নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের শিশু তাসপিয়া হত্যার ৪-৫ দিন আগে রিমন, মহিন ও বাদশাসহ সন্ত্রাসীরা মহিনের বাসার সামনে হত্যার চূড়ান্ত পরিকল্পনা করে। পরে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহারের জন্য ২১ হাজার টাকায় একটি আগ্নেয়াস্ত্র কেনা হয়। যার টাকার জোগান দেয় সন্ত্রাসী মহিন।
বুধবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে র্যাব-১১ নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, আমরা মর্মান্তিক এ ঘটনার ৬ দিন পর মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) রাতে মামলার প্রধান আসামি শুটার রিমনসহ পাঁচজনকে অস্ত্রসহ নোয়াখালীর সূবর্ণচরের চরজব্বর থানার চরক্লার্ক থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন: মামলার প্রধান আসামি হাজীপুরের লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের মৃত মমিন উল্যাহর ছেলে রিমন (২৩), ৩নং আসামি একই গ্রামের রুহুল আমিন প্রকাশ ছলিম উল্যাহর ছেলে সোহেল উদ্দিন প্রকাশ মহিন উদ্দিন (২৪), ৪নং আসামি সাহাব উল্যাহর ছেলে আকবর হোসেন (২৬), ৫নং আসামি আবদুর রশিদের ছেলে সুজন (২৬) ও ১০নং আসামি লতিফপুর গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে নাঈমুল ইসলাম (২১)।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১১ এর অভিযানে প্রায় ৩০ মিনিট সন্ত্রাসীদের সঙ্গে গুলিবিনিময় হয়। পরে তাদের পাঁচজনকে অক্ষত অবস্থায় গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে বিদেশি পিস্তল ও দেশীয় অস্ত্রসহ গোলাবারুদ জব্দ করা হয়।
র্যাব আরও জানায়, এ দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী চক্রের মূল হোতা রিমন। ২০১৬ সালে সে অপরাধ জগতে প্রবেশ করে। রিমন বাহিনী গঠন করে তার এলাকায় বিভিন্ন সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। এ ঘটনায় রিমন পরিকল্পনা, অস্ত্র ক্রয়, ব্যবহার ও হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করেছে বলে র্যাবের কাছে স্বীকার করেছে। তার বিরুদ্ধে বেগমগঞ্জ থানায় হত্যাচেষ্টা ও মারামারির আগের ৮টি মামলা রয়েছে।
এছাড়া গ্রেফতার মহিন উদ্দিন ওই দলের সেকেন্ড ইন কমান্ডের ভূমিকা পালন করে। শিশু তাসপিয়া হত্যার ঘটনায় মাওলানা আবু জাহেরকে হত্যার পরিকল্পনা, অংশগ্রহণ ও অস্ত্র কেনার অর্থ জোগানদাতা সে। তার বিরুদ্ধে বেগমগঞ্জ থানায় মারামারি ও হত্যাচেষ্টার আরও ৬টি মামলা রয়েছে।
অন্যদিকে গ্রেফতার সুজন, নাঈম ও আকবরও এলাকায় সন্ত্রাসী রিমনের সহযোগী হিসেবে পরিচিত এবং চাঁদাবাজি-সন্ত্রাসীসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। সুজনের নামে বেগমগঞ্জ থানায় একটি এবং আকবরের নামে হত্যাচেষ্টাসহ তিনটি মামলা রয়েছে।
র্যাবের দাবি, গ্রেফতারকৃতরা শিশু তাসপিয়া হত্যার ঘটনার পর পর ঢাকায় আত্মগোপন করে। পরে আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় তারা আত্মগোপনের জন্য নোয়াখালীর চরাঞ্চলকে বেছে নেয়।
ঘটনার বর্ণনায় র্যাব জানায়, ১৩ এপ্রিল বিকেলে মাওলানা আবু জাহের তার শিশুকন্যা তাসপিয়াকে চকলেট ও চিপস কিনে দেওয়ার জন্য হাজীপুর গ্রামের একটি দোকানে যান। এ সময় কুখ্যাত সন্ত্রাসী রিমনও তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে ওই স্থানে উপস্থিত হয়। ঘটনাস্থলে পূর্বের ক্ষোভের জেরে রিমন ও তার সহযোগীরা মাওলানা আবু জাহেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এক পর্যায়ে আসামিরা ইট ছুড়ে মারলে মাওলানা জাহেরের শিশুকন্যা তাসপিয়া মাথায় মারাত্মক আঘাত পায়। পরে আত্মরক্ষার্থে আহত কন্যাকে নিয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা হলে রিমন তার হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে বাবা ও মেয়েকে গুলি করতে থাকে। এতে বাবা-মেয়ে দুজনই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক জখম হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য নোয়াখালী থেকে ঢাকায় নেওয়ার পথে শিশু তাসপিয়ার মৃত্যু হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১১ (সিপিসি-৩, কোম্পানি কমান্ডার) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার মো. শামীম হোসেনসহ অভিযানে অংশগ্রহণকারী র্যাবের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ১৪ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) তাসপিয়ার খালু হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে ১৭ জনের বিরুদ্ধে এবং ১০-১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে বেগমগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের (নম্বর-২৪) করেন। ওই মামলায় পুলিশ এজাহারভুক্ত আরও চারজনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়।
রাজশাহীর সময়/এএইচ