সীতাকুন্ডে সুদের টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় আবুল মুনছুর নামের এক ব্যক্তিকে নির্মম ও নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টায় দায়েরকৃত মামলার এজাহারনামীয় প্রধান দুই আসামীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
শুক্রবার (১৩ মে) সকাল পৌনে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলো; -চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড থানার পুর্ব সৈয়দপুর গ্রামের মৃত নূর হোসেনের ছেলে এজাহারনামীয় প্রথম আসামী মোঃ সৌরভ হোসেন (২২) ও একই গ্রামের মৃত কালা মিস্ত্রির ছেলে মোঃ মীর হোসেন (৫০)।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন র্যাব-৭ এর সিনিঃ সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মোঃ নূরুল আবছার।
তিনি জানান, জমি থেকে ফসল উঠনোর জন্য গত ৭/৮ মাস পূর্বে জনৈক ব্যক্তি মোঃ মীর হোসেনের কাছ থেকে লাভের উপর ১০হাজার টাকা ধার করে ভুক্তভোগী আবুল মুনছুরের স্ত্রী মোছাঃ ঝরনা বেগম। এরই মধ্যে মোছাঃ ঝরনা বেগম ধার নেওয়া ১০ হাজার টাকা পাওনাদারকে পরিশোধ করে।
কিন্তু টাকা পরিশোধ করার পরও গত ১৩ এপ্রিল ২২ আসামী মোঃ মীর হোসেন ভুক্তভোগী আবুল মুনছুরের বাড়ি এসে তাকে ও তার স্ত্রীকে লাভের টাকার জন্য চাপ দেয়।
সুদখোরের কথায় তারা জানায় আর্থিকভাবে খুবই সমস্যার ভিতর আছে ঈদের পরে লাভের টাকা পরিশোধ করে দিবে। তখন মোঃ মীর হোসেন ভিকটিম ও তার স্ত্রীকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে বাড়ি থেকে চলে আসে। ঐদিন ইফতারের পর মোঃ মীর হোসেন তার সঙ্গীদের নিয়ে ভিকটিমের বাড়িতে এসে পূণরায় লাভের টাকা পরিশোধ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করলে তারা আবারো বলে ঈদের পরে লাভের টাকা পরিশোধ করবো।
ভুক্তভোগীর একথা কথা বলার পর মোঃ মীর হোসেন এবং তার সহযোগীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ভিকটিমকে গালাগালি এবং হত্যা করার হুমকি দিয়ে আবার বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।
ঘটনার দিন রাতে ভিকটিম আবুল মুনছুর তারাবির নামাজ পরে মসজিদ থেকে বাড়িতে আসার সময় পথিমধ্যে ঘাতক পাওনাদার মোঃ মীর হোসেন এবং তার সহযোগীরা মিলে ভিকটিমকে ঘেরাও করে পরিকল্পিতভাবে তাদের হাতে থাকা ধাড়ালো ছুরি, কিরিচ ও চাপাতি দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে তাকে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় নির্মম ও নৃশংসভাবে কুপিয়ে মারাত্বক জখম করে। ওই সময় ভিকটিম মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তখন দুস্কুতিকারীরা হুমকি প্রদান করে পালিয়ে যায়।
পরে গুরুতর আহত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে থাকা দেখে রাস্তার লোকজন তার বাড়িতে খবর দেয় এবং তৎক্ষনাত ভিকটিমের ছেলে এসে আসপাশের লোকজনের সহযোগীতায় তার বাবাকে গুরুতর আহত ও রক্তাক্ত অবস্থায় সীতাকুন্ড স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করে।
সেখানে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তার শরীরের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। বর্তমানে আহত মুনছুর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিউরোসার্জারী বিভাগে চিকিৎসাধীন আছে।
এ ঘটনায় আহতের ছেলে বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড থানায় ৪জন নামীয় এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করে যার মামলা নং-২০, তারিখ ১৪ এপ্রিল২২।
ঘটনার পর হতে আসামীরা আইন-শৃংঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপন করে। এই লোহমর্ষক ঘটনার সাথে জড়িত আসামীদের গ্রেফতারের জন্য র্যাব-৭, চট্টগ্রাম অত্যান্ত মানবিকতার সহিত বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহন করে।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৭, চট্টগ্রাম ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারী অব্যহত রাখে।
নজরদারীর এক পর্যায়ে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম জানতে পারে, মামলার মূলপরিকল্পনাকারী ও এজাহারনামীয় ১ ও ২নং আসামী গ্রেফতার এড়াতে চট্টগ্রাম মহানগরীর হালিশহর থানাধীন ছোটপুল এবং মীরসরাই থানাধীন নিজামপুর এলাকায় আত্মগোপন করে রয়েছে।
এমন তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার (১৩ মে) সকাল পৌনে ৭টায় র্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বিকার করে, নির্মম ও নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টার লোহমর্ষক ঘটনা তারাই ঘটিয়েছে।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ শেষে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।