বছরের পর বছর বুকের প্রাজরে লালিত এক স্বপ্ন। ৭৫৩ একরের সবুজ প্রাঙ্গণে অবাধ বিতরণে কেঁপে উঠবে ধরণী। বিশ্ববাসীর পাণে বুকটান করে শুধাব এই তো আমি পেরেছি। দীর্ঘসাধনার পর মুখ-মগজ, দেহ-মনে জপ্তে থাকা স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখার সুযোগ পান সাইফ। অতঃপর তা হারিয়ে ফেলার ভয়ে তীব্র আমানেশায় ফের ডুবে হতাশায় নিমজ্জিত হন তিনি। অবশেষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল নেতার সহযোগিতায় (সর্বশেষ দিন) ভর্তি হন বিশ্ববিদ্যালয়েে।
বলছিলাম সদ্য রাবিয়ান আবু সাইফের কথা। তিনি রাবিতে চান্স পেলেও টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারছিলেন না। বিষয়টি অবগত হওয়ার পর শাখা ছাত্রদলের যগ্ম-আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম (শফিক) তার সাথে যোগাযোগ করেন এবং ভর্তির শেষ দিনে সাইফকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী সাহিত্য বিভাগে (২০২৩-২৪) শিক্ষাবর্ষে ভর্তি করান।
খেজমত আলী ও মালেকা খাতুন দম্পতির মেজো সন্তান আবু সাইফের বাসা জেলার কুমারখালি উপজেলার অন্তর্গত মহব্বতপুর গ্রামে। এলাকার কুমারখালি সরকারি কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করেন তিনি।
সহজ ছিল না সাইফের ছোটবেলা অর্থের অভাবে পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে অন্যের জমিতে কাজ করে পড়াশোনার খরচ চালাতেন তিনি। এখনও কাজ করেন অন্যের জমিতে।
অন্যদিকে তার বাবা একজন দরিদ্র রিক্সাচালক। অসুস্থ হয়ে হার্টে তিনটা ব্লক ধরা পড়ে। দুইটাতে রিং পরিয়ে চলছেন কোনো মতে। করতে পারেন না কোনো কাজ। প্রতি মাসে তার জন্য ৫-৬ হাজার টাকার ঔষধ প্রয়োজন হয় যা যোগান দেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ অধ্যয়নরত বড় ভাই। তিনি টিউশন করে যে টাকা পান তা দিয়েই কোনোমতে চলে তার পড়াশোনা, বাবার ঔষধ ও সংসার ও নবম শ্রেণিতে পড়া ছোট বোনের খরচ।
এখন সাইফ টিউশন, পার্টটাইম জবের খোঁজে। জানিয়েছেন পড়াতে পারবেন বিশুদ্ধভাবে আল কুরআান।
এবিষয়ে শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, "পারিবারিক সমস্যার কারনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছে না এমন সংবাদ শোনার পর পরই আমি তার সাথে দেখা করি এবং তাকে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি তার জন্য হলে একটি সিটের ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে ছেলেটির জন্য পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার কষ্ট কিছুটা লাঘব হবে।
আবু সাইফ বলেন, আমি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। ছোটবেলা থেকেই অনেক সংগ্রাম করে বড় হয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পরও টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারছিলাম না। শফিক ভাই বিষয়টি জানার পর আমার সাথে যোগাযোগ করে ভর্তি করান। তার কাছে আমি কৃতজ্ঞ থাকব।
পরিবারের অবস্থা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, আমার বাবা রিকশা চালাতো। হঠাৎ হার্টে ৩টা ব্লক ধরা পড়ে। আমাদের চাষের জমি বিক্রি করে বাবার হার্টে রিং পড়ানো হয়।রিং পড়ানোর পর থেকে আমার বাবা কোনো কাজ করতে সক্ষম নয়। বেশির ভাগ সময় অসুস্থ থাকে। বড় ভাই মেডিকেল কলেজের ফাইনাল ইয়ারে পড়াশোনা করছে। বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ার পর থেকে ভাইকে পরিবারের ব্যয় বহন করতে হচ্ছে। বাবার প্রতি সপ্তাহে ১৩০০-১৪০০ টাকার ওষুধ প্রয়োজন। ভাইয়ের টিউশনির টাকা দিয়ে তার নিজের খরচ, বাবার চিকিৎসা, সংসারের খরচ ও ছোট বোনের পড়াশোনার খরচ চলছে। ভাইয়ের পক্ষে আমার খরচ বহন করা একেবারে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থায় আমার পড়াশোনা প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এখন টিউশনি বা পার্ট টাইম কাজের ব্যবস্থা করে দিলে আমি আমার লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারতাম। আমি সহিহ শুদ্ধভাবে কোরআন পড়াতে পারবো"।