মুম্বইয়ের মায়ানগরী তারকায় ঠাসা। শাহরুখ, সালমান, দীপিকা, প্রিয়াঙ্কা কিংবা অমিতাভ বচ্চন- কে নেই সেখানে! বড়পর্দার রুপোলি মোড়কের ওপারে তাঁদের মন ভরে দেখেন সাধারণ মানুষ। বাইরে থেকে বলিউডের সেই চাকচিক্যে ভরা দুনিয়ার আভাস পাওয়া যায়, তবে নাগাল মেলে না। তাই হয়তো সেখানকার অনেক কথাই থেকে যায় অজানা ।
আমাদের খুব চেনা বলিউড তারকাদের নামের আড়ালে এমন কত যে না জানা কথা লুকিয়ে আছে, সবটার হিসেব পাওয়া মুশকিল। আজকের প্রতিবেদনে রইল তেমন কিছু অজানা তথ্যের হদিশ যা হয়তো বি-টাউনের তারকাদের নতুন করে চিনতে শেখাবে। বদলে দেবে তাঁদের সম্পর্কে ধারণাও।
অজয় দেবগন
অজয় দেবগনের আসল নাম কিন্তু অজয় নয়! অনেকেই হয়তো জানেন না অজয় দেবগন নামটা পোশাকি। তাঁর আসল নাম বিশাল বিরু দেবগন। অজয় নামটা তিনি বলিউডে পরিচিতি পাওয়ার জন্য নিয়েছিলেন।
অয়ন মুখার্জী
অনেকেরই হয়তো অজানা যে বলিউডের স্বনামধন্য পরিচালক আশুতোষ গোয়ারিকর এবং অয়ন মুখার্জী পারিবারিকভাবে সম্পর্ক যুক্ত। অভিনেতা দেব মুখার্জীর প্রথম পক্ষের মেয়ে সুনীতা আশুতোষ গোয়ারিকরের বিবাহিত স্ত্রী। আবার দেব মুখার্জীর দ্বিতীয় পক্ষের ছেলে হলেন অয়ন মুখার্জী। অর্থাৎ আশুতোষ সম্পর্কে অয়ন মুখার্জীর দিদির স্বামী।
রণবীর কাপুর
সঞ্জয় লীলা বনশালীর ‘ব্ল্যাক’ ছবিতে সহকারী পরিচালকের কাজ করেছিলেন রণবীর কাপুর- এই তথ্য অনেকেই জানেন। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না রণবীরের অ্যাসিস্টান্ট ডিরেক্টর হিসেবে হাতেখড়ি হয়েছিল তারও অনেক আগে। বাবা ঋষি কাপুরের ছবিতেই সহকারী পরিচালক হিসেবে প্রথমবার কাজ করেছিলেন রণবীর কাপুর। ছবির নাম ‘আ আব লট চালে’। এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন অক্ষয় খান্না এবং ঐশ্বর্য রাই বচ্চন।
ঐশ্বর্য রাই বচ্চন
‘দিল কা রিশতা’ ছবিতে ঐশ্বর্য রাই বচ্চনের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন অর্জুন রামপাল। সেই ছবির সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে ঐশ্বর্যর মা এবং ভাইয়ের নাম। ছবিটির অন্যতম প্রযোজক ছিলেন ঐশ্বর্যর ভাই। আর ছবির গল্প লিখেছেন ঐশ্বর্যর মা ব্রিন্দা রাই। তিনি এই ছবির কো-রাইটার।
হৃতিক রোশন
হৃতিক রোশনকে নিয়ে বলিউড-ভক্তদের মধ্যে উন্মাদনার শেষ নেই। এই হৃতিকের আসল নামও কিন্তু অজানা অনেকের কাছেই। নামটা হৃতিক হলেও তাঁর পদবী নাগরথ, মোটেই রোশন নয়। রোশন তাঁদের পারিবারিক পদবীই নয়। আসলে হৃতিকের ঠাকুরদার নাম ছিল রোশন। রোশন লাল নাগরথ মোহন সেসময়কার খ্যাতনামা মিউজিক ডিরেক্টর ছিলেন। তিনি নিজের নামের প্রথমটুকু দিয়েই খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছেছিলেন। তাঁকে সকলে চিনত রোশন নামেই। শোনা যায় তার পর থেকেই নাকি ওই পরিবারের বাকিরাও ওই নামটাকেই নিজেদের নামের সঙ্গে জুড়ে দেন। নাগরথ নয়, পদবী হিসেবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে রোশন।
