উত্তরবঙ্গে ১৫ বছরে একাধিক উপনির্বাচনের রায় গেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে


আন্তর্জাতিক ডেস্ক : , আপডেট করা হয়েছে : 23-11-2024

উত্তরবঙ্গে ১৫ বছরে একাধিক উপনির্বাচনের রায় গেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে

উত্তরবঙ্গের সিতাই এবং দক্ষিণবঙ্গের হাড়োয়া— দুই বিধানসভা উপনির্বাচনের ফলাফল দেখিয়ে দিল, বিরোধীরা নেই। বাম-বিজেপি কেউই নেই। দু’টি আসনেই কোনও বিরোধী প্রার্থী তাঁদের জামানত রাখতে পারলেন না। দু’টি আসনেই এক লক্ষেরও বেশি ব্যবধানে জিতেছে তৃণমূল। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোট এবং ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের বিধানসভাভিত্তিক ফলাফলের সঙ্গে উপনির্বাচনের ফলাফল পাশাপাশি রাখলে দেখা যাচ্ছে, ক্রমশ আরও কমছে বিজেপির জনসমর্থন।

হাড়োয়া অবশ্য সংখ্যালঘু অধ্যুষিত আসন। সেখানে বিজেপির বিশেষ কিছু করার সুযোগ ছিল না। কিন্তু সিতাইয়ের ফলাফল নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে বিজেপির অন্দরেও। শুধু তা-ই নয়, কোচবিহারের প্রাক্তন সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের ভূমিকা নিয়েও একান্ত আলোচনায় প্রশ্ন তুলছেন পদ্মশিবিরের নেতারা।

২০১৯ সালের লোকসভা থেকেই উত্তরবঙ্গ বিজেপির ‘দুর্গ’ বলে পরিচিত হয়েছিল। ২০২১ সালের ভোটে উত্তরবঙ্গ থেকেই ২৯টি বিধানসভা আসন জিতেছিল বিজেপি। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটেও এই দুই আসনেই ‘সম্মানজনক’ জায়গায় ছিল পদ্মশিবির। কিন্তু উপনির্বাচনে ধুয়েমুছে গেল তারা। হাড়োয়ার থেকেও সিতাই এবং মাদারিহাটের হার এবং ব্যবধান নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে বিজেপির অন্দরে। কারণ, ভোটে এই ধসকে উত্তরবঙ্গের গড়ে ‘বিপর্যয়’ হিসাবেই দেখছেন পদ্মশিবিরের প্রথম সারির অনেক নেতা।

হাড়োয়ায় তৃণমূলের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠে এসেছেন আইএসএফের পিয়ারুল ইসলাম। তবে তাঁর সঙ্গে তৃণমূলের রবিউল ইসলামের ভোটের ব্যবধান ১ লক্ষ ৩০ হাজারেরও বেশি। আইএসএফ এই একটি আসনেই লড়ে দ্বিতীয় হয়েছে। যদিও জামানত রক্ষা করতে পারেনি নওশাদ সিদ্দিকির দল। বিবৃতি জারি করে আইএসএফ এই নির্বাচনকে ‘প্রহসন’ বলে কটাক্ষ করেছে। পাশাপাশিই দাবি করেছে, তৃণমূল এবং বিজেপি-বিরোধিতার রাজনীতি তারা জারি রাখবে।

উল্লেখ্য, হাড়োয়া আসনটি বসিরহাট লোকসভার অন্তর্গত। গত লোকসভা ভোটে এই বিধানসভায় বিজেপি ছিল দ্বিতীয় স্থানে। উপনির্বাচনে তারা নেমে গিয়েছে তৃতীয় স্থানে। লোকসভা ভোটের আগে সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে তপ্ত হয়েছিল রাজনীতি। কিন্তু সেই সময়েও যেমন তার কোনও প্রভাব ছিল না, ছ’মাস পরেও তার কোনও ছাপ নেই। তবে বিজেপির যে আরও ক্ষয় হয়েছে, তা স্পষ্ট।

সিতাই কেন্দ্রে ২০২১ সালে তৃণমূলের জগদীশচন্দ্র বসুনিয়ার জয়ের ব্যবধান ছিল ১০ হাজারের সামান্য বেশি। লোকসভায় সেই জগদীশই জিতেছেন। সেই নির্বাচনে সিতাই থেকে তিনি প্রায় ২৯ হাজার ভোটে এগিয়েছিলেন। আর উপনির্বাচনে তৃণমূলের সঙ্গীতা রায় জিতেছেন ১ লক্ষ ৩০ হাজার ভোটে।

রাজনীতিতে ভোট সংখ্যার চেয়ে শতাংশ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সেই পরিসংখ্যানই নির্দিষ্ট এলাকায় সংশ্লিষ্ট দলের গণভিত্তির ‘সূচক’। সিতাইয়ে বিজেপির ভোট শতাংশে ধস নেমেছে। ২০২১ সালে কোচবিহারের এই কেন্দ্রে বিজেপি পেয়েছিল ৪৫ শতাংশ ভোট। কিন্তু সাড়ে তিন বছরের মধ্যে উপনির্বাচনে তাদের ভোট কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ। কিন্তু সেই ভোট কোনও বিরোধী পরিসরে যায়নি। বরং গিয়ে পড়েছে শাসক তৃণমূলের বাক্সে। তালড্যাংরা, মেদিনীপুর, নৈহাটিতেও ব্যবধান বৃদ্ধি করেছে তৃণমূল। আবার হাতের বাইরে থাকা মাদারিহাট আসনটিও প্রথম বার জিতেছে তৃণমূল।

যদিও এই হারকে ‘গুরুত্ব’ দিতে চায়নি বিজেপি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ‘‘এটা কোনও ভোটই নয়। ২০২৬ সালে এই সব জায়গাতেই বিজেপি জিতবে। রেজাল্ট পুরো উল্টে যাবে।’’ পাল্টা কটাক্ষ করে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেছেন, ‘‘বিজেপির আইটি সেলের উচিত শুভেন্দুকে ওঁর পুরনো কথাগুলো কোলাজ করে শোনানো। তা হলে যদি বাজে বকা বন্ধ হয়!’’

উপনির্বাচনের ফলাফল সাধারণত শাসকের পক্ষেই থাকে। তবে এর ব্যতিক্রমও ঘটে। বাংলাতেও গত ১৫ বছরে একাধিক উপনির্বাচনের রায় গিয়েছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। কখনও শাসকের জায়গায় ছিল সিপিএম তথা বামেরা, কখনও তৃণমূল। কিন্তু অনেকেই মনে করতে পারছেন না, সাম্প্রতিক সময়ে কোনও ভোটে কোনও আসনে বিরোধীরা জামানত রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন কি না। সে দিক থেকে হাড়োয়া এবং সিতাই নতুন ‘মাইলফলক’ তৈরি করল।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]