মহানগরীতে ছাত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগে থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ, মালিক-সহ গ্রেফতার ৩


নিজস্ব প্রতিবেদক , আপডেট করা হয়েছে : 23-12-2024

মহানগরীতে ছাত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগে থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ, মালিক-সহ গ্রেফতার ৩

রাজশাহী মহানগরীর একটি ছাত্রীনিবাসে নিম্নমানের খাবারের প্রতিবাদ করায় কয়েকজন ছাত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগে গভীর রাতে বোয়ালিয়া মডেল থানা ঘেরাও করে মেস মালিক ও তার দুই ছেলেকে গ্রেফতারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন ছাত্রীর।

পরে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে রবিবার  রাত ১টার দিকে মেস মালিক ও তার দুই ছেলেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। 

জানা গেছে, মহানগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত এই ছাত্রীনিবাসটির নাম ‘ঝলক-পলক মেস’। প্রায় ৩০০ ছাত্রী থাকেন ওই ছাত্রীনিবাসে । মালিকের শর্তানুযায়ী প্রত্যেকের কাছে অগ্রিম ৭ মাসের ভাড়া নেওয়া হয়েছে। রোববার বেলা ১১টার দিকে নিম্নমানের খাবারের প্রতিবাদ করায় তাদেরকে নির্যাতন করা হয়। পরে দিনভর ছাত্রীদের ছাত্রীনিবাসে অবরুদ্ধ করে রাখে মেস মালিক ও তার দুই ছেলে ঝলক ও পলক। পরে ছাত্রীদের থানা ঘেরাও বিক্ষোভের পর রোববার রাত ১টার দিকে পুলিশ মেস মালিক আব্দুল মতিন ও তার দুই ছেলেকে গ্রেফতার করে। 

ছাত্রীরা জানান, তাদের বেশিরভাগ ছাত্রীই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রস্তুতির জন্য এই ছাত্রীনিবাসে থাকেন। এই ছাত্রীনিবাসে টাকা বেশি নেওয়া হলেও খাবারের মান খুবই খারাপ। পানি সরবরাহ ব্যবস্থাও ভালো না। এসব নিয়ে প্রতিবাদ করলেই মালিক ও তার ছেলেরা ছাত্রীদের ওপর নির্যাতন করে থাকেন। মালিকের ছেলেরা নানা অজুহাতে ছাত্রীদের কাছ থেকে টাকা পয়সাও আদায় করেন। মালিক চুক্তি করে ছাত্রীদেরকে তিনবেলা খাবার সরবরাহ করেন। ছাত্রীরা যে পরিমাণ টাকা দেন খাবারের মান সে তুলনায় খুবই খারাপ।   

জানা গেছে, রোববার সকালে নিম্নমানের খিচুড়ি পরিবেশনের প্রতিবাদ করেন এক ছাত্রী। তিনি ওই ছাত্রীনিবাসে থাকবেন না বলে জানিয়ে দেন। এ সময় মালিকপক্ষ ওই ছাত্রীকে জানায়, ছাত্রীনিবাসে ওঠার সময় তিনি যে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেছেন সেখানে আছে যে ৭ মাসের আগে ছাত্রীনিবাস ছাড়া যাবে না। ওই ছাত্রী চুক্তিপত্র দেখতে চাইলে মালিক জানান, আইনজীবী ছাড়া এটা দেখা যাবে না।

নিজের স্বাক্ষর করা চুক্তিপত্র দেখতে আইনজীবী লাগবে কেন, এমন প্রশ্ন তুললে ছাত্রীনিবাসের মালিক তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। মালিকের দুই ছেলে ঝলক ও পলক এসে ওই ছাত্রীকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। এতে অন্য ছাত্রীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে ঝলক ও পলক তার সহযোগীদের নিয়ে গিয়ে ছাত্রীদের হুমকি দিয়ে বলেন, তারা তাদেরকে রাজশাহীতেই থাকতে দেবেন না।

ছাত্রীদের অভিযোগ, সকালের ওই ঘটনার পর মালিক মতিন ও তার দুই ছেলে ঝলক ও পলক ছাত্রীনিবাসে ছাত্রীদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। তাদের বলা হয়, রাতে ফটকের তালা খুলে দেওয়া হবে। তখন সবাইকে একযোগে ছাত্রীনিবাস ছাড়তে হবে। তখন ছাত্রীরা ফোন করে তাদের বন্ধুদের সহযোগিতা চান। তখন অনেকেই ছাত্রীদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন। আসেন স্থানীয় লোকজনও।  

এরপর রাত ১২টার দিকে স্থানীয় কিছু লোকজন গিয়ে ছাত্রীনিবাসের তালা ভেঙে ছাত্রীদের বের করেন। খবর পেয়ে সেখানে যান নগরীর বোয়ালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মেহেদী মাসুদ। তিনি ছাত্রীনিবাস থেকে প্রথমে মতিন ও ছেলে পলককে আটক করে নিয়ে যান। এ সময় তিনি মামলা করার জন্য ভুক্তভোগী ছাত্রীদের থানায় ডাকেন। পরে রাত ১২টার দিকে ছাত্রীরা মিছিল নিয়ে থানায় যান। ভুক্তভোগী ছাত্রী মামলা করার পর রাত ২টার দিকে তারা থানা থেকে বের হন।

বোয়ালিয়া থানার ওসি মেহেদী মাসুদ বলেন, ‘আমি খবর পেয়েই সেখানে গিয়ে দুজনকে আটক করি। এরপর ভুক্তভোগীরা চারজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। তিনজনকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।’

ওসি জানান, সোমবার গ্রেফতার তিন আসামিকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে। মামলায় অজ্ঞাত আরও কয়েকজন আসামি করা হয়েছে। তাদেরও শনাক্ত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) হাফিজুর রহমান বলেন, ছাত্রীনিবাসটিতে মালিক ও মালিকেরা ছেলেরা এক ছাত্রীকে শারীরীকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন, শ্লীলতাহানি ঘটিয়েছেন। খবর পেয়েই পুলিশ সেখানে যায় এবং তিনজনকে হেফাজতে নেয়।

তিনি বলেন, রাজশাহীতে অনেক মেস। এটা আমাদের মাথাতেই আসেনি যে, শিক্ষার্থীরাও এ রকম নির্যাতনের মুখে থাকেন। এটা এখন আমাদের নলেজের মধ্যে আসল। আমরা সজাগ থাকব। কেউ এ রকম ঘটনার মুখোমুখি হলে ৯৯৯ বা থানায় ফোন করলে আমরা দ্রত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]