ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মুশুলী চৌরাস্তা থেকে সিংরইল বাজার পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য ৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১ কিলোমিটার ইট বিছানো অংশে ২৫ বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া না লাগায় মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। ফলে সড়কটিতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এ পথে চলাচলকারীরা হেঁটে কিংবা বিকল্প পথে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন।
ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত নান্দাইলের পূর্বে মুশুলী চৌরাস্তা থেকে সিংরইল বাজার পর্যন্ত আঞ্চলিক সড়কটি এলাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ অঞ্চলের প্রায় ২০ গ্রামের মানুষ নান্দাইল ও কিশোরগঞ্জ জেলা সদরে সহজে যাতায়াতে সড়কটি ব্যবহার করেন। গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ায় ১৯৯৫ সালে সড়কের ৩ কিলোমিটার অংশে ইট বিছানো হয়।
এর পশ্চিমে সিংরইল বাজার থেকে জামতলা বাজার হয়ে নান্দাইল উপজেলা সদর পর্যন্ত সড়কটি কয়েক বছর ধরে পাকা। আর ছয় বছর আগে ইট বিছানো অংশের মধ্যে সিংরইল বাজার থেকে কামালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত ২ কিলোমিটারের ইট তুলে কার্পেটিং করে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
তবে মুশুলী বাসস্ট্যান্ড থেকে আগ মুশুলী ও পাছ মুশুলী গ্রামের ভেতরের ১ কিলোমিটার কার্পেটিং করা হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল মিয়ার ভাষ্য, এতদিন দুর্ভোগের শিকার হয়ে সড়কটি দিয়ে যানবাহন চলাচল করেছে। তবে প্রায় দুই মাস ধরে সব
ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। পথচারী সিংরইল গ্রামের রুমা আক্তার জানান, তিনি মুশুলী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে বাসে চড়ে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরে যাবেন। তবে যানবাহন না থাকায় হেঁটে বাসস্ট্যান্ডে যাচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, কোথাও ইট উঠে গিয়ে বা চুরি হয়ে যাওয়ায় সড়কে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। স্থানীয় অনেকে মাঝেমধ্যে গর্তে রাবিশ ফেলে চলাচলের উপযোগী রাখার চেষ্টা করেছেন। তবে তা হয়েছে ক্ষণস্থায়ী। এতদিন দুর্ভোগ নিয়ে হেলেদুলে ও তীব্র ঝাঁকুনি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচলও করেছে। তবে দুই মাস ধরে বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। এতে দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। সড়কের ইট বিছানো ১ কিলোমিটার হেঁটে চলাচল করছে মানুষ।
এলাকায় সরেজমিন গেলে স্থানীয় অনেকে বলেন, সড়কটি দিয়ে আশপাশের তিনটি উপজেলার ২০টি গ্রামের মানুষ যাতায়াত করেন। স্থানীয় মুশুলী মহাবিদ্যালয়, উচ্চবিদ্যালয়, বালিকা বিদ্যালয়সহ কয়েকটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন এ পথে যাতায়াত করে। তবে বেহাল সড়কের কারণে তাদের দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে।
কোনাডাঙ্গর গ্রামের হাদিসা আক্তার জানান, তিনি বাস থেকে নেমে বাড়িতে যাচ্ছেন। এ সময় হেঁটে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘হেঁটে যাই কি রঙ্গে, এ পথে হাঁটা ছাড়া অন্য কোনোভাবে যাবার উপায় আছে?’ কৃষক বকুল মিয়ার ভাষ্য, ‘এ সড়কের লাইগ্যা জিনিসপত্র বাজারে নিয়া বেচতাম পারি না।’
মুশুলী ইউপি চেয়ারম্যান ইফতেখার উদ্দিন ভূঁইয়া বিপ্লব বলেন, সড়কটির ২ কিলোমিটার থেকে ইট তুলে এলজিইডি পাকা করেছে। তাই বাকি ১ কিলোমিটারও পাকা করার দায়িত্ব তাদেরই। কয়েকবারই তিনি শুনেছেন পাকাকরণের জন্য টেন্ডার হবে। কিন্তু শেষে কেন হয়নি, তা তিনি জানেন না। সড়কটির জন্য মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী তৌহিদ আহমেদ বলেন, এলজিইডি ইট বিছানো সড়ক পাকাকরণ করে না। এটি স্থানীয় প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের কাজ। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আহসান উল্লাহ’র ভাষ্য, তারা বছরে দু-এক কিলোমিটার মাটির রাস্তায় ইট বিছানোর কাজ করেন। কিন্তু পুরোনো ইটের রাস্তা পাকাকরণ করেন না। এটি এলজিইডি করে।