মিরসরাইয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে র্যাব সদস্যের উপর দুষ্কৃতিকারীদের অতর্কিত আক্রমনের ঘটনায় ১৩ জন গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম।
বৃহস্পতিবার (২৬ মে) দিনভর অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রাম জেলার জোরারগঞ্জ থানাধীন ধুমঘাট এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলো: চট্টগ্রাম জেলার জোরারগঞ্জ থানার সোনাপাহার এলাকারসাইদুর রহমান সাঈদ (৩৩), আনোয়ার হোসেন (৪৫), এস এম শাফায়েত হোসেন (৩৮), মিনহাজুল ইসলাম ওরফে মিঠু (৩৬), শহিদুল ইসলাম অরফে আকাশ (২৫), সোয়েব উদ্দিন আবির (২৯), মোঃ সাইদুল ইসলাম সুমন (৩০), নাহিদ উদ্দিন (৩৩), মোঃ আবু সাঈদ (২৮), মোঃ নাসির উদ্দিন (৩৮), মোঃ মাঈন উদ্দিন (৩২), ইমাম হোসেন (৩৩), ফাহাদ প্রকাশ ফরহাদ (২৬)।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন, র্যাব-৭, চট্টগ্রামের মুখপাত্র সিনিঃ সহকারী পরিচালক মোঃ নূরুল আবছার।
তিনি জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে, কতিপয় কুখ্যাত মাদক কারবারি মাদকদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে মাদকদ্রব্যসহ চট্টগ্রাম জেলার জোরারগঞ্জ থানাধীন ধুমঘাট এলাকার ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের পাশে অবস্থান করছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে গত (২৫ মে) বুধবার সন্ধা সাড়ে ৭টায় র্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল ওই এলাকায় পৌছালে র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক কারবারিরা কয়েকটি দল একত্রিত হয়ে ও কিছু দুস্কৃতিকারীরা র্যাবের গাড়ীকে বেরিকেট দেওয়ার চেষ্ঠা করে। সেখানা তারা বেরিকেট দিতে ব্যার্থ হলে পরবর্তীতে জোরারগঞ্জ ফ্রুটওভার ব্রীজের নিচে ২টি কার্ভাডভ্যান রেখে রাস্তা বন্ধ করে ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করে গুজব ছড়িয়ে আতংক সৃষ্টি করে ও দুস্কৃতিকারীরা পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে র্যাবের উপর অতর্কিত সশস্ত্র হামলা করে।
ওই হামলায় দুস্কৃতিকারীরা র্যাবের ব্যবহিত একটি প্রাইভেটকার ভাংচুর এবং ২জন র্যাব সদস্যকে গুরুতর আহত করে।
আহত র্যাব সদস্যের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য র্যাবের হেলিকপ্টারযোগে সম্মিলিত সামরিক হাসাপাতাল, ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। যেখানে তারা বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এ ঘটনায় র্যাব-৭, চট্টগ্রাম ওই সকল মাদক কারবারি ও দুস্কৃতিকারীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারী এবং গভীর ছায়াতদন্ত শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল বৃহস্পতিবার (২৬ মে) সারাদিন চট্টগ্রাম জেলার জোরারগঞ্জ এবং ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করে।
এ সময় আসামী ফাহাদ প্রকাশ ফরহাদের নিজ প্যান্টের পকেট থেকে ২ হাজার পিস মরন নেশা ইয়াবা ট্যাবলেট ও তার দেখানো একটি বস্তার ভিতর হতে ৫২ বোতল ফেন্সিডিল ও ১ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা সকলেই ঘটনার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত এবং এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও দুস্কৃতিকারী বলে স্বীকার করে।
এর আগে ঘটনাস্থানের সিসি টিভির ফুটেজ এবং গোপন তথ্যের ভিত্তিতে দুস্কৃতিকারীদের পরিচয় শনাক্ত করে আসামীদের গ্রেফতার করা হয়। সেই সাথে সিসি টিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায় , গ্রেফতার আসামী সাইদুর রহমান সাঈদ ঘটস্থান থেকে একজন র্যাব সদস্যের নিকট হতে একটি অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
এরপর সাঈদের দেয়া তথ্য মতে গ্রেফতার আসামী এস এম শাফায়েত হোসেনের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও উল্লেখিত ঘটনায় সাথে সারাসরি জড়িত এমন আরো কিছু দুস্কৃতিকারীদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তাদেরকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যহত আছে।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামীরা আরও জানায়, তারা দলবদ্ধভাবে দীর্ঘদিন যাবৎ তাদের অন্যান্য সহযোগীদের সহায়তায় অবৈধভাবে মাদকদ্রব্য মরন নেশা ইয়াবা ট্যাবলেট, ফেনসিডিল এবং গাঁজা কুমিল্লা ও ফেনী জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে সংগ্রহ করে বিভিন্ন কৌশলে তা চট্টগ্রাম জেলার জোরারগঞ্জ ও ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া থানা এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গার মাদক সেবনকারী ও বিক্রেতাদের কাছে খুচরা ও পাইকারী বিক্রয় করে আসছে বলেও স্বীকার করে।
এ ব্যপারে গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে তাদের সংশ্লিষ্ট থানার মাধ্যমে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বলেও জানান র্যাব-৭, এর মুখপাত্র।