হজ ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম। হজে আর্থিক ও কায়িক শ্রমের সমন্বয় রয়েছে। অন্য কোনো ইবাদতে হজের মতো এই দুইটি একসঙ্গে পাওয়া না যায় না। মহান রাব্বুল আলামিন সামর্থ্যবান প্রতিটি মুসলিমের উপর দ্রুত হজ সম্পাদন করা ফরজ করেছেন।
হজ মুসলিম উম্মাহর গর্ব। নানা জাতি ও বর্ণের মুসলিমদের ঐক্য ও সাম্যের প্রতীক। প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৩০ থেকে ৪০ লাখ মানুষ পবিত্র হজ পালনে সৌদি গমন করেন। অগণিত কিংবা নির্ধারিত— যত সংখ্যক হাজি-ই সেখানে যান, তারা আল্লাহপ্রেমের পাঠ চুকিয়ে রাসূলপ্রেমের ষোলকলা পূর্ণ করেন। মহা সৌভাগ্য ও পুণ্যের মিছিলে নিজেদের নাম লেখান।
হজ ও ওমরাহ কী?
স্বাভাবিকভাবে ‘হজ’ অর্থ মহৎ কাজের ইচ্ছে করা। পারিভাষিকভাবে হজ বলে, হজের নিয়তসহ ইহরাম ধারণ করে— নির্দিষ্ট দিনে আরাফার ময়দানে অবস্থান করা ও কাবা শরিফ তাওয়াফ করা। (ফাতাওয়া শামি, খণ্ড : ০২, পৃষ্ঠা : ৪৫৪)
আর ‘ওমরাহ’ অর্থ পরিদর্শন করা। ওমরাহর নিয়তে ইহরাম ধারণ করা, এরপর তাওয়াফ ও সাঈ করে মাথা মুণ্ডন করে ইহরামমুক্ত হওয়াকে ওমরাহ বলে। (ফাতহুল বারি, খণ্ড: ০৩, পৃষ্ঠা: ৫৯৭)
হজের সওয়াব ও ফজিলত: আল্লাহর রাসুল (সা.) হাদিসে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ করে এবং অশ্লীল ও গুনাহর কাজ থেকে বেঁচে থাকে, সে নবজাতক শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়। আর মকবুল হজের পুরস্কার জান্নাত ছাড়া অন্য কিছুই নয়।’ (বুখারি, খণ্ড: ০১, পৃষ্ঠা: ২০৬)
ওমরাহ ও হজ অভাব দূর করে: আল্লাহর রাসুল (স.) বলেন, ‘তোমরা হজ-ওমরা সঙ্গে সঙ্গে করো। কেননা, এ দুটি দারিদ্র্য ও গোনাহ এভাবে দূর করে, যেভাবে হাঁপর লোহা ও সোনা-রুপার ময়লা দূর করে। আর মকবুল হজের বিনিময় জান্নাত।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৮৮৭)
হজের বিনিময় জান্নাত: আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন- ‘এক উমরা আরেক উমরা পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহর ক্ষতিপূরণ হয়ে যায়। আর হজে মাবরূরের প্রতিদান তো জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৭৭৩; সহিহ মুসলিম: ১৩৪৯; মুসনাদে আহমদ: ৭৩৫৪; সহিহ ইবনে হিববান: ৩৬৯৫)
হজ না আদায়ের শাস্তি ও পরিণাম: রাসূল (সা.) হাদিসে বলেছেন, ‘হজ ফরজ হওয়ার পর তা আদায় না করে মৃত্যুবরণ করা- ইহুদি বা খ্রিস্টান হয়ে মৃত্যুবরণ করার সমতুল্য।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৬৭)
সামর্থ থাকার পরও হজ না করার পরিণাম ভয়াবহ। ফরজ হজ ত্যাগ করলে ইহুদি-নাসারার মতো মৃত্যু হবে বলে হাদিসে সতর্ক করা হয়েছে। ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি হজ করার সামর্থ্য রাখে, তবুও হজ করে না, সে ইহুদি হয়ে মৃত্যুবরণ করল কি খ্রিস্টান হয়ে, তার কোনো পরোয়া আল্লাহর নেই।’ (ইবনে কাসির : ১/৫৭৮)
আর কেউ যদি হজ অস্বীকার করে বা কোনো ধরনের অবহেলা প্রদর্শন করে তবে সে আল্লাহর জিম্মার বাইরে বলে বিবেচিত হবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘মানুষের মধ্যে যারা সেখানে (বায়তুল্লাহ) পৌঁছার সামর্থ্য রাখে তাদের ওপর আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ গৃহের হজ করা ফরজ। আর কেউ যদি অস্বীকার করে, তাহলে জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিজগতের প্রতি মুখাপেক্ষী নন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৯৭)
এছাড়াও হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ তায়ালা হজ না করার পরিণতি সম্পর্কে বলেছেন, ‘যে বান্দাকে আমি দৈহিক সুস্থতা দিয়েছি এবং আর্থিক প্রাচুর্য দান করেছি, অতঃপর (গড়িমসি করে) তার পাঁচ বছর অতিবাহিত হয়ে যায় অথচ আমার দিকে (হজব্রত পালন করতে) আগমন করে না, সে অবশ্যই বঞ্চিত।’ (ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৩৭০৩)
হজের সময় ও নির্ধারিত স্থান: হজের নির্দিষ্ট সময়- শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজের প্রথম ১০ দিন। বিশেষত ৮ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত পাঁচ দিন। এ পাঁচ দিনই মূলত হজ পালন করা হয়। হজের নির্ধারিত স্থান-কাবা শরিফ, সাফা-মারওয়া, মিনা, আরাফা ও মুজদালিফা। (আসান ফিকাহ, খণ্ড: ০২, পৃষ্ঠা : ২৫১)
রাজশাহীর সময়/এইচ