ওজন কমাতে আমরা নিয়মিত শরীরচর্চার পাশাপাশি ডায়েট করে থাকি। নিয়মিত এই গতিতে চললে একসময় ওজন কমে ঠিকই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এত কিছুর পর ওজন তো ঠিকই কমলো কিন্তু গেল কোথায় চর্বিগুলো? এমন প্রশ্নের উত্তর অনেকেরেই অজানা।
আসলে শরীরের ওজন কমলেও সম্পূর্ণরূপে চর্বি ঝরে যায় না। কারণ মেদ হলো শররের খুবই ভালো বন্ধু।
মূলত চর্বিই শরীরের শক্তি ও পুষ্টি জোগায়। অতিরিক্ত মেদ বর্জ্যের সঙ্গেও বেরিয়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীর অতিরিক্ত মেদ শরীর যত্ন করে জমিয়ে রাখে কয়েকটা জায়গায়। বাইরে থেকে টের পাওয়া যায় না। কিছুটা জমা থাকে অ্যাডিপোজ কোষে। সেখানে তাদের নতুন রূপ হয় ট্রাইগ্লিসারাইড। এই মেদ ক্ষতিকর নয়, শরীরে এনার্জির জোগান দেয়। বাকিটা ভাগাভাগি করে লিভার ও পেশিতে গ্লাইকোজেন হিসেবে জমা থাকে। এই গ্লাইকোজেনও শরীরে শক্তির চাহিদা মেটায়।
চর্বি তো আমাদের শরীরের শক্তি ও পুষ্টি আঁধার। এবার প্রশ্ন আসতে পারে, কোন শক্তির কথা বলা হচ্ছে? প্রথমত, আমরা যখন বিশ্রাম করি তখনো শরীর অনেক কাজ করে থাকে। হৃদপিণ্ডকে চালানো, ফুসফুসকে সচল রাখা, সারা শরীরে রক্ত পৌঁছে দেয়া ইত্যাদি কাজ। সেই সঙ্গে আবার মস্তিষ্ককেও সজাগ রাখাও শরীরের কাজ। ব্রেন ঘুমিয়ে পড়লে গোটা শরীরই অকেজো হয়ে যাবে। তাই স্নায়ুদের চনমনে রাখাও জরুরি। এসব কাজ সামলাতে সাহায্য করে মেদ। বাড়তি ফ্যাট যা শরীর জমিয়ে রাখে তাকেই নাড়াঘাঁটা করে শক্তি তৈরি হয়। এই শক্তিতেই রক্ত সঞ্চালন হয়, ধুকপুক করে হার্ট, চিন্তার হাওয়া খেলে মস্তিষ্কে।
দ্বিতীয়ত, আমরা যখন জেগে থাকি বা কাজকর্ম করি তখন যে বিপুল পরিমাণ শক্তির দরকার হয় সেটা আসে বডি ফ্যাট থেকেই। হাঁটাহাঁটি, দৌড়োদৌড়ির জন্য একটু বেশি চার্জ দিতে হয় শরীরকে। তার জোগান দেয় এই মেদ। তৃতীয়ত, খাবার হজম করাও একটা বড় ব্যাপার। এতবড় খাদ্যনালির দায়িত্ব সামলানো তো কম কথা নয়। খাবার পাকস্থলীতে যাওয়ার পর সেখান থেকে পুষ্টিরস নিংড়ে বের করেই সেই পুষ্টি থেকে শক্তি তৈরি হয়। আর বর্জ্যগুলো শরীর থেকে বেরিয়ে যাবে। এতবড় কর্মকাণ্ডের জন্য শক্তিও দরকার হয় অনেকটাই। সেটাও আসে ওই মেদ থেকেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুষ্টিকর খাবার খেলে তার থেকে যে ফ্যাট আসে সেটা শরীর হজম করে নেয়। বাকিটা বের করে দেয়। অনেকেই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ না মেনে খুব কম খেয়ে রোগা হওয়ার চেষ্টা করেন। তাতে হিতে বিপরীত হয়। কারণ এনার্জির জন্য শরীরের দরকার নির্দিষ্ট পরিমাণ ফ্যাট, সেটা না পেলে শরীর মেদ জমাতে শুরু করে। তাই দেখা যায়, শরীরের যতটা ক্যালোরি দরকার তার থেকে কম পেলে বেশি মেদ জমতে থাকে। বিশেষজ্ঞরা মতে, একবারে ভারী খাবার না খেয়ে দিনে ছোট ছোট ছয়টি মিল খেতে। তাহলেই ক্যালোরির পরিমাণে ভারসাম্য থাকে। দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকা বা খুব কম খাওয়ার কারণে বেশি ফ্যাট জমা হয় শরীরে।
এবার জেনে নিন ডায়েটের মাধ্যমে কীভাবে ওজন কমে-পুষ্টিকর খাবার থেকে ফ্যাট শুষে নিয়ে এনার্জি তৈরি করে শরীর। ভালো চর্বি হজম হয়ে যায়, বাকিটা টেনে নেয় ত্বক ও কিডনি। এই অতিরিক্ত মেদ গলে গিয়ে ঘাম হয়ে বের হয়ে যায় শরীর থেকে। আবার প্রস্রাবের সঙ্গেও এই মেদ বের করে দেয় কিডনি। লিভারেরও ভূমিকা আছে। বাড়তি মেদ পুড়ে কার্বন-ডাই অক্সাইড হয়ে বেরিয়ে যায় শ্বাসের সঙ্গে।
শরীরচর্চার সঙ্গে ওজন কমানোর সম্পর্ক- শরীরকে যত খাটানো যাবে ততই মেদ উবে যাবে। বিশষজ্ঞরা বলছেন, দিনে আধ ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা কার্ডিও এক্সারসাইজ করলে পেট, কোমর, তলপেট, হিপের মেদ পুড়তে শুরু করে। দিনে ২-৩ বার কার্ডিও করলেই মেদের দফারফা শুরু হয়। এক্সারসাইজই খারাপ ফ্যাটকে ভালো ফ্যাটে বদলে দিতে পারে। পেট-কোমরে শক্ত হয়ে জমে বসা মেদকে গলিয়ে পেশিতে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে এই মেদ শক্তি তৈরি করে। শরীরও টানটান হয় আবার হজমশক্তি, রক্ত সঞ্চালনও বাড়ে। অতিরিক্ত কার্বন-ডাই অক্সাইড বেরিয়ে যায়। ফলে শরীর টক্সিন-মুক্ত হতে থাকে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেদ ঝরানো ভালো তবে ভারসাম্য রেখে। ঠিকমতো ডায়েট ও নিয়ম মেনে শরীরচর্চা দরকার। একবারে অনেকটা ফ্যাট-বার্ন করলে শরীরের ক্ষতি হয় বেশি। ক্যালোরির অভাব হয়, যার থেকে অপুষ্টি ও নানা রোগ বাসা বাঁধে। নারীদের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, স্বাভাবিক ঋতুস্রাবে সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেই সঙ্গে মাথাব্যথা, ঝিমুনি, রক্তচাপের ওঠানামা, সবদিক দিয়েই নাজেহাল হতে পারে শরীর।
রাজশাহীর সময়/এএইচ