রামেবি থেকে জমির ক্ষতিপূরণ পাননি ৫ শতাধিক মালিক


অনলাইন ডেস্ক : , আপডেট করা হয়েছে : 15-11-2024

রামেবি থেকে জমির ক্ষতিপূরণ পাননি ৫ শতাধিক মালিক

দেশের উত্তরাঞ্চলের মেডিকেল শিক্ষা, গবেষণার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম প্রসারে ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (রামেবি)। প্রতিষ্ঠিতার পর থেকে অস্থায়ী ভবনে কার্যক্রম চলাচ্ছে রামেবি। তবে ২০২২ সালের ১৪ জুন রামেবির স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপনের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুমোদন করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক)। এরপর স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে রাজশাহীর পবা উপজেলার সিটি হাটসংলগ্ন বাজে সিলিন্দা এলাকায় ৬৭.৬৭৯২ একর জমি অধিগ্রহণ করে জেলা প্রশাসন। শতক প্রতি ১৭ লাখ টাকা হারে ৭৯৮ কোটি ৮০ লাখ ৫৬ হাজার ৬০০ টাকা জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করে গত ২৪ মার্চ জমির দখল বুঝে নেয় রামেবি কর্তৃপক্ষ। তবে রামেবি জমির সব টাকা জেলা প্রশাসনকে পরিশোধ করলেও এখনো ৫ শতাধিক জমির মালিক তাদের ক্ষতিপূরণের টাকা বুঝে পাননি।

অভিযোগ উঠেছে, প্রভাবশালী মালিকরা অনেক আগে তাদের জমির টাকা বুঝে নিলেও নানা অজুহাতে সাধারণ মালিকদের ক্ষতিপূরণের অর্থ এখনো পরিশোধ করা হয়নি।

রামেবি প্রশাসন সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পর দেশের দ্বিতীয় মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হলো রামেবি। সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকবে ১ হাজার ২০০ শয্যার একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টি অনুষদের অধীনে ৬৮টি বিষয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি দেওয়া দেয়া হবে। এ ছাড়া এ বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা সেবার মানকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে গবেষণা কার্যক্রম চলবে। জমি অধিগ্রহণ শেষ হয়েছে। গত ২৪ মার্চ অর্থ পরিশোধ করে জমির দখল বুঝে নিয়েছে রামেবি। এখন জমিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, হাসপাতাল, নার্সিং কলেজ, স্কুল, ডে-কেয়ার সেন্টার, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, উপাচার্যের বাংলো, ডাক্তার ও নার্সিং হোস্টেল, মরচুয়ারিসহ গুরুত্বপূর্ণ ২১টি ভবন নির্মাণ করা হবে।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বাজে সিলিন্দা এলাকায় ৩টি মৌজায় ৬৭.৬৭৯২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। জমি অধিগ্রহণ বাবদ ৭৯৮ কোটি ৮০ লাখ ৫৬ হাজার ৬০০ টাকা পরিশোধ করেছে রামেবি কর্তৃপক্ষ। তবে জমির মালিকদের ধাপে ধাপে ক্ষতিপূরণের অর্থ দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৪৯৪ মালিককে ক্ষতিপূরণের ৪৩২ কোটি ৩৭ লাখ ২৩ হাজার ৭২৭ টাকা দেওয়া হয়েছে। এখনো ৫ শতাধিক জমির মালিক তাদের ক্ষতিপূরণের ৩৬৬ কোটি ৪৩ লাখ ৩২ হাজার ৮৭৩ টাকা বুঝে পাননি। কারণ অধিগ্রহণ করা জমিগুলোর মধ্যে কয়েকটি দাগে ৩টা মামলা ছিল। ফলে যে দাগ-খতিয়ানে মামলা রয়েছে, সেগুলোর ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়া হয়নি। এর বাইরে কয়েকজন মালিকের দুই-একটি কাগজ কম থাকায় তাদেরও ক্ষতিপূরণের টাকা আটকে আছে। তবে সব কাগজপত্র ঠিক থাকা ২০-২৫ জন মালিকের বিল দ্রুতই দেওয়া হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জমির মালিক জানান, জমি অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে ধীর গতিতে অর্থ ছাড় দেওয়া হচ্ছে। একজন মালিকের জমিতে সমস্যা থাকলে ওই দাগের সব মালিকের অর্থছাড় আটকে রাখা হচ্ছে। আবার, রাজনৈতিক-প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে তেমন কোনো নিয়মের তোয়াক্কায় করা হয়নি। এ ছাড়া সব শর্ত পূরণ করা সত্ত্বেও অনেক মালিক তাদের ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি। এতে জমির মালিকানা ছেড়ে দেওয়ায় সাধারণ মালিকদের আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে গেছে। ক্ষতিপূরণের টাকা না পেয়ে তারা বিপাকে পড়েছেন। তাই দ্রুত ক্ষতিপূরণের টাকা বুঝিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কানুনগো মো. রেজাউল করিম বলেন, ধাপে ধাপে টাকা দেওয়া হচ্ছে। অধিকাংশ মালিকই কোনো ভোগান্তি ছাড়াই তাদের ক্ষতিপূরণের টাকা বুঝে পেয়েছেন। তবে তিনটি মামলায় যে দাগগুলো রয়েছে সেগুলোতে হাত দেওয়া হয়নি। আবার, কিছু ব্যক্তির দুই-একটা কাগজ কম থাকায় তারাও টাকা পাননি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ভাড়া বাসাতেই ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে সফলভাবে এমবিবিএস, বিডিএস, ফিজিওথেরাপি ও ইউনানি মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি (বিইউএমএস) কোর্স সফলভাবে পরিচালনা করছে রামেবি। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির অধীনে রাজশাহী, রংপুরের সরকারি-বেসরকারি ৬৯টি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের এমবিবিএস, বিডিএস, ফিজিওথেরাপি ও ইউনানি মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি, বিএসসি নার্সিং এবং মেডিকেল টেকনোলজি কোর্সের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। ডেটা এন্ট্রি, শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন, পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণসহ সব কার্যক্রম ডিজিটালভাবে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি অনুষদের অধীন পিএইচডিসহ স্নাতকোত্তর কোর্সও চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবছর ৭০০ চিকিৎসক বের হবেন। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণ হলে প্রায় ৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

সূত্র: খবরের কাগজ


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]