খায়। (মুসলিম, হাদিস : ২০৬০, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৫২২০)

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, মিকদাম ইবন মাদিকারাব (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, পেটের চেয়ে মন্দ কোনো পাত্র মানুষ ভরাট করে না। পিঠের দাঁড়া সোজা রাখার মতো কয়েক লোকমা খাবারই আদম সন্তানের জন্য যথেষ্ট। আর বেশি খাবার ছাড়া যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে পেটের এক-তৃতীয়াংশ খাবারের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানির জন্য আর বাকি এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রাখবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৮৩)

রাতের খাবার খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়া স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। খাবার খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লে পাকস্থলী শয়ন অবস্থায়ও কর্মরত থাকে। ফলে পরিপাকের ত্রুটিসহ বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি হতে পারে। তাই এশার নামাজের আগে রাতের খাবার খেয়ে নিলে একদিকে মসজিদে যাওয়া-আসা, নামাজ আদায় ইত্যাদির মাধ্যমে ঘুমানোর আগেই পাকস্থলীর কাজ প্রায় শেষ হয়ে যায়, অন্যদিকে এশার নামাজের পর তাড়াতাড়ি ঘুমানো সম্ভব হয়, যা সুস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এশার নামাজের আগে ঘুমাননি এবং তার পর নৈশ আলাপ করেননি। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৭০২)

রাসুল (সা.) কিছু খাবার পছন্দ করতেন। সেগুলো সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। এসব খাবারের গুণাগুণ এবং মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি আধুনিক গবেষণায়ও প্রমাণিত। যেমন—খেজুর, দুধ, মধু, যবের রুটি, লাউ, গোশত, পনির, মাখন, মিঠাই ইত্যাদি। প্রয়োজন ও পরিমাণমতো এসব খাবার গ্রহণ করা যেতে পারে।

বর্তমানে মিক্সড ফুড, পাঁচমেশালি সবজির প্রতি জোর দেওয়া হয়। বিশেষভাবে সকালের নাশতায় পাঁচমেশালি সবজি রাখার তাগিদ দেওয়া হয়। এ ধরনের খাবারের পুষ্টিগুণই শুধু বেশি নয়, বরং স্বাদেও অসাধারণ। এ বিষয়ে একটি হাদিস স্মরণীয়। সালামাহ (রহ.) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে এক যুদ্ধে গিয়েছিলাম। আমাদের মধ্যে খাদ্যের অভাব দেখা দিল। অবশেষে আমাদের কিছু সওয়ারির বাহন জবাই করার কথা ইচ্ছা করেছিলাম। তখন নবী করিম (সা.)-এর নির্দেশে আমরা আমাদের খাদ্যদ্রব্য একত্রিত করলাম। আমরা একটি চামড়া বিছালাম এবং তাতে লোকদের খাদ্যদ্রব্য জমা করা হলো। বর্ণনাকারী বলেন, আমি সেটির প্রশস্ততা অনুমান করার জন্য দাঁড়ালাম এবং আমি আন্দাজ করলাম সেটি একটি ছাগল বসার স্থানের সমান। আর আমরা সংখ্যায় ছিলাম ১৪০০। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা সবাই তৃপ্তির সঙ্গে খেলাম। তারপর আমাদের নিজ নিজ খাদ্য রাখার থলে পূর্ণ করে নিলাম...। (মুসলিম, হাদিস : ৪৩৬৯)

এই হাদিসের ভাষ্য মতে, পাঁচমেশালি অল্প খাবার বহু মানুষের জন্য যথেষ্ট হয়ে যায়।

মহান আল্লাহ আমাদের সুস্থভাবে বেঁচে থেকে তাঁর ইবাদত করার তাওফিক দান করুন।

কালের কন্ঠ


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]