পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারে ইসলাম কী বলে


অনলাইন ডেস্ক : , আপডেট করা হয়েছে : 14-11-2024

পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারে ইসলাম কী বলে

ইসলাম পণ্যদ্রব্যকে তার যথাযথ ভোক্তার কাছে হস্তান্তরে বদ্ধপরিকর। সে ক্ষেত্রে যাতে কোনো ধরনের শোষণের অবকাশ না থাকে সেদিকে দৃষ্টি রেখেছে ইসলাম। কারণ যদি এমনটি হয়, তাহলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের যে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তা ছাড়া এগুলো প্রতারণারও অন্তর্ভুক্ত।

ইসলামী শরিয়ত প্রতারণার মাধ্যমে মূল্যবৃদ্ধির সব পদ্ধতিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। যেমন—

(ক) মজুদদারি ও কালোবাজারি

মূল্যবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য আটকে রেখে অস্বাভাবিকভাবে মুনাফা হাসিল করাকে ইসলামের পরিভাষায় ইহতিকার বা মজুদদারি বলে। ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) মজুদদারের সংজ্ঞায় বলেন : মজুদদার সেই ব্যক্তি, যে মানুষের প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী সংগ্রহ করে তার মূল্য বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে আটক করে রাখে এবং সে এ কাজে ক্রেতাদের প্রতি জুলুম করে। মজুদদারির ফলে অর্থনৈতিক ভারসাম্য ক্ষুণ্ন হয়, এ জন্য শরিয়তে একে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

মহানবী (সা.) মজুদদারকে পাপী ও অভিশপ্ত বলেছেন। সহিহ মুসলিম শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘পণ্যদ্রব্য আটক করে অধিক মূল্যে বিক্রয়কারী অবশ্যই পাপী।’

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘আমদানিকারক রিজিকপ্রাপ্ত হয়, আর মজুদদার হয় অভিশপ্ত।’ গুদামজাতকরণের ব্যাপারটি যদি বিচারকের কাছে পেশ করা হয়, তিনি গুদামজাতকারীকে আদেশ করবেন যেন সে তার এবং পরিবারের প্রয়োজনীয় পরিমাণ খোরাকি রেখে উদ্বৃতাংশ বিক্রয় করে দেয়।

আর তাকে গুদামজাত করতে নিষেধ করবেন। যদি দ্বিতীয়বার এই মোকদ্দমা বিচারকের কাছে উপস্থাপন করা হয়, তবে তিনি তাকে কয়েদ করে রাখবেন। আর তা থেকে বিরত রাখতে এবং জনগণের কষ্ট লাঘবের উদ্দেশ্যে যত দূর প্রয়োজন শাস্তি প্রদান করবেন। (আল হিদায়া)

তবে যা খাদ্যশস্য নয় এবং যা জীবনধারণের মূল উপকরণ নয়, যেমন—ওষুধ, ভেষজদ্রব্য, জাফরান এবং এই প্রকার দ্রব্যসামগ্রী মজুদ করা নিষিদ্ধ নয়। (ইমাম গাজালি, এহইয়াউ উলুমুদ্দিন)


(খ) তালাক্কি বা বণিক দলের সঙ্গে অগ্রগামী হয়ে সাক্ষাৎ


গ্রাম থেকে কৃষকরা দ্রব্যসামগ্রী নিয়ে শহরের বাজারে প্রবেশ করার আগেই তাদের থেকে পাইকারিভাবে সব মাল খরিদ করে নেওয়াকে আরবিতে তালাক্কি বলে।


এ ধরনের ক্রয়-বিক্রয় সম্পর্কে ইসলামে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হাদিসে বর্ণিত আছে, মহানবী (সা.) শহরবাসী লোকদের শহরের বাইরে গিয়ে বাণিজ্যিক কাফেলার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে লেনদেন করতে নিষেধ করেছেন। (সহিহ মুসলিম)

এ জাতীয় বেচাকেনার উদ্দেশ্য হচ্ছে, শহরের লোকদের থেকে চড়া মূল্য আদায় করা বা গ্রামের কৃষকদের থেকে সস্তা দামে খাদ্যশস্য খরিদ করা। লক্ষ্য হলো, অধিক মুনাফা। এ কারণে ইসলামে এজাতীয় লেনদেন নিষিদ্ধ। গ্রামের কৃষকরা এতে প্রতারিত হতে পারে এবং যথাযথ মূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা আছে। তাই বাজার প্রতিযোগিতা যাতে ব্যাহত না হয় এবং ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ইচ্ছায় বাজার দাম যেন নিয়ন্ত্রিত না হয়, সে লক্ষ্যে মহানবী (সা.) বলেন, ‘বাজারে পৌঁছার আগেই (স্বল্প মূল্যে) ক্রয়ের জন্য ব্যবসায়ী কাফেলার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে না। (জামে আত তিরমিজি)


