এ বার থেকে যৌনকর্মীরা পাবেন পেনশন, মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং সামাজিক সুরক্ষার বেশ কিছু সুযোগ। তাঁদের দীর্ঘ দিনের দাবিকে স্বীকৃতি দিয়ে আইন আনল বেলজিয়াম, যা বিশ্বে প্রথম এবং ঐতিহাসিকও বটে। বেলজিয়াম সরকারের দাবি, তাদের এই পদক্ষেপের ফলে আর বিভিন্ন পেশার মতো যৌনকর্মীরাও সামাজিক ভাবে সুরক্ষিত থাকবেন। কর্মক্ষেত্রে তাঁরা আর বঞ্চনার শিকার হবেন না।
বেলজিয়ামে যৌনকর্মীদের জন্য যে আইন আনা হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, প্রত্যেকের কাজের অধিকার অক্ষুণ্ণ থাকা উচিত। কর্মক্ষেত্রে বঞ্চনা দূর করতে নয়া আইনে যৌনকর্মীদের দেওয়া হবে কর্মসংস্থানের শংসাপত্র। সেটা দেখিয়ে তাঁরা স্বাস্থ্যবিমা, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা এবং আইনি সুরক্ষা পাবেন। এখানেই শেষ নয়, নতুন আইনে যৌনকর্মীদের নিরাপত্তা জোরদার করতে ‘প্যানিক বাটন’-এর মতো সুবিধা আনা হচ্ছে। কোনও ‘খদ্দেরের’ ব্যবহার বা কাজে অস্বস্তি বোধ করলে নির্দিষ্ট বোতামে চাপ দিয়ে সাহায্য চাইতে পারেন সংশ্লিষ্ট যৌনকর্মী। চাইলে কোনও ‘খদ্দের’কে ‘না’ বলার অধিকার রয়েছে তাঁদের।
বিশ্বের আদিমতম জীবিকা হল দেহব্যবসা। একটা সময় সমাজের অন্যতম স্তম্ভ ছিলেন যৌনকর্মীরা। বিভিন্ন সময়ে ইচ্ছা অথবা অনিচ্ছায় বহু মহিলা এই পেশায় এসেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কোনও কোনও সময়ে আবার ক্ষমতার আস্ফালনেই মেয়েদের বাধ্য করা হয়েছে এই পেশা বেছে নিতে। ইতিহাসে কোনও নির্দিষ্ট সময়ে সমাজের প্রতিফলন কিন্তু এই যৌনকর্মীদের সামাজিক অবস্থানের মধ্যে দিয়েই ফুটে ওঠে। বেলজিয়ামে এই আইনও এক দিনে আসেনি। অতিমারি করোনার সময়ে রুজিরুটি নিয়ে সংশয়ের মধ্যে পড়েছিলেন যৌনকর্মীরা। ওই সময়ে আন্দোলনও হয়।
এই আইন তৈরির আগে বিরোধিতাও ছিল। সমালোচকেরা যুক্তি দেন, আইন এনে যৌনকর্মীদের সুরক্ষাপ্রদানের অর্থই হল দেহব্যবসা এবং মহিলা পাচারের মতো সমস্যাগুলিকেও আইনি বৈধতা দেওয়া। প্রচুর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সরব হয়। তাদের দাবি, শ্রমের অধিকারের চেয়েও প্রচুর যৌনকর্মী চান এই পেশা থেকে মুক্তি। পাল্টা যুক্তিতে বলা হয়, যৌনকর্মীদের জন্য এই আইন আনলে এই পেশায় যাঁরা ‘নিয়োগকর্তা’, তাঁদের জুলুম বন্ধ করা যাবে। কর্মীদের মর্যাদা বৃদ্ধি হবে। তাঁদের শ্রমের প্রতি সম্মান জানানো হবে। আইনের সমর্থনকারীদের কেউ কেউ ‘যৌনকর্মী’ শব্দের বদলে ‘যৌনশিল্পী’ শব্দের উপর জোর দিয়েছেন।