সবচেয়ে ভালো লাগে ঘর পাওয়া মানুষের মুখের হাসি: প্রধানমন্ত্রী


অনলাইন ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 26-04-2022

সবচেয়ে ভালো লাগে ঘর পাওয়া মানুষের মুখের হাসি: প্রধানমন্ত্রী

একটা ঘর পেয়ে মানুষ যখন হাসে তখন সব থেকে বেশি ভালো লাগে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা এটাই তো চেয়েছিলেন।

মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, একটা ঘর পেলে মানুষের সব কিছু পেয়ে যায়। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে অনেক বেদখল জমি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এ জন্য প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে ঈদের আগে আশ্রয়ণ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ে ৩২ হাজার ৯০৪ জনকে ঘর উপহার দিচ্ছি। আমি বলবো, এটা ঈদ উপহার। 

শেখ হাসিনা বলেন, সবচেয়ে ভালো লাগে ঘর পাওয়া মানুষের মুখের হাসি। জাতির পিতা তো দুঃখী মানুষের মুখেই হাসি ফোটাতে চেয়েছেন। এই বাংলাদেশ যেন বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে, সে লক্ষ্যে কাজ করছি। ‍উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। যে জাতি রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করে, সে জাতি পিছিয়ে থাকতে পারে না।

তিনি বলেন, জাতির পিতা শেখ মুজিব যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলছিলেন, তার চলার পথ বাধাগ্রস্ত করতে অনেক চেষ্টা হয়েছে। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিতে তাকে তো সপরিবারে হত্যাই করলো। আমরা কিন্তু খুনি দুষ্কৃতকারীদের মুখে ছাই দিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছি। 

সরকার প্রধান বলেন, আমি জানি, দুঃখী মানুষের মুখের এই হাসি দেখে আমার বাবার আত্ম শান্তি পাবে। আপনারা দোয়া করবেন, এই দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়াবেন, তাদের মুখে হাসি ফোটাবেন। এটাই একজন রাজনীতিকের জীবনে সবচেয়ে বড় পাওয়া। টাকা-পয়সা কোনো কাজে আসবে না। করোনায় তো প্রমাণ পাইছেন। ধন, সম্পদ, অর্থ কিছু না। সম্পদের পেছনে ছুটে নিজেকে মানুষের কাছে অসম্মানিত করার অর্থ হয় না। বরং মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারলে সেটা বড় পাওয়া।

তিনি বলেন, আমরা আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করি। বাংলাদেশের মতো দেশ, যেখানে অনেক সীমাবদ্ধতা আছে, যেখানে অনেক বড় দেশ কল্পনাও করতে পারে না, আমরা কিন্তু করেছি। করোনার টিকা থেকে শুরু করে সবকিছু। করোনার টিকা কেনার টাকা হিসেব শুধু তার করলে হবে না। এটা দেওয়ার প্রক্রিয়ায় কত হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। আমরা কিন্তু বিনা পয়সায় দিয়েছি। অনেক উন্নত দেশ এটা দিতে পারে নাই। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াবো। কারো কাছে ভিক্ষা চেয়ে নয়। আত্মমর্যাদা নিয়ে বিশ্বে উন্নত সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে আমরা চলবো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বার বার মনে পড়ছে আমার বাবার কথা। তিনি শুধু ভাবতেন, কীভাবে দেশের মানুষ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান পাবে। কীভাবে তাদের ভাগ্য পরিবর্তন হবে। জাতির পিতার পথ ধরে আমরা মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছি। এটা দেখে নিশ্চয়ই জাতির পিতার আত্মা শান্তি পাবে।

তিনি বলেন, আমরা চাই, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সবসময় বলতেন, ‘আমার দেশের প্রতিটি মানুষ খাদ্য পাবে, আশ্রয় পাবে, উন্নত জীবনের অধিকারী হবে, এই হচ্ছে আমার স্বপ্ন।’ জাতির পিতা স্বাধীনতার পর দেশের ভূমিহীন-গৃহহীন, ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করেন। তিনি সংবিধানের ১৫(ক) অনুচ্ছেদে দেশের প্রতিটি নাগরিকের বাসস্থান পাওয়ার অধিকারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমিও তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে কাজ করে যাচ্ছি। কুষ্ঠুরোগী, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, চা শ্রমিক, ছিন্নমূলসহ সমাজের প্রতিটি অবহেলিত ভূমিহীন ও গৃহহীনদের বসস্থানের ব্যবস্থা করছি। এটা জাতির পিতার আদর্শের আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীরও দায়িত্ব।