(গ) নাজাশ বা দালালি


প্রকৃত ক্রেতাকে ধোঁকায় ফেলে বেশি মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে নকল ক্রেতা সেজে পণ্যের উচ্চ মূল্য হাঁকানোকে নাজাশ বা দালালি বলে। আবু ঈসা বলেন, নাজাশের অর্থ হলো এক ব্যক্তি বিক্রেতার মালের দেখাশোনা করে এবং সে তার মালের দরদাম সম্পর্কে ওয়াকিফহাল। বিক্রেতার কাছে যখন কোনো ক্রেতা এসে মালের দামদর করে, তখন সে এসে উপস্থিত হয়। সে নকল ক্রেতা সেজে আসল ক্রেতার চেয়েও বেশি দাম হাঁকে। তার উদ্দেশ্য হলো ক্রেতাকে ধোঁকা দিয়ে বেশি মূল্যে বিক্রেতার মাল বিক্রয় করা। (জামে আত তিরমিজি)


এটি এক ধরনের প্রতারণা। আবদুল্লাহ ইবনে আবি আওফা (রা.) বলেন, দালাল ব্যক্তি সুদখোর, বিশ্বাসঘাতক। (ফাতহুল বারি শরহে সহিহুল বুখারি)


ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে দালালের অনুপ্রবেশের কারণে দ্রব্যের দাম কিছুটা বেড়ে যায়। এ কারণে মহানবী (সা.) এটাকে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তি মুসলমানদের লেনদেনে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ ঘটালে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে আগুনের হাড়ের ওপর বসিয়ে শাস্তি দেবেন।


(ঘ) ওজনে কম দেওয়া


পণ্যদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয়ের সময় ক্রেতাকে ওজনে কম দেওয়া কিংবা ওজন করে নেওয়ার সময় বেশি নেওয়া ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন : ‘যারা মাপে কম করে, তাদের জন্য দুর্ভোগ। যারা লোকের কাছ থেকে যখন মেপে নেয়, তখন পূর্ণ মাত্রায় নেয় এবং যখন লোকদের মেপে দেয় কিংবা ওজন করে দেয়, তখন কম করে দেয়।’ (সুরা : মুতাফফিফিন, আয়াত : ১-৩)


মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘তোমরা মেপে দেওয়ার সময় পূর্ণ মাপে দেবে এবং সঠিক দাঁড়িপাল্লায় ওজন করবে। এটা উত্তম; এর পরিণাম শুভ।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩৫)


নিজে গ্রহণের সময় বেশি নেওয়া এবং দেওয়ার সময় কম দেওয়ার অশুভ পরিণতি শুধু পারলৌকিক নয়, বরং তা ইহলৌকিকও বটে। আর তা শুধু নৈতিকভাবেই নয়, বরং অর্থনৈতিকও বটে।


(ঙ) নকল ও ভালো পণ্যের মিশ্রণ


বেচাকেনার ক্ষেত্রে প্রতারণা করা, পণ্যদ্রব্যের পরিচয় দান কিংবা গুণ বর্ণনার ক্ষেত্রে মিথ্যা উক্তি করা কিংবা ভুল প্রচারণা করা বা ভেজাল মেশানো হারাম। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একবার মহানবী (সা.) কোনো খাদ্যের স্তূপের কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় স্তূপে হাত ঢুকিয়ে ভেতরে খাদ্যবস্তু ভেজা দেখতে পান। তখন তিনি বলেন, হে খাদের্য মালিক! এ কী? জবাবে সে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, বৃষ্টির কারণে এরূপ হয়েছে। এ কথা শুনে তিনি বলেন, ‘যে ধোঁকা দেয় সে আমার উম্মতের মধ্যে গণ্য হবে না।’ (জামে আত তিরমিজি)


এতে প্রমাণিত হয় যে ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রতারণা বা ধোঁকার আশ্রয় গ্রহণ করা হারাম।


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]