সপ্তাহ খানেক আগেই ফরাসি প্রেসিডেন্ট হিসাবে দ্বিতীয় বারের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন ইমানুয়েল মাকরঁ। নির্বাচিত হওয়ার পর নরেন্দ্র মোদীই পর নরেন্দ্র মোদীই প্রথম বিদেশি রাষ্ট্রনেতা, যাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি।
তিন দিনের ইউরোপ সফরের শেষ পর্বে মাকরেঁর সঙ্গে বৈঠক করেন মোদী। এমনই সময়ে একটি ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় বিতর্ক ফ্রান্সের রাজনৈতিক মহলে।
মাকরেঁর দলের এক নেত্রীর তহবিলের খরচ পর্যবেক্ষণ করার সময় দেখা যায়, প্রায় ৭,০০০ ইউরো (ভারতীয় মুদ্রায় ৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকারও বেশি) দামি জামাকাপড় ও অন্তর্বাস কিনে খরচ করেছেন।
তিনি ক্যারোলি ডাবস্ট। পেশায় আইনজীবী। ২০১৬ সালে মাকরঁ দল গঠন করার পর তিনি এলআরইএম দলে যোগ দেন। ২০১৭ সালে দক্ষিণ ফ্রান্সের মন্টপেলিওর থেকে পার্লামেন্টের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন ক্যারোলি।
সেই বছরেই মাকরঁ তহবিলের অর্থ খরচ করার ক্ষেত্রে আরও কঠোর নিয়মবিধি জারি করেন। পার্লামেন্টের যে সব সদস্যের বেতন ৮৬ হাজার ইউরো (ভারতীয় মুদ্রায় ৭০ লাখের কাছাকাছি), তাঁদের খরচের রসিদ খতিয়ে দেখতে বলা হয় নিরীক্ষা বিভাগকে।
পার্লামেন্টের সদস্যদের খরচ নিয়ে তদন্ত অবশ্য ফ্রান্সেই প্রথম নয়। এর আগে ব্রিটিশ পার্লামেন্টেও এমনটা হয়েছিল। তদন্তে উঠে আসে, পার্লামেন্টের সদস্যরা তহবিলে সঞ্চিত বিশাল পরিমাণ অর্থ ব্যক্তিগত শখ-শৌখিনতার পিছনে খরচ করেন। ২০০৯ সাল থেকেই এ রকম নানা তথ্য প্রকাশ পেতে থাকে।
ইংল্যান্ডের নর্থ হাইকেহামের ডগলাস হগ ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রথম সদস্য, যিনি বিশালাকার দুর্গ পরিষ্কার করাতে ২,২০০ ইউরো (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ২ লাখ টাকা) খরচ করেছিলেন। এর পর এ ধরনের কেলেঙ্কারি আরও নজরে আসে।
আরও নজির রয়েছে। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য স্যর পিটার ভিগার্স তহবিলের অধিকাংশ অর্থ খরচ করে হাঁস রাখার জন্য একটি ভাসমান ‘ডাক হাউস’ কিনেছিলেন। পরে এই ‘ডাক আইল্যান্ড ইন্সিডেন্ট’-এর ব্যাপারে জানাজানি হলে তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তী কালে সেই ‘ডাক হাউস’ অবশ্য নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল।
ফ্রান্সের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি অডিট এজেন্সির আধিকারিকরা ২০২১ সাল থেকেই ক্যারোলিকে নিয়ে তদন্ত শুরু করেন। এত দিন এই তথ্যগুলি গোপন রেখেছিলেন তাঁরা।
কিন্তু দ্বিতীয় বার দল পুনর্গঠনের সময় মাকরঁ আবার খতিয়ে দেখতে বলেছিলেন। তখনই তথ্য-সহ সমস্ত প্রমাণ প্রকাশ্যে আসে।
২০১৮ সাল থেকেই ক্যারোলি ফ্রান্সের নামী ব্র্যান্ডের জামা ছাড়াও ৪২০ ইউরোর (ভারতীয় মুদ্রায় ৩৩ হাজার টাকার বেশি) অন্তর্বাস পর্যন্ত কেনেন। টানা তিন মাস তহবিলের টাকা খরচ করেই কেনাকাটা করেন ক্যারোলি।
ক্যারোলি প্রথমে এই অভিযোগ অস্বীকার করলেও সংবাদমাধ্যমে তাঁর কীর্তি প্রকাশ্যে আসায় তিনি নিজে থেকেই দলত্যাগ করেন।
ক্যারোলির দাবি, ‘‘আমি কাউকে ঠকাইনি। সাংসদ হিসেবে আমাকে যে ধরনের জামা পরতে হত, ব্যক্তিগত জীবনে আমি কখনোই সেগুলো পরতাম না।’’
তিনি জানান, ‘‘আমি রাজনৈতিক জীবন থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ ভাবে সরিয়ে নিলাম। এখন নিজের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটাতে পারব।’’
তিনি যে পরিমাণ টাকা খরচ করেছেন, তার সবটাই ফেরত দিয়ে দিয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি। তবুও তাঁকে এখন নানা ভাবে বিপর্যস্ত করা হচ্ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
ক্যারোলির কথায়, তাঁরই এক সহকর্মী তাঁকে ভুল তথ্য দিয়েছিলেন তহবিল খরচের বিষয়ে। তাঁর দাবি, ক্যারোলি যে অর্থ তহবিল থেকে ব্যক্তিগত জামাকাপড় কেনার জন্য খরচ করেছিলেন, তা যে তিনি করতে পারেন না, তা তাঁকে জানানো হয়নি।