খাদ্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়েছে ইরানের বিভিন্ন শহরে। চলমান এই বিক্ষোভে নিরপত্তা বাহিনীর গুলিতে শুক্রবার থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে নিহত হয়েছেন অন্তত ৫ জন; গ্রেপ্তার হয়েছেন আরও বহুসংখ্যক।
ইরানের টেলিভিশন সংবাদমাধ্যম ইরান ইন্টারন্যাশনাল টিভি স্টেশনের বরাত দিয়ে সোমবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম আরটি।
খাদ্যপণ্য আমদানির ওপর থেকে ভর্তুকি প্রত্যাহার করে নেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তই এ বিক্ষোভের কারণ। চলতি সপ্তাহে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি খাদ্যপণ্য আমদানির ওপর ভর্তুকি দেওয়া বন্ধ ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত স্থিতিশীল রাখতে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে সরকার।
সরকারি হিসেবেই ইরানে বর্তমানে মুদ্রাস্ফীতির হার ৪২ শতাংশ। চলতি বছরের শুরু থেকেই ভোজ্য তেল, মুরগির মাংস, ডিম-দুধসহ প্রায় সব খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছিল পশ্চিম এশিয়ার এই দেশটিতে। রাইসির ঘোষণার পর এক লাফে এই মূল্যবৃদ্ধির হার ৩০০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়।
৮ কোটি ২০ লাখ মানুষ অধ্যুষিত ইরানের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই দারিদ্রসীমার নিচে অবস্থান করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের একের পর এক নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত দেশটির অর্থনীতিও বর্তমানে বেশ নড়বড়ে।
শুক্রবারের ঘোষণায় অবশ্য রাইসি দরিদ্রদের জন্য বিশেষ আর্থিক সহায়তা প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন; কিন্তু হিসেব করে দেখা গেছে যে পরিমাণ অর্থ সহায়তা সরকার থেকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার তার চেয়ে অনেক বেশি।
এ পরিস্থিতিতে শুক্রবার থেকেই সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয় দরুদ, ফারসান, জুনেঘান, আন্দিমেশ্ক, বরুজের্দ, কলিকেহ, দেহদশ্ট, আর্দেবিলসহ ইরানের বিভিন্ন শহরে।
ইরান ইন্টারন্যাশনাল টিভি স্টেশন জানিয়েছে, প্রথম নিহতের ঘটনা ঘটেছে বিক্ষোভের শুরুর দিনেই। শুক্রবার ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর আন্দিমেশ্কে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হন ওমিদ সুলতান (২১) নামের এক তরুণ।
এছাড়া গত তিন দিন ধরে বিভিন্ন শহরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ হচ্ছে বিক্ষোভকারীদের। সরকারবিরোধী জনতা বেশ কয়েকটি দোকানে আগুন দিয়েছে বলেও খবর পাওয়া গেছে।
বিভিন্ন শহরে চলমান বিক্ষোভ থেকে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বার্তাসংস্থা ইরনা। তবে ইরনার প্রতিবেদনে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহতের ব্যাপারটি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
রাজশাহীর সময়/জেড