সুনামগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রতিদিন লাখলাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে পাচাঁর করা হচ্ছে নানান পন্য সামগ্রীসহ মাদকদ্রব্য। সীমান্ত এলাকার একাধিক মামলার আসামীরা নিজেদেরকে সোর্স পরিচয় দিয়ে নিরীহ দরিদ্র মানুষকে ব্যবহার করে অবৈধ ভাবে ভারত থেকে মাদকদ্রব্যসহ বিভিন্ন মালামাল পাচাঁর করতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে মৃত্যুসহ নানান ঘটনা। আর চোরাচালান ও চাঁদাবাজি করে সোর্সরা হচ্ছে কোটিপতি। তাই সোর্স পরিচয়ধারীদের গ্রেফতারের জন্য র্যাব ও সেনাবাহিনীর সহযোগীতা জরুরী প্রয়োজন।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- রবিবার (২৪ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টা থেকে চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য খ্যাত জেলার তাহিরপুর উপজেলার চারাগাঁও সীমান্তে অবস্থিত কলাগাঁও নদী থেকে ১০টা ট্রলি দিয়ে বালি বিক্রি করার সময় সোর্স পরিচয়ধারীদের বালি বোঝাই ৩টি ট্রলি জব্দ করে বিজিবি। অন্যদিকে সকাল ১০টা থেকে চাঁনপুর সীমান্তের বারেকটিলার আনন্দনগর ও বিজিবি পোষ্ট সংলগ্ন এলাকা দিয়ে পাচাঁরকৃত চিনি, ফুছকা, নাসির উদ্দিন বিড়ি, জিরা ও মদ পাচাঁর করে মোটর সাইকেল ও অটোরিক্সা বোঝাই করে বাদাঘাট বাজার ও শিমুলতলা-চন্দ্রপুর গ্রামে নিয়ে মজুত করে সোর্স পরিচয়ধারী ও চোরাকারবারীরা।
এছাড়া গতকাল শনিবার (২৩ নভেম্বর) রাত ২টা থেকে টেকেরঘাট সীমান্তের লাকমা, টেকেরঘাট হাইস্কুল, নিলাদ্রি লেকপাড় ও বুরুঙ্গাছড়া এলাকা দিয়ে সোর্স পরিচয়ধারীরা পৃথক ভাবে ভারত থেকে কয়লা পাচার করে নিলাদ্রী লেক পাড়ে অবস্থিত ৮টি ডিপুতে মজুত করাসহ পাচাঁরকৃত চুনাপাথর জয় বাংলা বাজারের পাশে অবস্থিত বাঁশের ব্রিজের সামনে ও বিজিবি ক্যাম্পের পাশের একাধিক ডিপুতে মজুত করেছে।
অন্যদিকে এদিন রাত সাড়ে ১১টায় পাশের লাউড়গড় সীমান্তের জাদুকাটা নদী দিয়ে সোর্স পরিচয়ধারীরা প্রতি বারকি নৌকা থেকে ২শ টাকা করে চাঁদা নিয়ে ২শ বারকি নৌকা অবৈধ ভাবে ভারতের ভিতরে পাঠায় কয়লা ও পাথর পাচার করার জন্য। প্রতিরাতে একই ভাবে সোর্সরা চাঁদা নিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে কয়লা ও পাথর পাচার করে। সম্প্রতি কয়লা ও পাথার পাচাঁর করতে গিয়ে ১জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া গত ৩দিন আগে বিকাল ৪ টায় কয়লা ও পাথর পাচারের সময় ৪ জনকে ভারতীয় বিএসএফ আটক পরে। পরে আটকের ৫ঘন্টা পর ৪জনকে রাত ৯টায় ছেড়ে দেয়।
এছাড়া লাউড়গড় সীমান্তের ১২০৫নং পিলার সংলগ্ন কবিরের বাড়ির সামনে দিয়ে ও বডার হাট বাজারে পাশ দিয়ে সংগবদ্ধ সোর্স পরিচয়ধারীরা ভারতের ভিতরে মাছ, লিচু ও রসুন পাচার করাসহ ভারত থেকে মাদক ও বিভিন্ন পন্য সামগ্রী দীর্ঘদিন যাবত পাচাঁর করছে। একই ভাবে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মাছিমপুর, চিনাকান্দি, ডলুরা ও মধ্যনগর সীমান্তের বাঙ্গলভিটা ও মাটিরান এলাকা দিয়ে ভারত থেকে গরু, চিনি,কসমেটিকস, রসুন, সুপারী ও মাছসহ মাদকদ্রব্য পাচাঁরের খবর পাওয়া যায়। কিন্তু এতকিছুর পরও সীমান্ত চোরাকারবারীদের মদতদাতা সোর্স পরিচয়ধারীদের গ্রেফতারের জন্য কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়না।
এদিকে গত শনিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে দোয়ারাবাজার উপজেলা সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে চিনি পাচাঁর করে ওই উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের উত্তর শ্রীপুর গ্রামে নিয়ে মজুত করে চোরাকারবারীরা। এখবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে একটি বসতঘরের ভিতর থেকে ২লাখ ৬০হাজার টাকা মূল্যের ৫২ বস্তা অবৈধ চিনি জব্দ করে। ওই সময় চোরাকারবারী আছকর আলী (৪০) ও তার সহযোগী মাইনুদ্দিন (২৫) গ্রেফতার করে। তারা দুজনই উত্তর শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা। এঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে দোয়ারা বাজার থানার ওসি জাহিদুল হক জানান-শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে পাচারকৃত চিনিসহ গ্রেফতার হওয়ার ২ চোরাকারবারীর বিরুদ্ধে থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।