তিনি বলেন, সারাদেশে ৮ লাখের ওপর মানুষ পেয়েছি, যারা ছিন্নমূল। আমরা প্রতিটি মানুষকে ঘরবাড়ি করে দেবো। শুধু খাস জমি নয়, জমি কিনেও ঘর করে দিচ্ছি বিনামূল্যে। জানি না পৃথিবীর কেউ এই উদ্যোগ নিয়েছে কি না। আমি জাতির পিতার আদর্শের কর্মী, শুধু তার কন্যা নয়। আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের জন্য ঘরবাড়ি নিশ্চিত করবো।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মানুষকে একটি শিক্ষা দিয়ে গেছে যে, ধন-সম্পদ-অর্থ এগুলো কিছুই না। আর মরলে তো সব রেখেই যাবেন। কবরে কিছু নিয়ে যেতে পারবেন না। কাজেই সম্পদের পিছে ছুটে নিজেকে মানুষের কাছে অসম্মানের জায়গায় রাখার কোনও মানে হয় না। বরং দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে একজন মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর চেয়ে বড় কিছু হতে পারে না। তাই বলছি দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে চলবেন। দুঃখী, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবেন—এটাই হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। একটা মানুষকে যদি একটু আশ্রয় দেওয়া যায়, তার মুখে হাসি ফোটানো যায়, তাহলে এর চেয়ে বড় পাওয়া একজন রাজনীতিবিদের কাছে আর কিছু হতে পারে না। এটাই তো সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হওয়া উচিত।

তিনি বলেন, অর্থ, বিত্ত, সম্পদ, টাকা-পয়সা কোনও কাজে লাগে না। করোনার প্রকোপের সময় আমরা দেখেছি, হাজার হাজার কোটি টাকার মালিকেরও কিছু করার ছিল না। যারা বাংলাদেশে কোনোদিন চিকিৎসাই নেয়নি, তাদের এখানেই ভ্যাকসিন নিতে হয়েছে। এর আগে সর্দি কাশি হলেও তারা উড়ে চলে যেত বিদেশে চিকিৎসার জন্য।

বরগুনা সদর উপজেলার আশ্রায়ণ প্রকল্পের বাড়ি পাওয়া তৃতীয় লিঙ্গের একজনের বক্তব্য শোনেন প্রধানমন্ত্রী। 

এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, একটা মানুষ যখন জন্মগ্রহণ করেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কাকে কীভাবে জন্ম দেবেন, কেউ বলতে পারেন না। তৃতীয় লিঙ্গের বলে কাউকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে এটা কিন্তু আমাদের ধর্মে বলা নেই। তারাও পরিবারেরই অংশ, পরিবারেরই একজন। ভবিষ্যতে এমন কোনও শিশু জন্ম নিলে সে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না। সে পরিবারের একজন হিসেবেই জীবনযাপন করবে।

তিনি বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের হয়ে কেউ জন্ম নিলে সে পরিবারের সম্পদের অংশও পাবে। ইসলাম ধর্মেও বলা আছে, সে সম্পদের অংশ পাবে। কেউ যদি একটু মেয়েলি স্বভাবের হয় সে মেয়ের অংশ এবং পুরুষের মতো আচরণ হলে পুরুষের অংশ পাবে; এটা ধর্মীয় নির্দেশনাও আছে। আগামীতে কোনও সন্তান এভাবে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ নির্দেশনা শুধু বরগুনার জন্য নয়, সারাদেশের সবার জন্যই। এটা সবার জন্যই আমি বলে যেতে চাই, এটা আমাদের মনে রাখতে হবে তারা আমাদের পরিবারেরই একজন। কারণ আল্লাহর সৃষ্টির উপর কারও হাত দেওয়ার অধিকার কারও নেই।

২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি প্রথম পর্যায়ে ৬০ হাজার ১৯১টি ঘর, ২০ জুন ৫৩ হাজার ৩০০টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মিত মোট ঘরের সংখ্যা ১ লাখ ১৭ হাজার ৩২৯টি। তৃতীয় পর্যায়ে নির্মাণাধীন একক ঘরের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৬৭৪টি। এর মধ্যে আজ ৩২ হাজার ৯০৪টি হস্তান্তর হয়েছে।

জানা গেছে, মুজিববর্ষ উপলক্ষে একটি পরিবারও গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না— প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন ঘোষণার পর থেকে যাদের নিজস্ব জমি নেই, ঘর নেই তাদের জমি ও ঘর দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ অধীনে এই বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে সরকারি খাস জায়গা কিংবা দখল হওয়া জায়গা দখলমুক্ত করে। ইতোমধ্যে দেশের আট বিভাগে বিপুল পরিমাণ বেদখল হওয়া সরকারি খাস জমি উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা এই জমির মূল্য প্রায় ২ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। কয়েকটি আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, ঘরগুলো বেশ মজবুতভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে। ঘরসহ বাড়ি যাদের দেওয়া হবে, আগেই তাদের বলে দেওয়া হয়েছে। এতে করে ঘরগুলো সঠিক তদারকির সুযোগ পাচ্ছেন ভূমিহীনরা।

রাজশাহীর সময়/এইচ


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]