ইসলামীক ডেস্ক: মৃত্যু এমন এক সুনিশ্চিত বিষয়; যা প্রত্যেকের জন্য নির্ধারিত। যেখানে জীবনের অস্তিত্ব আছে; মৃত্যু সেখানে আসবেই। পৃথিবীর সব প্রাণীকেই মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হবে। তবে মানুষের মৃত্যুর পর আত্মীয়-স্বজন কিংবা আপনজন শোক ও কষ্টে এমন কিছু কাজ করে থাকে; যা ইসলামে নিষিদ্ধ। সে কাজগুলো কী?
মৃত্যু আসবেই এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমের তিন জায়গায় সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন। কোরআনের এ ঘোষণাগুলো মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত হতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তাহলো-
১. کُلُّ نَفۡسٍ ذَآئِقَۃُ الۡمَوۡتِ ؕ وَ اِنَّمَا تُوَفَّوۡنَ اُجُوۡرَکُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ ؕ فَمَنۡ زُحۡزِحَ عَنِ النَّارِ وَ اُدۡخِلَ الۡجَنَّۃَ فَقَدۡ فَازَ ؕ وَ مَا الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَاۤ اِلَّا مَتَاعُ الۡغُرُوۡرِ
‘জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর কেয়ামতের দিনই তোমাদের কর্মফল পূর্ণমাত্রায় প্রদান করা হবে। সুতরাং যাকে আগুন (জাহান্নাম) থেকে দূরে রাখা হবে এবং (যে) বেহেশতে প্রবেশ করবে, সেই হবে সফলকাম। আর দুনিয়ার জীবন ছলনাময় ভোগ ব্যতীত কিছুই নয়।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৮৫)
২. کُلُّ نَفۡسٍ ذَآئِقَۃُ الۡمَوۡتِ ؕ وَ نَبۡلُوۡکُمۡ بِالشَّرِّ وَ الۡخَیۡرِ فِتۡنَۃً ؕ وَ اِلَیۡنَا تُرۡجَعُوۡنَ
‘জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে; আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা বিশেষভাবে পরীক্ষা করে থাকি। আর আমার কাছে তোমরা ফিরে আসতে হবে।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৩৫)
৩. کُلُّ نَفۡسٍ ذَآئِقَۃُ الۡمَوۡتِ ۟ ثُمَّ اِلَیۡنَا تُرۡجَعُوۡنَ
‘প্রত্যেক আত্মাই মরণের স্বাদ গ্রহণ করবে; এরপর তোমরা আমারই কাছে ফিরে আসবে।’ (সুরা আনকাবুত : আয়াত ৫৭)
সুতরাং পৃথিবীর সব প্রাণীই মৃত্যুবরণ করবে। এটাই আল্লাহ তাআলার বিধান। মৃত্যুর পর আত্মীয়-স্বজনের জন্য ৩ দিন শোক পালন করাও বৈধ। কিন্তু কেউ মারা গেলে ছেলে-মেয়ে, পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজন শোক ও কষ্টে এমন কিছু কাজ করে বসে; যা ইসলামে নিষিদ্ধ। যা কখনো করা যাবে না। তাহলো-
১. হাউ-মাউ করে উচ্চস্বরে বিলাপ করা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষের মাঝে দুটি বিষয় রয়েছে যাতে তারা কুফরি করে- ১. বংশের খোঁটা দেয়া, ২. মৃত ব্যক্তির উপর বিলাপ করে কাঁদা। এগুলো নিষেধ।’
২. কারো মৃত্যুশোকে নিজের গালে বা শরীরে আঘাত করা। বুক চাপড়ানো এবং মাটিতে কপাল আঁছড়ানো।
৩. কাপড়-ছোপড় বা পরনের পোশাক ছিড়ে ফেলা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনে, ‘যে ব্যক্তি গাল চাপড়ায় বা জামার গলা বা পকেট ছিড়ে ফেলে এবং জাহিলিয়াতের আহ্বানের মতো আহ্বান করে, সে আমাদের অন্তর্ভূক্ত নয়।’
৪. চুল কামিয়ে ফেলা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যুর ভয়ে উচ্চ আওয়াজকারীনী নারী থেকে এবং মাথামুণ্ডনকারীনী নারী থেকে এবং অধিক কঠিনতা অবলম্বনকারীনী নারী থেকে পবিত্র ছিলেন।
৫. মৃত্যু শোক প্রকাশে কবিতা আবৃত্তি করা।
৬. দিনের কিছু সময় মৃত ব্যক্তির উপর দুঃখ প্রকাশের জন্য কবিতা আবৃত্তি করা।
৭. মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর সংবাদ তার পক্ষ থেকে ইলান করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শোকসংবাদ ঘোষণায় নিষেধ করেছেন।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, কারো মৃত্যুর পর উল্লেখিত কাজগুলো না করা। কেননা ইসলাম এসব কাজকে নিষিদ্ধ করেছেন।
মৃতব্যক্তি ও শোকাহতদের জন্য এভাবে দোয়া করুন-
أَعْظَمَ اللهُ أَجْرَكَ وَ اَحْسَنَ عَزَائَكَ وَ غَفَرَ لِمَيِّتِكَ
উচ্চারণ : ‘আজামাল্লাহু আঝরাকা ওয়া আহসানা আযাআকা ওয়া গাফারা লিমায়্যিতিকা।’
অর্থ : ‘আল্লাহ তাআলা তোমার প্রতিদান বাড়িয়ে দিন। তোমাকে উত্তম সান্ত্বনা দিন। তোমার মৃতব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিন।’ (নববি : আল আযকার)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে মৃত্যু সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সুন্নাত পন্থায় শোক পালন করার তাওফিক দান করুন। আত্মীয়-স্বজন মারা গেলে শোক প্রকাশ করার তাওফিক দান করুন।