রাজশাহীর থেকে ঢাকার বাজারে যেতে পথে পথে দিতে হয় চাঁদা ! এভাবেই বাড়ছে পণ্যের দাম


অনলাইন ডেস্ক , আপডেট করা হয়েছে : 12-04-2022

রাজশাহীর থেকে ঢাকার বাজারে যেতে পথে পথে দিতে হয় চাঁদা ! এভাবেই বাড়ছে পণ্যের দাম

রাজশাহীর পবা থেকে ঢাকার বাজারে আসতে পণ্যবাহী ট্রাকে ট্রাকে চলে দৃশ্যমান বা অদৃশ্য চাঁদাবাজি। আর চাঁদাবাজদের কাছে খোয়ানো টাকাই আবার উসুল হয় বাজারে ক্রেতার পকেট থেকে। রাজশাহীর পবা থেকে রাজধানীর বাজারে কীভাবে বাড়ছে পণ্যের দাম, তাই তুলে ধরা হলো প্রতিবেদনে।

রাজশাহীর পবা উপজেলা সবজির জন্য সুপরিচিত। ঢাকার বাজারে গিয়ে এখানকার সবজির দাম কীভাবে কয়েকগুণ বেড়ে যায় তার কারণ অনুসন্ধান করতে সবজির ট্রাকে চড়ে ঢাকায় রওনা দেয় সাংবাদিক। পণ্যবাহী ট্রাক থামিয়ে সড়কে চাঁদাবাজি নতুন কোনো ঘটনা নয়। উৎপাদন খরচের কারণে পণ্যের দাম বাড়াতো একটি কারণ, না কী এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে, সেটিও অনুসন্ধান করার চেষ্টা করবো এবার।

 তখন বিকেল গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যা। পবার খড়খড়ি বাজারে কুলিরা ব্যস্ত ট্রাকে সবজি তুলতে। বাজারে সবচেয়ে বেশি সরবরাহ দেখা গেল পেঁপের। পাইকাররা প্রতি কেজি পেঁপে কৃষকের কাছ থেকে কেনেন ১০ থেকে ১৫ টাকায়। এখান থেকে ঢাকার কারওয়ান বাজার কিংবা যাত্রাবাড়ী আড়তে যাওয়া পর্যন্ত প্রতি কেজিতে খরচ বাড়ে আরও ৫ টাকা। এর বাইরে পথে পথে আছে নানা রকম চাঁদাবাজি। 

এক ব্যবসায়ী বলেন, ১৯৯১-৯২ সাল থেকে ঢাকায় ব্যবসা করি। তখন থেকে দেখে আসছি রাস্তায় দাঁড়ায়ে পুলিশ টাকা নেয়। যে রকম টাকা চাইবে সে রকম দিতে হবে, না দিতে পারলে গাড়ি ছাড়বে না, কেস দেবে। যমুনা সেতুতে আটকায়, টাঙ্গাইলে আটকায়। 

খড়খড়ি বাজার থেকে ৫ কিলোমিটার সামনেই বানেশ্বর। এখান থেকেও ঢাকায় যায় পেঁয়াজ-রসুনসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী। কথা হয় ট্রাকের কয়েকজন চালক ও হেলপারের সঙ্গে। সবার অভিযোগ পুলিশের চাঁদাবাজিতে তারা অতিষ্ঠ। 

বিষয়টি সরেজমিনে জানতে সাংবাদিক শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় সবজিভর্তি একটি ট্রাকে চড়ে যাত্রা শুরু করে ঢাকায়। গন্তব্য যাত্রাবাড়ী সবজির আড়ত। ট্রাকটিতে সবজি ছিল ১৩ টন। রাজশাহী থেকে নাটোর ঢুকতে সময় লাগল ঘণ্টা দেড়েক। চল্লিশ মিনিট পরে এল নাটোর বাইপাস। এই সময়ের মধ্যে অন্তত তিন জায়গায় ট্রাক থামলো। পলিশ চাঁদা নিয়েছে বলে অভিযোগ করা হলো। কিন্তু বাস্তবে তেমন কিছুই দেখা গেল না।