তারা সুতরিয়া
‘স্টুডেন্ট অফ দ্য ইয়ার ২’ ছবির হাত ধরে বলিউডের বড়পর্দায় পা রেখেছিলেন তারা সুতরিয়া। এখন ইন্ডাস্ট্রিতে বেশ পরিচিতি গড়ে উঠেছে তাঁর। হাতে নতুন নতুন কাজও আসছে। বি-টাউনের এই উঠতি তারকার কিন্তু একটা অন্য পরিচয় রয়েছে। তারা সুতরিয়া একজন প্রফেশনাল গায়িকা। ছোটবেলা থেকেই গান করেন তিনি। সাত বছর বয়স থেকে গানের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাইক হাতে পারফর্ম করেছেন তারা।
সিদ্ধার্থ মালহোত্রা
বলিউডে এখন সিদ্ধার্থ মালহোত্রার ফ্যান ফলোয়িং বেশ লম্বা। করণ জোহরের ‘স্টুডেন্ট অফ দ্য ইয়ার’-এর হাত ধরে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন তিনি। শোনা যায় তার অনেক আগে সেই ২০০৯ সালে জনপ্রিয় সিরিয়াল ‘ধরতি কা বীর যোদ্ধা পৃথ্বিরাজ চৌহান’-এও ছিলেন সিদ্ধার্থ। তিনি জয়চান্দের চরিত্রে ছোট্ট অভিনয় করেছিলেন ওই ধারাবাহিকে। তখন আর সিদ্ধার্থ মালহোত্রাকে কে চিনত!
পরিণীতি চোপড়া
প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার বোন পরিণীতি চোপড়া যেদিন বলিউডে পা রাখলেন, তাঁকে নিয়ে প্রচুর চর্চা হয়েছিল। কিন্তু অনেকেই জানেন না পরিণীতি চোপড়া আদৌ এই ইন্ডাস্ট্রিতে আসবেন ভাবেননি। যশরাজ ফিল্মসের মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টে ইন্টার্নশিপ করেছিলেন পরিণীতি। ২০০৯ সালে কাজ করেছিলেন পাবলিক রিলেশনস কনসালট্যান্ট হিসেবে। পরে মার্কেটিং ছেড়ে চলে এসেছেন অভিনয় জগতে।
প্রিয়াঙ্কা চোপড়া
প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার রাজনৈতিক যোগের খোঁজ রাখেন? ভারতীয় রাজনীতির সঙ্গে কিন্তু প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষ যোগ রয়েছে প্রিয়াঙ্কার। প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা ডঃ মনোহর কিষাণ আখৌরির বড় মেয়ে ছিলেন মধু চোপড়া, প্রিয়াঙ্কার মা। মধু চোপড়ার মা মধু জ্যোৎস্না আখৌরি তো বিহার বিধানসভার সদস্য ছিলেন একসময়। প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার পারিবারিক দিকে রাজনীতি রয়েছে ষোলোআনা।
অক্ষয় কুমার
অক্ষয় কুমার ওরফে রাজীব হরি ওম ভাটিয়া আজ বলিউডে প্রথম সারির তারকা। কিন্তু এই ইন্ডাস্ট্রিতে কেরিয়ার শুরুর আগে অক্ষয় কুমার কাজ করতেন কলকাতায়। কলকাতার একটি ট্র্যাভেল এজেন্সিতে কাজ করতেন অক্ষয় ওরফে রাজীব। শুধু তাই নয়। নানা জায়গায় ঘুরে ঘুরে নানারকম কাজ করেছেন তিনি। কখনও ঢাকার রেস্তোরাঁয় শেফ কিংবা কখনও দিল্লির গয়নার দোকানে সেলসম্যান- একাধিক পেশায় খুঁজেছেন নিজের ভাগ্যের চাবিকাঠি।
শ্রদ্ধা কাপুর, টাইগার স্রফ, আথিয়া শেট্টি
