৩৮ মিনিট চলেছিল বিশ্বের সবচেয়ে ছোট যুদ্ধে মৃত ৫০০ সেনা, ধ্বংস প্রাসাদ ও জাহাজ!


আন্তর্জাতিক ডেস্ক: , আপডেট করা হয়েছে : 10-12-2024

৩৮ মিনিট চলেছিল বিশ্বের সবচেয়ে ছোট যুদ্ধে মৃত ৫০০ সেনা, ধ্বংস প্রাসাদ ও জাহাজ!

এক দিকে ইজ়রায়েলের সঙ্গে হামাস এবং হিজ়বুল্লার সংঘাতে পশ্চিম এশিয়ার আকাশে যুদ্ধের দামামা বাজছে। অন্য দিকে, পূর্ব ইউরোপে আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চলছে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে।

যুদ্ধের ইতিহাস বলছে, বিশ্বযুদ্ধ, ভিয়েতনাম যুদ্ধ-সহ অনেক যুদ্ধই চলেছে বেশ কয়েক বছর ধরে। অ্যাংলো-ফরাসি যুদ্ধ, রোমান-পার্সিয়ান যুদ্ধগুলি আবার ৬০০-৭০০ বছর ধরে চলেছিল। খুব কম করে হলেও এক থেকে দেড় দিন ধরে চলা যুদ্ধের নিদর্শনও অনেক।

তবে অনেকেই জানেন না, বিশ্বের সবচেয়ে কম সময় ধরে চলা যুদ্ধের ব্যাপারে, যা আশ্চর্যজনক ভাবে চলেছিল মাত্র ৩৮ মিনিট। কথা হচ্ছে, ১৮৯৬ সালের অ্যাংলো-জাঞ্জিবার যুদ্ধের। যদিও ইতিহাসবিদদের কারও কারও দাবি, যুদ্ধটি ৪৫ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল।

১৮৯৬ সালের ২৭ অগস্ট সকাল ৯টা থেকে সেই যুদ্ধ শুরু হয়। শেষ হয়ে যায় ৯টা ৩৮ মিনিটে, যা বিশ্বের সবচেয়ে স্বল্পস্থায়ী যুদ্ধ হিসাবে ইতিহাসের বুকে জায়গা করে নিয়েছে।

কিন্তু কেন সেই যুদ্ধ এত কম সময় ধরে চলেছিল? এক নজরে দেখে নেওয়া যাক সেই যুদ্ধের ইতিহাস।

জাঞ্জিবার সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকার নিয়ে বিরোধের কারণে ব্রিটিশ এবং জাঞ্জিবারের তৎকালীন সুলতানের বাহিনীর মধ্যে সেই যুদ্ধ হয়েছিল।

পূর্ব আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ার একটি অর্ধ স্বশাসিত দ্বীপপুঞ্জ হল জাঞ্জিবার। ভারত মহাসাগরের তীরে থাকা এই দ্বীপ আগে নিজেকে স্বাধীন দেশ হিসাবে বিবেচনা করত।

১৪৯৯ সালে জাঞ্জিবারের প্রধান দ্বীপ উনগুজা বা জাঞ্জিবার দ্বীপে গিয়ে বসতি স্থাপন করে পর্তুগিজেরা। কিন্তু ১৬৯৮ সালে তাদের বিতাড়িত করে সেই দ্বীপের দখল নেন ওমানের সুলতান।

সুলতান মাজিদ বিন সইদ ১৮৫৮ সালে ওমান থেকে আলাদা হয়ে দ্বীপটিকে স্বাধীন ঘোষণা করেছিলেন। স্বীকৃতি দিয়েছিল ব্রিটিশেরা।

১৮৯৬ সালে জাঞ্জিবারের ব্রিটিশপন্থী সুলতান হামাদ বিন থুওয়াইনির আকস্মিক মৃত্যুর পর যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয় সেখানে।

থুওয়াইনির উত্তরসূরি সুলতান খলিদ বিন বারগাশ ব্রিটিশদের কর্তৃত্ব অস্বীকার করেন। ব্রিটিশদের অনুমোদন ছাড়া সাম্রাজ্যের ক্ষমতাও নিজের দখলে নেন।

অন্য দিকে, ব্রিটিশেরা চেয়েছিল জাঞ্জিবার সাম্রাজ্যের ক্ষমতা যাক তাঁদের অনুগত নেতা হামুদ বিন মহম্মদের কাছে। তাই খলিদকে গদি ছাড়ার নির্দেশ দেয় ব্রিটিশ বাহিনী।

খলিদ অবশ্য সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। উল্টে জানান, তিনি লড়াই করার জন্য প্রস্তুত। এর পর পাঁচটি যুদ্ধজাহাজ, ১৫০ নৌসেনা এবং জাঞ্জিবারের অনুগতদের একটি দল নিয়ে ২৭ অগস্ট সকালে খলিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামে ব্রিটিশেরা।

কয়েক মিনিটের মধ্যে ব্রিটিশ বাহিনীর হামলায় খলিদ-অনুগত প্রায় ৫০০ সেনার মৃত্যু হয়। ইংরেজদের বোমাবর্ষণ এতটাই তীব্র ছিল যে কয়েক মিনিটের মধ্যে খলিদের প্রাসাদও পুড়ে যায়।

সকাল ৯টা ৪০ মিনিট নাগাদ যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে জার্মান দূতাবাসে পালিয়ে যান খলিদ। অর্থাৎ, ৪০ মিনিটের মধ্যে শেষ হয়ে যায় সেই যুদ্ধ।

এর পর সুলতান হিসাবে কুর্সিতে বসেন হামাদ। ঘাঁটি শক্ত করে জাঞ্জিবার সাম্রাজ্যকে আবার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনে ব্রিটিশেরা। সংক্ষিপ্ত হলেও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র এবং সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যের ইতিহাসের নিরিখে অ্যাংলো-জাঞ্জিবার যুদ্ধের গুরুত্ব রয়েছে।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]