নাটোর অতিক্রম করে ট্রাক প্রবেশ করলো সিরাজগঞ্জে। এখানেও নেই পুলিশের কোনো তৎপরতা। বঙ্গবন্ধু সেতু অতিক্রম করে এবার টাঙ্গাইলে ট্রাকটি। টাঙ্গাইলের কয়েকটি স্পটে গাড়ি থামিয়ে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ থাকলেও একই দৃশ্য এখানে। বাস্তবে কিছুই দেখা গেল না। 

রাত ১টায় রাজধানীর গাবতলী এলাকায় পৌঁছে প্রথম বাধার মুখে ট্রাকটি। এরা স্থানীয় লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে পরিচিত। যাত্রাবাড়ী মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের প্রবেশমুখে দ্বিতীয়বার থামানো হলো ট্রাকটি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নামে হচ্ছে চাঁদাবাজি। ৫০০ মিটার অগ্রসর হওয়ার পর আবারও ট্রাক থামিয়ে সিটি করপোরেশনের নামে আদায় করা হলো চাঁদা। 

যাত্রাবাড়ী সবজির আড়তে ট্রাক পৌঁছাল রাত ১টা ৩০ মিনিটে। চালক ও তার সহকারী জানালেন, ট্রাকটির দরজায় লেখা আছে তিন অক্ষরের একটি শব্দ। এটিই ব্যানার বা কোড, যা দেখলে চাঁদার জন্য ট্রাক থামায় না পুলিশ। 

গাড়িচালক বলেন, মাসিকভাবে টিআই সার্জনের সঙ্গে চুক্তি করা থাকে। মাসে মাসে আমরা ফোনের মাধ্যমে তাদেরকে টাকা দেই। আমাদের গাড়ির ব্যানার অনুযায়ী তাদের কাছে লিস্ট করা থাকে।

এবারে ফিরে যাওয়া যাক বানেশ্বরে। ঢাকায় রওনা করার আগেই ট্রাক মালিক ও পাইকাররা জানান, সড়কে নয়, এখন চাঁদা দেওয়া হয় মাসিক চুক্তিতে। সর্বনিম্ন ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত মাসিক চুক্তিতে পাওয়া যায় বিশেষ কার্ড বা কোড নম্বর। চুক্তি করা পণ্যবাহী ট্রাক সড়কে থামায় না পুলিশ। 

এক ট্রাক মালিক জানান, মাসিক টাকা দিলে একটু ছাড় পাওয়া যায়। ৫০০-৬০০ টাকা দিলে এক মাস ওই গাড়ি আর ধরবে না। কাগজ থাক আর না থাক। 

বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির দাবি, অনেকটা বাধ্য হয়েই তারা মাসিক চুক্তি করেন পুলিশের সঙ্গে। আর পুলিশের দাবি, কিছুই জানেন না তারা। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা। 

বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি বলেন, ’পুলিশ এবং সিটি করপোরেশনের লোক দুপক্ষ এক হয়ে টাকা নিচ্ছে। পুলিশ বলে, এই টাকা না দিলে ২০ হাজার টাকার মামলা খাবি। তখন মালিক ও ড্রাইভারদের করণীয় কিছু নেই।’ 

মোহাম্মদ কামরুজ্জামান নামে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্সের এক কর্মকর্তবা বলেন, এ রকম কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ নিয়ে আমাদের কাছে এলে অবশ্যই দোষী বা দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

ট্রাক মালিকরা জানান, রাজশাহী থেকে ঢাকায় আসা সব ট্রাকই এখন চুক্তির আওতাভুক্ত। সময় টিভি।

রাজশাহীর সময় / এম আর


Publisher & Editor :Md. Abu Hena Mostafa Zaman

Mobile No: 01971- 007766; 01711-954647

Head office: 152- Aktroy more ( kazla)-6204  Thana : Motihar,Rajshahi
Email : [email protected], [email protected]