গাজ়ায় ইজ়রায়েলি হামলা চলছেই। গত ২৪ ঘণ্টায় গোটা ভূখণ্ডে আরও ৩২ জন প্যালেস্টাইনির মৃত্যু হয়েছে। জখম কমপক্ষে ৫৪ জন। তাঁদের চিকিৎসাও উপায় নেই, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পূর্ণ অকেজো। হাতেগোণা কয়েকটি হাসপাতাল ধুঁকতে ধুঁকতে চলছে। এর মধ্যে আজ উত্তর গাজ়ার কামাল আদওয়ান হাসপাতাল ঘিরে ফেলে ইজ়রায়েলি বাহিনী (আইডিএফ)। তাদের ড্রোন, ট্যাঙ্কের সামনে দাঁড়িয়ে হাসপাতালের ডিরেক্টর কাতর আবেদন জানান। কিন্তু আইডিএফ অবস্থানে অনড়। তাদের নির্দেশ, হাসপাতাল ফাঁকা করে দিতে হবে। রোগী ও কর্মীদের বেরিয়ে যেতে হবে।
কয়েকটি মাত্র হাসপাতাল চালু রয়েছে গাজ়ায়। ওষুধ নেই, ব্যান্ডেজ নেই.. কয়েক জন চিকিৎসক কাজ করে যাচ্ছেন। কামাল আদওয়ান হাসপাতালের চিকিৎসক হাসাম আবু সাফিয়া ভিডিয়ো বার্তা বলেন, ‘‘এখন একেবারে হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে বোমা ফেলছে ওরা।’’ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে তাঁর আর্তি, হাসপাতালে ৬৬ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। তাঁদের বাঁচাও। তিনি বলেন, ‘‘নার্সারি, প্রসূতি বিভাগ, সব বিভাগে হামলা চালানো হচ্ছে। যে কোনও ধরনের অস্ত্র প্রয়োগ করা হচ্ছে। এমনকি স্নাইপার ফায়ার, ট্যাঙ্ক থেকে গোলা ছোড়া, কোয়াডকপ্টার... সব।’’ এক ঘণ্টায় চার বার গোলাবর্ষণ হয়েছে। বিভিন্ন দিক থেকে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম মারফত জানা যাচ্ছে, এক দিকে হাসপাতাল ফাঁকা করে দিতে বলা হচ্ছে, অন্য দিকে বাইরের পরিবেশেও একটা ভয় সৃষ্টি করা হচ্ছে। এত দিন হাসপাতালগুলোর বারান্দাতেও জখম মানুষজন থাকছিলেন। তাঁরা এখন জানলার কাছে যেতে পারছেন না। দেখলেই গুলি। দেওয়াল ভেদ করে গুলি এসে বেশ কয়েক জন জখম হয়েছেন হাসপাতালে।
১৪ মাস হয়ে গেল, একটানা ইজ়রায়েলি হামলা চলছে গাজ়ায়। ২৪ লক্ষ জনসংখ্যার সকলেই ঘরহারা, আশ্রয় শিবিরগুলোতে দিন কাটছে। ৪৫ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে বেশির ভাগই মহিলা ও শিশু। গত ২৪ ঘণ্টায় যে ৩৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন, তারও একটা বড় অংশ শিশু। জাবালিয়া শিবিরে ৫ জন মারা গিয়েছেন, তার মধ্যে চার জনই শিশু। অন্য একটি জায়গায় একটি স্কুলে (শরণার্থী শিবিরে) আট জন প্রাণ হারিয়েছেন, তার মধ্যে চারটিই বাচ্চা। ইজ়রায়েলি বাহিনীর দাবি, তারা হামাসের ঘাঁটি নিশানা করে হামলা চালিয়েছে।
এ সবের মধ্যে গাজ়ায় জলাভাব, খাদ্যাভাব, সব সীমা ছাড়াচ্ছে। ‘ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম’ জানিয়েছে, গাজ়ায় ত্রাণ ঢুকতে দেওয়ার অনুরোধ নিয়ে তাদের কাছে শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে। তার মধ্যে তিনটি আবেদন মঞ্জুর করেছে ইজ়রায়েল। উত্তর গাজ়ার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। বিশেষ করে বেট হানুন, বেট লাহিয়া ও জাবালিয়া। ত্রাণ ঢুকতে না দেওয়া, শিশু-হত্যা, সর্বোপরি গণহত্যা, অসংখ্য অভিযোগ ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি পোপ ফ্রান্সিস, ইজ়রায়েল যা করছেন, তা ‘নিষ্ঠুরতা’ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাতে ইজ়রায়েলের জবাব, ‘‘নিষ্ঠুরতা হল, সন্ত্রাসবাদীরা শিশুদের আড়ালে গিয়ে লুকোচ্ছে। সন্ত্রাসবাদীরা ইজ়রায়েলি শিশুদের হত্যা করছে। নিষ্ঠুরতা হল একশো জন বন্দিকে ৪৪২ দিন ধরে আটকে রাখা। তার মধ্যে একেবারে খুদে শিশু রয়েছে, বাচ্চারা রয়েছে।