ইস্তেখারা আরবি শব্দ। আভিধানিক অর্থ- কোনো জিনিসের ক্ষেত্রে কল্যাণ কামনা করা। আপনার যদি কোনো কাজ করার ইচ্ছা হয়, আর কাজটি আপনার জন্য কল্যাণকর নাকি বিপজ্জনক এ বিষয়ে মহান আল্লাহর কাছ থেকে পরামর্শ চাওয়াকেই ইস্তেখারা বলে। মহান আল্লাহর কাছে কোনো জিনিসের ক্ষেত্রে কল্যাণ কামনা করা। কোনো কিছু নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা থাকলে ইস্তেখারার নামাজ পড়া হয়। এ নামাজ খুব নিয়ামতপূর্ণ ও কার্যকরী। ইসলামের সূচনা থেকেই এর মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য কামনা করেছে মানুষ।
ইস্তেখারার দোয়া
কোনো কাজে ভালো মন্দ বুঝতে না পারলে, মনে ঠিক-বেঠিক, উচিত-অনুচিত বা লাভ-লোকসানের দ্বন্দ্ব তৈরি হলে আল্লাহর নিকট মঙ্গল প্রার্থনা করতে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে নিম্নের দোয়া পাঠ করতে হবে।
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ ، وَأَسْتَعِينُكَ بِقُدْرَتِكَ ، وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ ، فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلا أَقْدِرُ ، وَتَعْلَمُ وَلا أَعْلَمُ وَأَنْتَ عَلامُ الْغُيُوبِ ، اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ () خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي وَعَاجِلِهِ وَآجِلِهِ ، فَاقْدُرْهُ لِي وَيَسِّرْهُ لِي ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي وَعَاجِلِهِ وَآجِلِهِ فَاصْرِفْهُ عَنِّي ، وَاصْرِفْنِي عَنْهُ ، وَاقْدُرْ لِيَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ، ثُمَّ رَضِّنِي بِهِ
(উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইবি আস্তাখীরুকা বিইলমিকা অ আস্তাক্দিরুকা বি কুদরাতিকা অ আসআলুকা মিন ফায্বলিকাল আযীম, ফাইন্নাকা তাক্দিরু অলা আক্দিরু অতা’লামু অলা আ’লামু অ আন্তা আল্লা-মুল গুয়ুব। আল্লা-হুম্মা ইন কুন্তা তালামু আন্না হা-যাল আমরা ( ) খাইরুল লি লি দীনি অ মাআশি অ আকিবাতি আমরি অ আ-জিলিহি অ আ-জিলিহ, ফাক্দুরহু লি, অ য়্যাসসিরহু লি, সুম্মা বা-রিক লি ফিহ। অ ইন কুন্তা তালামু আন্না হা-যাল আমরা শাররুল লি ফি দীনি অ মাআশি অ আ’-কিবাতি আমরি অ আ’-জিলিহি অ আ-জিলিহ, ফাস্বরিফহু আন্নি অস্বরিফনি আনহু, অক্বদুর লিয়াল খাইরা হাইসু কা-না সুম্মা রায্বযিনি বিহ।)
অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার নিকট তোমার ইলমের সাথে মঙ্গল প্রার্থনা করছি। তোমার কুদরতের সাথে শক্তি প্রার্থনা করছি এবং তোমার বিরাট অনুগ্রহ থেকে ভিক্ষা যাচনা করছি। কেননা, তুমি শক্তি রাখ, আমি শক্তি রাখি না। তুমি জান, আমি জানি না এবং তুমি অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা। হে আল্লাহ! যদি তুমি এই ( ) কাজ আমার জন্য আমার দ্বীন, দুনিয়া, জীবন এবং কাজের বিলম্বিত ও অবিলম্বিত পরিণামে ভালো জান, তাহলে তা আমার জন্য নির্ধারিত ও সহজ করে দাও। তাতে আমার জন্য বরকত দান কর। আর যদি তুমি এই কাজ আমার জন্য আমার দীন, দুনিয়া, জীবন এবং কাজের বিলম্বিত ও অবিলম্বিত পরিণামে মন্দ জান, তাহলে তা আমার নিকট থেকে ফিরিয়ে নাও এবং আমাকে ওর নিকট থেকে সরিয়ে দাও। আর যেখানেই হোক মঙ্গল আমার জন্য বাস্তবায়িত কর, অতঃপর তাতে আমার মনকে পরিতুষ্ট করে দাও।
প্রথমে (هَذَا الأَمْرَ) ‘হা-জাল আমরা’ এর স্থলে বা পরে কাজের নাম নিতে হবে অথবা মনে মনে সেই বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করতে হবে।
সে ব্যক্তি কর্মে কোনোদিন লাঞ্ছিত হয় না, যে আল্লাহর নিকট তাতে মঙ্গল প্রার্থনা করে, অভিজ্ঞদের নিকট পরামর্শ গ্রহণ করে, ভালো-মন্দ বিচার করার পর কর্ম করে। (বুখারি ৭/ ১৬২, আবু দাউদ ২/৮৯, তিরমিজি ২/৩৫৫, আহমাদ ৩/৩৪৪)
ইস্তিখারার সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি
অনেক সময় তো দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রয়োজন হয়। উপরোক্ত পদ্ধতিতে ইস্তিখারা করার সময় ও সুযোগ পাওয়া যায় না। এমন পরিস্থিতিতে একটি সংক্ষিপ্ত দোয়া নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষা দিয়েছেন। দোয়াটি হল-
اللّهُمّ خِرْ لِي وَاخْتَرْ لِي (উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা খিরলি ওয়াখতারলি।)
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে কল্যাণ দান করুন এবং আমার জন্য আপনিই কোন বিষয়টি অবলম্বন করা উচিত তা নির্বাচন করে দিন। (জামে তিরমিজি: ৩৫১৬)
এমন আরেকটি দোয়া হচ্ছে-
اللّهُمّ أَلْهِمْنِي رُشْدِي وَأَعِذْنِي مِنْ شَرِّ نَفْسِي (উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আলহিমনি রুশদি ওয়াআয়িজনি মিন শাররি নাফসি।)
অর্থ: হে আল্লাহ! আমার অন্তরে সঠিক পথের ইলহাম করুন এবং নফসের মন্দত্ব থেকে আমাকে রক্ষা করুন। (জামে তিরমিজি: ৩৪৮৩)