শ্রদ্ধা কাপুর, টাইগার স্রফ আর আথিয়া শেট্টি- বলিউডে তিনটেই চেনা নাম। তিনজনই স্টারকিডও বটে। শক্তি কাপুরের মেয়ে শ্রদ্ধা, জ্যাকি স্রফের ছেলে টাইগার আর আথিয়া হলেন সুনীল শেট্টির মেয়ে। এসব তো জানা কথা। কিন্তু অনেকেই যেটা জানেন না সেটা হল বলিউডের এই তিন তারকাই ছোটবেলায় একই স্কুলে পড়েছেন। একসঙ্গে ক্লাস করেছেন আমেরিকান স্কুল অফ বম্বেতে। শুধু তাই নয়, তিনজন একসঙ্গে স্কুলের নাচের অনুষ্ঠানেও অংশ নিতেন।
আলিয়া ভাট
কিছুদিন আগে রণবীর কাপুরের সঙ্গে ঘটা করে বিয়ে সেরেছেন আলিয়া ভাট। বলিউডের বক্স অফিসে তাঁর দাপট কারও অজানা নয়। কিন্তু বলিউড কাঁপানো এই তারকা অভিনেত্রী আদৌ ভারতীয় নন কেউ কি জানতেন? হ্যাঁ, আলিয়া ভাট আসলে ব্রিটিশ অভিনেত্রী। তাঁর ব্রিটিশ পাসপোর্টও রয়েছে। তাঁর মা সোনি রাজদান ব্রিটিশ মহিলা।
করিনা কাপুর করিশ্মা কাপুর
কাপুর খানদানের দুই কন্যা করিনা আর করিশ্মাকে কে না চেনে! কত না সুপারহিট ছবিতে কাজ করেছেন এই দুই বোন। তাঁদের মা ববিতা কাপুরও বলিউডের রত্ন। তাঁদের সঙ্গেও কিন্তু ব্রিটেনের যোগ রয়েছে। ববিতা কাপুরের মা অর্থাৎ করিনাদের দিদা বারবারা শিবদাসানি একজন ব্রিটিশ মহিলা ছিলেন।
করিনা কাপুর
করিনা কাপুরের নামের পিছনে অন্য গল্প লুকিয়ে আছে, অনেকেই তার খোঁজ রাখেন না। করিনা যখন তাঁর মায়ের পেটে ছিলেন তখন ববিতা লিও টলস্টয়ের আন্না কারেনিনা নামের বইটি পড়ছিলেন। তারপর তাঁর কোলে আসেন করিনা। তাই মেয়ের ওই নাম রেখেছিলেন তিনি।
রাজকুমার রাও
বলিউডে রাজকুমার রাও প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা। তাঁর অভিনয় দক্ষতা নিয়ে কারও মনেই সন্দেহ নেই। কিন্তু জানতেন কি, এই রাজকুমার রাও তায়েকোন্দোতে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন? কোরিয়ান মার্শাল আর্টের নাম তায়েকোন্দো, অনেকটা ক্যারাটের মতোই। তাতেই রীতিমতো সিদ্ধহস্ত রাজকুমার রাও।
ক্যাটরিনা কাইফ
মাত্র ১৪ বছর বয়সে হাওয়াইতে একটি বিউটি কনটেস্ট জিতেছিলেন বলি-সুন্দরী ক্যাটরিনা কাইফ। তারপরেই মডেলিংয়ের শখ হয় তাঁর। মডেলিংয়ের হাত ধরে পা রাখেন বলিউডে।
তাপসী পান্নু
বলিউডে পা রাখার আগে তাপসী পান্নু ছিলেন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিগ্রি রয়েছে তাপসীর। তাঁর তৈরি একটি অ্যাপও রয়েছে, যার নাম ফন্টসোয়াপ।
পঙ্কজ ত্রিপাঠি
বলিউডে নিজের অভিনয় দক্ষতা বারবার প্রমাণ করেছেন পঙ্কজ ত্রিপাঠি। ওটিটি-র দুনিয়ায় তো এখন তাঁরই রমরমা। অনেকেই হয়তো জানেন না, এই পঙ্কজ ত্রিপাঠি একসময় পাটনার হোটেল মৌর্যতে শেফ হিসেবে কাজ করতেন। সেখানেই তাঁর সঙ্গে তাঁর গুরু মনোজ বাজপেয়ীর দেখা হয়। বাজপেয়ীর চটিজোড়া অনেকদিন পর্যন্ত নিজের কাছেই রেখে দিয়েছিলেন পঙ্কজ ত্রিপাঠি।
ছোটবেলায় বেশিরভাগ সময় মামারবাড়িতে কাটাতেন শাহিদ কাপুর। তাঁর দাদু আর দিদা পেশায় সাংবাদিক ছিলেন। রাশিয়ান ম্যাগাজিন স্পুটনিকে কাজ করতেন তাঁরা।