মুসলিম উম্মাহর সর্বোত্তম ইবাদাত হজ ও ওমরাহ। ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে যারা আর্থিক ও শারীরিকভাবে সমর্থ্যবান; হজ তাদের জন্য জীবনে একবার পালন ফরজ ইবাদত। তবে তা ফরজ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আদায় করাই উত্তম। এটি ইসলাম ধর্মের পঞ্চম স্তম্ভ। বছরের নির্ধারিত একটি সময়ে তা আদায় করতে হয়। কিন্তু ওমরাহ পালন ব্যতিক্রম। যে কেউ যে কোনো সময় ওমরাহ পালন করতে পারেন।
হজের নির্ধারিত তারিখ চাঁদ দেখার ওপর নির্ভরশীল। জুলাই ২০২২-এর প্রথম দশকের যে কোনো একদিন ১৪৪৩ হিজরির হজ অনুষ্ঠিত হবে। সে হিসেবে আর বেশি দিন বাকি নেই। হজ ও ওমরাহ ইসলামের সর্বোত্তম ইবাদতগুলোর মধ্যে অন্যতম। হজ ও ওমরাহ পালনে মহান আল্লাহ বান্দার গুনাহ ক্ষমা করেন, সওয়াব দান করেন এবং দারিদ্রতা থেকে মুক্তি দেন।
হজের জন্য নির্ধরিত সময় হলো- হিজরি বছরের জিলহজ মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখ। মুসলিম উম্মাহকে হজ পালনের জন্য দুনিয়ায় নিরাপত্তার নগরীখ্যাত পবিত্র মক্কায় অবস্থিত বাইতুল্লাহ তাওয়াফ এবং মক্কার নিকটবর্তী মিনা, আরাফা, মুযদালফার বিভিন্ন স্থানে গমন, অবস্থান ও তথায় নির্দিষ্ট কার্য সম্পাদন করতে হয়। হজ যেহেতু সামর্থ্যবানদের ওপর ফরজ; সে কারণে মহান আল্লাহর ঘোষণাও এমনই-
فِیۡهِ اٰیٰتٌۢ بَیِّنٰتٌ مَّقَامُ اِبۡرٰهِیۡمَ ۬ۚ وَ مَنۡ دَخَلَهٗ کَانَ اٰمِنًا ؕ وَ لِلّٰهِ عَلَی النَّاسِ حِجُّ الۡبَیۡتِ مَنِ اسۡتَطَاعَ اِلَیۡهِ سَبِیۡلًا ؕ وَ مَنۡ کَفَرَ فَاِنَّ اللّٰهَ غَنِیٌّ عَنِ الۡعٰلَمِیۡنَ
‘তাতে রয়েছে স্পষ্ট নির্দশনসমূহ, মাকামে ইবরাহিম। আর যে তাতে প্রবেশ করবে, সে নিরাপদ হয়ে যাবে এবং সামর্থ্যবান মানুষের ওপর আল্লাহর জন্য বাইতুল্লার হজ করা ফরজ। আর যে কুফরি করে, তবে আল্লাহ তো নিশ্চয়ই সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৯৭)
হজ কী?
হজ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো ইচ্ছা করা বা সংকল্পবদ্ধ হওয়া। তবে ইসলামি বিধানে হজ বলতে বুঝায়- কাবা শরিফকে প্রদক্ষিণ করা। আর্থিক ও শারীরিক সক্ষমতা সম্পন্ন দুনিয়ার সব মুসলিমের জন্য হজ ফরজ ইবাদাত।
হজের গুরুত্ব সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হাদিসে এসেছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য হজ করে এবং অশ্লীল ও গুনাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকে, সে হজ থেকে এমন অবস্থায় ফিরে আসে, যেন আজই মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছে। অর্থাৎ জন্মের পর শিশু যেমন নিষ্পাপ থাকে, সেও তদ্রুপই হয়ে যায়। (বুখারি)`
অন্য হাদিসে এসেছে, শয়তান আরাফার (হজের) দিন থেকে বেশি লজ্জিত ও অপদস্থ আর কোনো দিন হয় না, কেননা ওই দিনই আল্লাহ তাআলা স্বীয় বান্দার প্রতি অগণিত রহমত বর্ষণ করেন ও অসংখ্য (মানুষের) কবিরা গুনাহ ক্ষমা করে দেন।
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, ‘একটি বিশুদ্ধ ও মকবুল হজ সমগ্র পৃথিবী ও পৃথিবীর যাবতীয় বস্তুর চেয়ে উত্তম। বেহেশত ছাড়া অন্য কোনো বস্তু তার প্রতিদান হতে পারে না।’
শারীরিক ও আথির্কভাবে সক্ষম প্রত্যেক মুসলমানের জন্য এখন থেকেই হজের প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। হজ সম্পাদনের ফরজ, ওয়াজিব এবং সুন্নাত কাজগুলো যথাযথভাবে আদায় করার প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। যা হজে গমনেচ্ছুদের জন্য বিস্তারিতভাবে পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা হবে।
মনে রাখতে হবে: হজ পালনের জন্য কোনো মুমিন যখন নিয়ত করে, তখন থেকেই সে আল্লাহর মেহমান হয়ে যায়। দুনিয়ার সব লোভ-লালসা থেকে নিজেকে মুক্ত হয়ে পরকালের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতিতে মনোনিবেশ করে। এ বিষয়গুলোতে হজে গমনেচ্ছু ব্যক্তি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। হজ আদায়ের মাধ্যমে নিজের সব পাপ থেকে মুক্ত হতে সে বদ্ধপরিকর। গুনাহ মাফের মাধ্যমে সে নিজেকে উন্নত ও পবিত্র চরিত্রে আলোকিত করে নেওয়ার দীপ্ত শপথ করে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সর্বোত্তম ইবাদত হজ ও ওমরাহ যথাযথভাবে পালনের তাওফিক দান করুন। হজের আগেই হজের করণীয় কার্যক্রম সুষ্ঠ ও সুন্দরভাবে পালন করার প্রস্তুতি নেওয়ার তাওফিক দান করুন। হজের মাধ্যমে নিজেকে নিষ্পাপ হিসেবে তৈরি করার জন্য চূড়ান্তভাবে দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
রাজশাহীর সময়/এইচ