যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের স্টামফোর্ড নগর ভবনের সামনে উড়ল বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। গত সোমবার মহান বিজয় দিবসে আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলন করা হয় বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা। কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের কোন সরকারি ভবনের সামনে এর আগে কখনো বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়নি বলে জানা গেছে।
সোমবার ( ১৬ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবসে স্টামফোর্ড অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের কর্মীরা নগর ভবনের সামনে পতাকা উত্তোলন কর্মসূচির আয়োজন করেন। এতে নেতৃত্ব দেন মোহাম্মদ মহিউদ্দিন হারুন। পতাকা উত্তোলন কর্মসূচিতে তাকে সহায়তা করেন যথাক্রমে-
কমিউনিটি নেতা নিজাম উদ্দিন, জাবের শফি, আবুল কালাম, ইমরান রহিম, সানি ওয়াহিদ, ইসমাইল শামিম, জাহাঙ্গীর সালিম, আব্দুল হামিদ, রনি আলিম, সাইদুল হক সাঈদ, সবুজ চৌধুরী, জসিম রানা, নাদিম আলী, নাসির শেখ, বাচন আলী ও জাফর শফি প্রমুখ।
পতাকা উত্তোলন কর্মসূচির শুরুতেই এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবসের ৫৪ বছর পর স্টামফোর্ড শহর ভবনের সামনে বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা উড়াতে সক্ষম হয়েছি। এ কাজে সহায়তার জন্য স্টামফোর্ড সিটি মেয়র ও কাউন্সিলরদের আন্তিরিকভাবে ধন্যবাদ জানান হয়। তাদের এ অবদানের কথা কানেকটিকাট প্রবাসী বাংলাদেশিরা চিরদিন স্মরণ করবে বলে উল্লেখ করেন বক্তারা।
উল্লেখ্য, কানেকটিকাটের স্ট্যামফোর্ড একটি প্রাণবন্ত শহর। এ শহরের সমৃদ্ধ ইতিহাস এটি কীভাবে একটি ছোট কৃষি বসতি থেকে একটি সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে বিকশিত হয়েছে। গত কয়েক দশকে এই শহরে কয়েক হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি বসতি গড়ে তুলেছেন। তারা নিয়মিত দেশীয় খেলাধুলার পাশাপাশি বাংলাদেশের নানা সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড নিয়েই ব্যস্ত থাকেন বলে জানান স্টামফোর্ড অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের কর্মকরতারা।
১৬৪১ সালে স্ট্যামফোর্ডে ইংরেজ পিউরিটানরা বসতি স্থাপন করেন। যারা এই জমি সিওয়ানোই নেটিভ আমেরিকান উপজাতির কাছ থেকে ক্রয় করেছিলেন। শহরটি মূলত নিউ হ্যাভেন কলোনির অংশ ছিল এবং এর নামকরণ করা হয় ইংল্যান্ডের লিংকনশায়ারের স্ট্যামফোর্ডের নামে। এই অঞ্চলটি একটি কৃষি সম্প্রদায় হিসেবে বিকশিত হয়, যেখানে স্থানীয় ব্যবহার ও বাণিজ্যের জন্য পণ্য উৎপাদন করা হতো।
স্ট্যামফোর্ড ১৮০০ সালের শুরুর দিকে শিল্পায়ন শুরু করে। যেখানে মিল এবং কারখানাগুলির স্থাপনা হয়। লং আইল্যান্ড সাউন্ডের পাশে এবং নিউ ইয়র্ক সিটির নিকটবর্তী অবস্থান এটিকে বাণিজ্যের জন্য আকর্ষণীয় করে তোলে। নিউ ইয়র্ক এবং নিউ হ্যাভেন রেলরোডের প্রবর্তন ১৯শ শতকের মাঝামাঝি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সংযোগ বৃদ্ধি করে।
২০শ শতকের শুরুতে স্ট্যামফোর্ড নিউ ইয়র্ক সিটিতে কাজ করা মানুষের জন্য একটি শহরতলির আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে। গাড়ির প্রসার এবং উন্নত পরিবহন অবকাঠামো এই প্রবণতাকে ত্বরান্বিত করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর স্ট্যামফোর্ডে উল্লেখযোগ্য কর্পোরেট বৃদ্ধি ঘটে, অনেক কোম্পানি এখানে তাদের সদর দপ্তর স্থাপন করে।
স্ট্যামফোর্ড এখন কানেকটিকাটের বৃহত্তম শহরগুলির একটি এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কেন্দ্র। এটি অসংখ্য ফর্চুন ৫০০ কোম্পানির আবাসস্থল এবং এর ব্যস্ত ডাউনটাউন, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং প্রাণবন্ত শিল্প ও বিনোদন দৃশ্যের জন্য পরিচিত।
নিউ ইয়র্ক সিটির নিকটবর্তী কৌশলগত অবস্থান এটিকে বসবাস ও কাজের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান করে তুলেছে। স্ট্যামফোর্ড তার ঐতিহাসিক শিকড়কে আধুনিক নগরায়নের সাথে মিশিয়েছে। এটি একটি অনন্য চরিত্রের সঙ্গে গতিশীল শহর হিসেবে গড়ে তুলেছে।